আমরা অনেক সমস্যার সম্মুখীন, সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। আমাদেরকে আত্মবিশ্বাস ও দৃঢ়তার সঙ্গে সম-সাময়িক ও আগামীর চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে হবে। আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের জন্য গৌরবের, আমাদের জন্য আলোকবর্তিকা। নৈতিকতা ও মূল্যবোধ প্রসারে ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভূমিকা অনস্বীকার্য।
সোমবার (২১ অক্টোবর) সকালে চট্টগ্রামের কুমিড়াতে আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় মিলনায়তনে দুই দিনব্যাপী ‘ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় ও সম-সাময়িক চ্যালেঞ্জ’ বিষয়ক আন্তর্জাতিক কনফারেন্সের উদ্বোধনী বক্তৃতায় ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন এসব কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
মিশরের কায়রোর ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় লীগের সহযোগিতায় এ কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অত্যন্ত মেধাবী। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের গৌরবময় পাণ্ডিত্য ও পেশাগত দক্ষতা রয়েছে এবং তারা শুধু দেশীয় নয়, বিদেশি প্রসিদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে ডিগ্রী অর্জন করেছেন। আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জন্যও গৌরব বয়ে এনেছে।
ধর্ম উপদেষ্টা আরও বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনিময় প্রোগ্রাম রয়েছে। এখান থেকে পড়াশোনা করে তুর্কি, সৌদি আরব ও মালয়েশিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে উচ্চতর ডিগ্রী অর্জনের সুযোগ আছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর শিক্ষা অর্জনের মনোরম পরিবেশ বিরাজ করছে।
অনুষ্ঠানে আগত ইসলামি স্কলারদের উদ্দেশে ড. খালিদ বলেন, আমাদের বসে থাকলে চলবে না। অপার সম্ভাবনা আমাদেরকে হাতছানি দিচ্ছে। এ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যেসব শিক্ষার্থীরা বের হবে, তারাই আগামীদিনে পৃথিবীর নেতৃত্ব দেবে। এ কারণে আমাদেরকে ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েট বের করতে হবে। জনগণের যে আকাঙ্ক্ষা ও চাহিদা, সেগুলো পূরণের জন্য ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের প্রয়োজন। আমরা এখানে শুধু সমস্যা নিয়ে আলোচনা করব না, সমাধানের পথও খুঁজে বের করব।
ড. খালিদ আরও বলেন, শিক্ষা ও সমাজের ইসলামিকরণে ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা রয়েছে এবং ইতোমধ্যে এসব ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। এই কনফারেন্স থেকে প্রাপ্ত গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশমালার মাধ্যমে আগামীর পথ সুগম হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সৌদি আরবের আন্তর্জাতিক ইসলামিক রিলিফ অর্গানাইজেশনের মহাসচিব অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ বিন আব্দুল আজিজ আল-মুসলেহ।
তিনি বলেন, আমরা অনেক স্বপ্ন নিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। এই বিশ্ববিদ্যালয়টি একটি শ্রেষ্ঠতম বিদ্যাপীঠ হবে এবং এ অঞ্চলের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে। সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন আজ আমরা কিছুটা দেখতে পারছি। এখন আমাদের সামনে অনেক অনেক পথ বাকি। তিনি বক্তব্যে ইসলামের গৌরব ও ঐতিহ্য তুলে ধরেন এবং কোরআন ও সুন্নাহ যথাযথভাবে অনুসরণের অনুরোধ জানান।
আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় ভিসি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলী আযাদীর সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন এ বিশ্ববিদ্যালয় ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ড. এজেডএম ওবায়দুল্লাহ ও কায়রোর ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় লীগের অধ্যাপক ড. সামী মোহাম্মদ রাবী এল-শেরিফ।
