চিকিৎসা শেষে হাটহাজারী মাদরাসায় পৌঁছেছেন আল্লামা শফী
ইসলাম
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির ও দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদরাসার মহাপরিচালক আল্লামা শাহ আহমদ শফী চিকিৎসা শেষে ঢাকার আজগর আলী হাসপাতাল থেকে হাটহাজারী মাদরাসায় ফিরেছেন।
রোববার (২৬ এপ্রিল) দুপুর ১টা ৪০মিনিটে হেলিকপ্টারযোগে তিনি হাটহাজারী মাদরাসায় পৌঁছান। এসময় মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষকরা তাকে স্বাগত জানান।
বিজ্ঞাপন
হাটহাজারীর সহকারী শিক্ষা পরিচালক ও হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের প্রচার সম্পাদক মাওলানা আনাস মাদানী বার্তা২৪.কমকে জানান, হেফাজত আমির বর্তমানে সুস্থ আছেন, তিনি এখন মাদরাসায় অবস্থান করছেন।
হাটহাজরী মাদরাসাসূত্রে জানা গেছে, আল্লামা আহমদ শফীর শারীরিক অবস্থার সন্তোষজনক উন্নতি হয়েছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারগণ জানিয়েছেন, তিনি সম্পূর্ণ শঙ্কামুক্ত। বর্তমানে তিনি স্বাভাবিক আছেন।
বিজ্ঞাপন
প্রসঙ্গত, ১১ এপ্রিল শনিবার বার্ধক্যজনিত শারীরিক দুর্বলতাসহ নানা সমস্যা নিয়ে আল্লামা আহমদ শফীকে চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরে ১৪ এপ্রিল আরও উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকার আজগর আলী হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানেই তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন।
১০৩ বছর বয়সী আল্লামা আহমদ শফী এর আগেও এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ বার্ধক্যজনিত দুর্বলতার পাশাপাশি ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, শ্বাসকষ্ট এবং হজমজনিত সমস্যায় ভুগছেন। বার্ধক্যের কারণে এসব রোগ মাঝেমধ্যে অনিয়ন্ত্রিত হয়ে যায়।
আল্লামা শফী হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও আমির। একইসঙ্গে তিনি কওমি মাদরাসার সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা আল হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশ চেয়ারম্যান। তিনি শায়খুল আরব ওয়াল আজম সাইয়েদ হুসাইন আহমদ মাদানি (রহ.)-এর খলিফা।
ইথিওপিয়ার টাইগ্রে অঞ্চলের ইসলাম বিষয়ক সুপ্রিম কাউন্সিল আক্সাম শহরের স্কুলে হিজাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে।
টাইগ্রের ইসলাম বিষয়ক সুপ্রিম কাউন্সিলের দাবি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হিজাবের ওপর সাম্প্রতিক সময়ে দেওয়া নিষেধাজ্ঞা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
মুসলিম কাউন্সিল এমন নিষেধাজ্ঞার তীব্র নিন্দা জানিয়ে ঘোষণা করেছে, উদ্ভুত এই সমস্যার সমাধান না হলে, আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সম্প্রতি টাইগ্রের প্রশাসনিক রাজধানী মেকেলের একাডেমিক কাউন্সিল এক বিবৃতিতে মুসলিম শিক্ষার্থীদের পোষাক কোডের বিষয়ে ফেডারেল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশিকা মেনে চলার আহ্বান জানায়। ওই নির্দেশিকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হিজাব পরিধানে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
এরই প্রেক্ষিতে ইসলাম বিষয়ক সুপ্রিম কাউন্সিল বিবৃতি দিয়ে জানায়, এমন সিদ্ধান্ত মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার পরিপন্থী। সেই সঙ্গে তা আঞ্চলিক আইনকে অসম্মানের শামিল। কারণ, হিজাব নিষিদ্ধ করা নাগরিকদের মৌলিক অধিকার হরণ। আমাদের সংবিধানে বলা হয়েছে, সরকারি সব অফিস আঞ্চলিক আইন ও বিধি-বিধানকে লঙ্ঘন করবে না।
টাইগ্রের ইসলামিক অ্যাফেয়ার্স কাউন্সিলের সেক্রেটারি হাজি মোহাম্মদ কাহসাই বলেছেন, হিজাবে বিধি-নিষেধ অন্যায়। এর ফলে শিক্ষার্থীদের মাঝে নেতিবাচক প্রভাব দেখা দেবে।
তিনি বলেন, হিজাব পরিধান করে স্কুলে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকায় অনেক শিক্ষার্থী জাতীয় পরীক্ষায় নিবন্ধন করেনি।
হাজি মোহাম্মদ কাহসাই আরও বলেন, টাইগ্রের বর্তমান রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে ধর্মীয় সংকট কাম্য নয়। এটা এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতাকে নষ্ট করবে।
ইথিওপিয়ার জনসংখ্যার প্রায় ৩৪ শতাংশ মুসলমান। অর্থোডক্স খ্রিস্টান ধর্মের পর ইসলাম দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম।
ইসলামের ইতিহাসে ইথিওপিয়া বিশেষ জায়গা দখল করে আছে। বেশ কয়েক বছর ধরে দেশটির মুসলমানরা সামাজিক-রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক প্রান্তিকতার শিকার। সেই সঙ্গে তাদের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক অধিকার নিয়ে চলে নানা টানাপোড়েন।
ইথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবা থেকে ৭৯০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ছোট্ট শহর নেগাস। দেশটির উত্তর সীমান্তে এর অবস্থান। ছোট্ট এই শহর মুসলিম ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা মক্কার নিপীড়িত মুসলিমরা সর্বপ্রথম এই শহরেই আশ্রয় নিয়েছিল বলে মনে করা হয়। মদিনা নগরীতে ইসলামের প্রসার ঘটার আগেই নেগাসে পৌঁছেছিল ইসলামের বাণী।
মুসলিম বিশ্বের নোবেলখ্যাত ‘কিং ফয়সাল প্রাইজ’ (কেএফপি) বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। এ বছর চিকিৎসা, বিজ্ঞান ও ইসলাম শিক্ষা ক্যাটাগরিতে চারজন পুরস্কার লাভ করেছেন।
বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) রাতে সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে কিং ফয়সাল ফাউন্ডেশনের কার্যালয়ে প্রিন্স তুর্কি আল ফয়সাল পুরস্কার বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেন।
এবার সৌদি আরবের দুই অধ্যাপক, সেলুলার থেরাপিতে সাফল্য অর্জনকারী একজন কানাডিয়ান বিজ্ঞানী এবং কার্বন ন্যানোটিউব নিয়ে কাজ করা এক জাপানি বিজ্ঞানী আরব বিশ্বের সবচেয়ে লোভনীয় এই পুরস্কার জিতেছেন।
বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করে, বাদশাহ ফয়সাল পুরস্কার কমিটির মহাসচিব ড. আবদুল আজিজ আল সেবায়েল বলেন, ‘নানা পর্যালোচনা ও সূক্ষ্ম আলোচনার পর বাদশাহ ফয়সাল পুরস্কার ২০২৫-এর নির্বাচন কমিটি বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ক্যাটাগরিগুলো হলো- ইসলামিক স্টাডিজ, চিকিৎসা এবং বিজ্ঞান। আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে যথাযথ মানদণ্ড পূরণ না হওয়ায় এবার পুরস্কার স্থগিত রাখা হয়েছে। আর পঞ্চম ক্যাটাগরি ইসলামের সেবার জন্য পুরস্কার বিজয়ীর নাম চলতি মাসের শেষে ঘোষণা করা হবে।
ইসলামিক স্টাডিজে ‘আরব উপদ্বীপে প্রত্নতত্ত্ব অধ্যয়ন’ বিষয়ে যৌথভাবে পুরস্কার জিতেছেন অধ্যাপক সাদ আবদুল আজিজ আল রাশিদ এবং অধ্যাপক সাইদ ফয়েজ আল রাশিদ। উভয়ই সৌদি নাগরিক এবং কিং সৌদ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক।
চিকিৎসায় পুরস্কার পেয়েছেন (সেলুলার থেরাপি) কানাডার প্রফেসর ডাঃ মিশেল স্যাডেলাইন। ডাঃ স্যাডেলাইন কোষের কার্যকারিতা নিয়ে অভাবনীয় গবেষণা করে এই পুরস্কার জেতেন।