এ ছাড়াও এমিরেটাস অধ্যাপক ও ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. একেএম আজহারুল ইসলাম, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর ড. মোহাম্মদ শামসুল আলম, জর্ডান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. নাথিয়ের মুফলেহ মুহাম্মদ ওবায়দাৎ ও অধ্যাপক ড. মো. নাজমুল হক নদভি প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘নামাজ কায়েম করা মানে রুকু, সিজদা ও কোরআন তেলাওয়াত পরিপূর্ণ করা এবং যথাযথ মনোযোগ ও বিনয়ের সঙ্গে নামাজ আদায় করা।’ -তাফসিরে ইবনে কাসির : ১/১২২
নামাজ এবং তৎসংশ্লিষ্ট কাজগুলো উত্তমরূপে আদায় করাকে ‘নামাজ কায়েম’ বলা হয়। এ ছাড়া নামাজ কায়েমের আরও দুটি দিক রয়েছে-
১. নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করা। নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বিষয়ে বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন। এমনকি যারা জামাতে শরিক হয় না নবীজী (সা.) তাদের ঘরবাড়ী পর্যন্ত জ্বালিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন! -সুনানে আবু দাউদ : ৫৪৮
২. নামাজের কাতার ঠিক রাখা। নবী কারিম (সা.) বলেন, ‘তোমরা কাতার সোজা করো, কেননা কাতার সোজা করা নামাজ কায়েমেরই অংশ।’ -সহিহ বোখারি : ৭২৩
হাদিসে নামাজের কাতার সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা এসেছে। এসেছে অনেক উৎসাহ ও সতর্কবাণী। হাদিসে নবী কারিম (সা.) বলেন, ‘তোমরা অবশ্যই অবশ্যই কাতার সোজা করো, অন্যথায় আল্লাহতায়ালা তোমাদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করে দেবেন।’ -সহিহ বোখারি : ৭১৭
হজরত আবু মাসউদ (রা.) বলেন, ‘নামাজের সময় নবী কারিম (সা.) আমাদের কাঁধে হাত দিয়ে কাতার সোজা করতেন আর বলতেন, সোজা হও, এলোমেলো থেকো না; তাহলে তোমাদের অন্তরও বক্র ও এলোমেলো হয়ে যাবে...।’ -সহিহ মুসলিম : ৪৩২
কাতার সোজা করার পদ্ধতি পরস্পর কাঁধ ও পায়ের গোড়ালি সোজা করে কাতার সোজা করতে হয়। হজরত আবু উসমান আন-নাহদি (রহ.) বলেন, ‘আমি কাতার সম্পর্কে হজরত ওমরের চেয়ে অধিক যত্নশীল আর কাউকে দেখিনি। নামাজ আরম্ভের আগ মুহূর্তে সবার কাঁধ ও পায়ের দিকে তাকাতেন এবং (সামনের কাতার ফাঁকা থাকলে) লোক পাঠিয়ে পেছনের মুসল্লিদের সামনের কাতারে নিয়ে দাঁড় করাতেন।’ -মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা : ৩৫৫৭
গায়ে গায়ে লেগে দাঁড়ানো আমাদের অবস্থা হলো, কারো গায়ের সঙ্গে লেগে দাঁড়াতে সংকোচ হয়। কারো অবস্থা তো আরো করুণ! কেউ তার গায়ের সঙ্গে লেগে দাঁড়াতে চাইলে সে সরে যায়!
অনেক মসজিদের ফ্লোরে বা কার্পেটে ঘর ঘর দেওয়া থাকে। অনেকে মনে করে, তার ঘরে অন্য কেউ ঢুকতে পারবে না! এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। কারণ, নবী কারিম (সা.) বলেন, শোন! তোমরা ফেরেশতাদের মতো কাতারবন্দি হও। আমরা বললাম, তারা কীভাবে কাতারবন্দি হয়? নবীজী বললেন, তারা আগের কাতার পূর্ণ করে এবং গায়ে গায়ে লেগে দাঁড়ায়। -সুনানে আবু দাউদ : ৬৬১
নবী কারিম (সা.) বলেন, ‘তোমরা (চেপে চেপে দাঁড়িয়ে) কাতার মজবুত করো, কাতার কাছাকাছি করো এবং কাঁধ বরাবর করো। আল্লাহর কসম! আমি শয়তানকে কালো ছোট ছাগল ছানার মতো কাতারের মাঝে ঢুকতে দেখি।’ -সুনানে আবু দাউদ : ৬৬৭
কাতার বিষয়ে নরম ও বিনয়ী হওয়া নবী কারিম (সা.) এ বিষয়ে বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, হজরত (সা.) বলেন, ‘কাতার ঠিক করো, কাঁধ সোজা করো, খালি জায়গা পূর্ণ করো, নরম হও।’ -সুনানে আবু দাউদ : ৬৬৬
তোমাদের মাঝে সর্বোত্তম সে, নামাজে যার কাঁধ সবচেয়ে বেশি নরম। অর্থাৎ কাতার সোজা করা বা খালি জায়গা পূরণ করার জন্য কেউ আগ-পর হতে বা ডানে বামে মিলতে বললে বিনয়ের সঙ্গে তা গ্রহণ করে। -মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক : ২৪৮০
কাতারের শৃঙ্খলা বজায় রাখা যেকোনো কাজ সুশৃঙ্খলভাবে করা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। নামাজের কাতারে দাঁড়ানো অবস্থায় এর গুরুত্ব আরো বেড়ে যায়। এ ক্ষেত্রে শৃঙ্খলার কয়েকটি দিক রয়েছে। সেগুলো হলো-