জাপানের মেইজো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুমিও ইজিমাকে বিজ্ঞান বিভাগে পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে। তিনি ইলেক্ট্রন মাইক্রোস্কোপি ব্যবহার করে কার্বন ন্যানোটিউব আবিষ্কারের জন্য পুরষ্কার লাভ করেন।
বাদশাহ ফয়সাল পুরস্কার কমিটি ২০২৫ সালের বিজয়ীদের প্রশংসার পাশাপাশি নির্বাচন কমিটির সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। এবার নির্বাচন কমিটিতে ১৬টি দেশের বিশেষজ্ঞ ও পণ্ডিত অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।
১৯৭৭ সালে সৌদি আরবের বাদশাহ ফয়সাল বিন আবদুল আজিজ আলে সৌদের নামে আন্তর্জাতিক মানের একটি পুরস্কার প্রদানের সিদ্ধান্ত হয়। ১৯৭৯ সালে প্রথমবারের মতো ইসলামের সেবা, ইসলামিক স্টাডিজ এবং আরবি ভাষা ও সাহিত্যে পুরস্কার দেওয়া হয়। ১৯৮১ সালে চিকিৎসা ও বিজ্ঞান বিভাগ চালু করা হলেও প্রথমবারের মতো চিকিৎসা বিভাগে পুরস্কার ১৯৮২ সালে এবং দুই বছর পর ১৯৮৪ বিজ্ঞান বিভাগে পুরস্কার দেওয়া হয়।
১৯৭৯ সাল থেকে বিভিন্ন বিভাগে ৫০টি দেশের প্রায় ৩০০ জন এই পুরস্কার লাভ করেছেন। পুরস্কারপ্রাপ্তদের মধ্যে ২১ জন নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন।
প্রত্যেক পুরস্কার বিজয়ীকে ২ লাখ ডলার, ২০০ গ্রাম ওজনের একটি ২৪ ক্যারেট স্বর্ণপদক এবং সম্মাননা সনদ দেওয়া হয়। যেখানে পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তির নাম এবং তার অবদানের সারসংক্ষেপ উল্লেখ থাকে।
হজ এজেন্সি প্রতি ন্যূনতম হজযাত্রী নির্ধারণ করে থাকে সৌদি আরবের হজ ও উমরা মন্ত্রণালয়। হজযাত্রীর এই কোটা নির্ধারণে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ন্যূনতম কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই বলে জানিয়েছেন ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন।
বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) বিকালে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ২০২৫ সনের হজ ব্যবস্থাপনার সর্বশেষ অগ্রগতি বিষয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, হজ এজেন্সির মাধ্যমে হজযাত্রী প্রেরণের ক্ষেত্রে সৌদি হজ ও উমরা মন্ত্রণালয় হতে প্রতিবছর হজযাত্রীর ন্যূনতম সংখ্যা বা কোটা নির্ধারণ করে থাকে। গতবছরের ১৮ জুন সৌদি সরকার ২০২৫ সালের হজের হজযাত্রীর কোটা নির্ধারণসহ হজ কার্যক্রমের যে রোডম্যাপ ঘোষণা করে সে সময় বাংলাদেশি হজ এজেন্সি প্রতি সর্বনিম্ন হজযাত্রীর কোটা দুই হাজার জন হবে বলে জানানো হয়। তবে গতবছরের ৬ অক্টোবর সৌদি হজ ও উমরা মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা পরিপ্রেক্ষিতে এ বছর হজ এজেন্সি প্রতি সর্বনিম্ন হজযাত্রীর সংখ্যা দুই হাজার জন থেকে কমিয়ে এক হাজার নির্ধারণ করা হয়েছে।
ধর্ম উপদেষ্টা আরও বলেন, হজ ব্যবস্থাপনার দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রণালয় হিসেবে এদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা যাতে সুষ্ঠু, সুন্দর ও সাবলীলভাবে হজপালন করতে পারেন সে বিষয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয় সর্বদা তৎপর রয়েছে। সৌদি সরকারের রোডম্যাপ ও বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যেই আমরা সব কার্যক্রম সম্পন্ন করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
হজ ব্যবস্থাপনা একটি দ্বি-রাষ্ট্রীয় কার্যক্রম উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, হজযাত্রী প্রেরণকারী সংশ্লিষ্ট দেশ এবং সৌদি সরকারের যৌথ ব্যবস্থাপনায় হজের যাবতীয় কার্যক্রম সম্পাদিত হয়। একটি ধারাবাহিক কর্মপন্থা অনুসরণ করেই হজের সার্বিক কর্মকাণ্ড সম্পন্ন করতে হয়।
হজ ব্যবস্থাপনাকে একটি সময়াবদ্ধ কার্যক্রম অভিহিত করে ড. খালিদ বলেন, সৌদি সরকার ঘোষিত সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ও সময় অনুসরণ করেই হজের প্রতিটি কাজ শেষ করতে হয়। এক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া বা নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ না করার কোনো অবকাশ নেই।
সৌদি হজ ও উমরা মন্ত্রীর একটি আধা-সরকারি পত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ২০২৫ সনের হজে বাংলাদেশের হজযাত্রীদের জন্য সেবাদানকারী কোম্পানী নির্বাচন, তাঁবুর এলাকা রিজার্ভ, মক্কা ও মদিনায় হজযাত্রীদের জন্য বাড়ি বা হোটেল ভাড়া, ক্যাটারিং কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি সম্পাদনের মত গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো এখনও শুরু করা হয়নি। এসব কার্যক্রম সম্পাদনের সর্বশেষ তারিখ ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ নির্ধারিত রয়েছে। তিনি হজ এজেন্সি মালিক বা পরিচালকদেরকেও দুয়েকদিনের মধ্যেই সৌদি সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক লিড এজেন্সি গঠনসহ যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার অনুরোধ জানান।
এ সময় ধর্ম সচিব একেএম আফতাব হোসেন প্রামানিক, হজ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. মতিউল ইসলাম, সংস্থা অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. সাইফুল ইসলামসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকতারা উপস্থিত ছিলেন।
বান্দার প্রতি আল্লাহতায়ালার বিশেষ অনুগ্রহ হলো, তিনি মানুষকে এমন কিছু ইবাদত দান করেছেন, যা দ্বারা বান্দা তার অন্তরের প্রশান্তি এবং দুনিয়া-আখেরাতের কল্যাণ ও বরকত লাভ করে। উমরা এমনই এক ইবাদত।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, এক উমরা অন্য উমরা পর্যন্ত মধ্যবর্তী সব কিছুর কাফফারা। আর মাবরূর হজের একমাত্র প্রতিদান হলো জান্নাত।-সহিহ বোখারি : ১৭২৩
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) বর্ণনা করেন, হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহর পথের মুজাহিদ এবং হজ ও উমরাকারী হলো আল্লাহর প্রতিনিধি। তারা আল্লাহর ডাকে সাড়া দেন আর আল্লাহও তাদের প্রার্থনা কবুল করেন।-সুনানে ইবনে মাজাহ : ২৮৯৩
বেসরকারি হজ এজেন্সিগুলোর তথ্যমতে, বছরে বাংলাদেশ থেকে ৫ লাখের বেশি মানুষ উমরা পালন করেন। এই বিপুল সংখ্যক মানুষের মধ্যে উমরার প্রভাব ধরে রাখার জন্য কিছু পরিকল্পনা দরকার। এ লক্ষে উমরার কাফেলা যারা পরিচালনা করেন, তারা নিচের বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে পারেন-
১. মক্কা-মদিনাতে পাঁয়ে হাঁটা পরিমাণ দূরত্বে কিছু দর্শনীয় স্থান রয়েছে। অনেক কাফেলা এগুলোতে গুরুত্ব দেন না। তারা শুধু বাসে করে দূরের স্থানগুলোতে জিয়ারা (পরিদর্শন) করান। অথচ কাছেই অনেক স্থান বাদ পড়ে যায়। অনেকে না চেনার কারণে একাকীও যেতে পারে না। এসব জায়গায় জিয়ারা করানো যেতে পারে। খরচও লাগবে না, সবাই খুশিও হবে।
২. মাঝে মাঝে উমরাপালনকারীদের নিয়ে আমলি মুজাকারা করলে ভালো হয়।
৩. সম্ভব হলে মক্কা-মদিনা যাওয়ার আগে বা সেখানে পৌঁছে হারামাইনের আদাব ও করণীয়-বর্জনীয়গুলো আলোচনা করা যেতে পারে। অনেকেই এ ব্যাপারে উদাসীন থাকেন।
৪. কাফেলার মধ্যে নারী-পুরুষ সবাই থাকে। তাদের মাঝে যেন পর্দার কোনো খেলাফ না হয়, এ ব্যাপারে সতর্ক করা জরুরি।
৫. সফরের শুরুতে তাদের সঙ্গে সবর, উত্তম আখলাক, ঝগড়াঝাঁটি পরিহার ইত্যাদি বিষয় মুজাকারা করে নেওয়া। না হলে দেখা যায়, হারামাইনের মতো জায়গায় বসে অনেকে সবর দেখাতে পারেন না, খারাপ আচরণ করে বসেন, ঝগড়া করেন।
এক কথায়, উমরা পালনকারীরা এজেন্সি কর্তৃপক্ষ, গ্রুপ লিডার ও মুয়াল্লিমের কাছ থেকে শুধু ট্রান্সপোর্ট, হোটেল আর খাবারের সুবিধা পেলেই চলবে না, বরং ঈমান-আমলের একটা খোরাক যেন পান; সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এতে তাদের মনে ইতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি হবে, মন আমলের দিকে ঝুঁকবে।
সেই সঙ্গে উমরা পালনকারীকে খেয়াল রাখতে হবে, এক মুহূর্ত সময় যেন নষ্ট না হয়, বেশি বেশি আমল ও ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল থাকা।
১. যেকোনো ছোট-বড় কাজ বিসমিল্লাহ বলে আল্লাহকে খুশি করার উদ্দেশ্যে শুরু করা। নিয়ত যদি ভালো থাকে এবং ভালো কাজ করার প্রবল ইচ্ছা থাকে, পরে যদি কাজটি সম্পন্ন নাও হয়, কিন্তু আল্লাহ সেই কাজের সওয়াব লিখে দিবেন আমলনামায়।
২. উমরার সফরে সর্বাবস্থায় ধৈর্যধারণ করতে হবে, কম কথা বলতে হবে। এই অভ্যাস অবশ্য সবসময়ই উপকারী।
৩. আপনাকে যদি রুম শেয়ার করে থাকতে হয়, তাহলে রুমের অন্যদের সঙ্গে সৌজন্যমূলক আচরণ করবেন। সম্ভব হলে তাদের কাজে সহযোগিতা করবেন, কোনো কিছু খেলে তাদের সঙ্গে নিয়ে খাবেন। একসঙ্গে নামাজে যাওয়ার চেষ্টা করবেন, দোয়া-দরুদ ও আমলের কথা আলোচনা করবেন। কারো কোনো ভুল দেখলে শুদ্ধটা বলে দেবেন সওয়াবের নিয়তে।
৪. মক্কা-মদিনার দৃশ্য দেখে, নতুন পরিবেশে নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচয় হওয়ার জন্য ব্যস্ত হবেন না। যতটা সম্ভব আমলে মশগুল থাকবেন।
৫. মসজিদে হারাম ও মসজিদে নববিতে অনেক সময় টিস্যু, খেজুরের বিচি, প্লাস্টিকের গ্লাস পরে থাকতে দেখবেন। এগুলো একসঙ্গে করে ফেলে দেবেন। এর মানে আপনি আল্লাহর ঘর পরিষ্কার-পরিছন্ন করার সুযোগ পেলেন, এমন সৌভাগ্য কয়জনের হয়?
৬. মক্কা-মদিনায় খেজুর, রুটি, জমজম, চকলেট, লাবাং ও দই ইত্যাদি হাদিয়া পাবেন। আপনার পাশেরজন যদি না পায়, তাহলে তাকে কিছু হাদিয়া দেবেন। সম্ভব হলে, নিজের কাছে সবসময় কিছু খাবার রাখবেন- যেন প্রয়োজনের সময় কাউকে দিতে পারেন।
৭. কেউ যদি আপনাকে কথা দিয়ে কষ্ট দেয়, চুপ থাকবেন। কিছু বলবেন না, মাফ করে দেবেন- আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য।
৮. নামাজের সময় কাতারে যদি কেউ পাশে দাঁড়াতে চায়, তাকে সুযোগ করে দেবেন।
৯. মক্কা-মদিনায় আওয়াজ করে কথা না বলাই ভালো। কথা আস্তে ও সংক্ষেপে বলবেন।
১০. উমরার সফরে মার্কেটে কম যাওয়ার চেষ্টা করবেন। এটা এমন একটা নেশা যে, আপনার দৈনন্দিন আমল সবকিছু নষ্ট করে দেবে। হ্যাঁ, প্রয়োজনীয় হাদিয়া কিনবেন, কিন্তু মার্কেটিংকে নেশা বানাবেন না।
১১. অবশ্যই প্রচুর পরিমাণে পানি পান করবেন। জমজমের পানি হারাম শরিফে পান করবেন, ছোট বোতলে করে নিয়ে আসবেন। প্রাণভরে জমজম পান করার চেষ্টা করবেন।
১২. মক্কা-মদিনায় প্রতি ওয়াক্ত নামাজের পর জানাজার নামাজ হয়। তাই জানাজার নামাজের নিয়ম জেনে যাবেন।
১৩. যদি আপনার কোনো সঙ্গী অসুস্থ হয়ে যায়, তাহলে খুব দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাবেন।
১৪. উমরার সফরে সবসময় আল্লাহর কাছে বলতে হবে, আল্লাহ! আমার আমলগুলো সহজ করে দিন, আমলগুলো কবুল করুন।