শ্রেণিবিন্যাস ঠিক রাখা প্রাপ্তবয়স্কদের সামনের কাতারে দাঁড়ানো এবং ছোটদের পেছনে দাঁড় করানো। হজরত ইবরাহিম নাখায়ি (রহ.) বলেন, হজরত উমর (রা.) কোনো বাচ্চাকে (সামনের) কাতারে দেখলে পেছনে পাঠিয়ে দিতেন। -মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা : ৪১৯২
দাঁড়ানোর ধারাবাহিকতা ঠিক রাখা ইমামের বরাবর পেছন থেকে দাঁড়ানো আরম্ভ করা। তারপর একজন ডানে একজন বাঁয়ে। এভাবে কাতারের শেষ পর্যন্ত। -হাশিয়াতুত তাহতাবি : ৩০৫
এ বিষয়েও আমাদের অবহেলা হয়। বিশেষত বড় মসজিদগুলোর পেছনের কাতারে মাঝখান থেকে দাঁড়ানো আরম্ভ করে ডান দিকেই সবাই দাঁড়ায়, বাম দিকের খবর নেই। অথবা মাঝখানেরও খবর থাকে না, যেকোনো একপাশে কিছু মানুষ দাঁড়িয়ে যায়! যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
সামনের কাতার আগে পূর্ণ করা নবী কারিম (সা.) বলেন, ‘প্রথমে সামনের কাতার পূর্ণ করো, অতঃপর তার পরের কাতার। কোনো অসম্পূর্ণতা থাকলে তা যেন শেষ কাতারে থাকে।’ -সুনানে আবু দাউদ : ৬৭১
এক্ষেত্রে অনেক সময় আমরা উদাসীন থাকি, দু-কদম দিয়ে সামনের কাতারে যাব, এতটুকু শক্তি হয় না। সামান্য সময় পাখার বাতাস থেকে দূরে থাকব এতটুকু সহ্য হয় না। অথচ নবী কারিম (সা.) বলেন, ‘প্রথম কাতারের ফজিলত যদি তারা জানত; সেখানে দাঁড়ানোর জন্য তারা অবশ্যই প্রতিযোগিতা করত।’ -সহিহ বোখারি : ৭২১
পরিশেষে নবীজীর হাদিস লক্ষ করি। আশা করি তা সামনে থাকলে কাতার সম্পর্কে আমাদের সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে।
নবী কারিম (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কাতার মিলাবে, আল্লাহতায়ালা তার রহমতের সঙ্গে তাকে মিলাবেন। আর যে কাতারের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করবে, আল্লাহতায়ালা তার রহমত থেকে তাকে বিচ্ছিন্ন (বঞ্চিত) করবেন।’ -সহিহ ইবনে খুযাইমা : ১৫৪৯
পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নাইজার। দাপ্তরিক নাম ‘রিপাবলিক অব দ্য নাইজার।’ আফ্রিকার বিখ্যাত নাইজার নদীর নামানুসারে এর নামকরণ হয়েছে। দেশটির মোট আয়তন চার লাখ ৯০ হাজার বর্গমাইল। নাইজারের ২৫ মিলিয়ন মানুষের ৯৯.৩ শতাংশই ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী। দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের শহর নিয়ামি দেশটির রাজধানী। ৩ আগস্ট ১৯৬০ সালে ফ্রান্সের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে নাইজার।
নাইজারে ইসলামের ইতিহাস সুপ্রাচীন হলেও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও দারিদ্র্য তাদের প্রধান সংকট। এর পরও দেশটিতে ইসলামি কর্মকাণ্ড থেমে নেই। দেশটির আলেম ও ধর্মপ্রাণ মানুষ শিক্ষা, সংস্কৃতি, সেবা ও রাজনীতি সর্বত্রই সক্রিয়।
দেশের প্রতিটি মসজিদে কোরআন মাজিদ শিক্ষাদানের জন্য মক্তব রয়েছে। বলা হয়, মক্তব নাইজারে কোরআনিক পরিচয়ের প্রতীক। দেশটির বেশিরভাগ পরিবার এখনও তাদের সন্তানদের সরকারি স্কুলে ভর্তির আগে মক্তবে পাঠানোর ঐতিহ্য বজায় রেখেছে।
অতীতে মক্তবে পবিত্র কোরআন মাজিদ হেফজ এবং শিশুদের কোরআনের জ্ঞান শিক্ষাদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত। অনেক দেশে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশুদের কোরআন শিক্ষা দেওয়ার ঐতিহ্য অতীত থেকে বিদ্যমান ছিল এবং আজও এর প্রচলন রয়েছে।
সম্প্রতি আল জাজিরা নেটওয়ার্ক নাইজারের রাজধানী নিয়ামির মুহাম্মদ বিন সৌদ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদেশি শিক্ষার্থীদের পরীক্ষক ফাতিমা আহমেদের সঙ্গে একটি সাক্ষাৎকারে নাইজারের স্কুলগুলোর সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেছে।
আল জাজিরা নেট-এর সঙ্গে আলাপকালে ফাতিমা বলেছেন, খলিফা উসমান বিন ফোদিও নাইজার এবং নাইজেরিয়ায় শিক্ষার জন্য প্রথম মক্তব শিক্ষার ব্যবস্থা করেন। কারণ তখন নানাবিধ কুসংস্কারে নিমজ্জিত ছিল নাইজার।
সমাজের মানুষকে কুসংস্কার থেকে মুক্তির জন্য গোত্রের আলেমদের ইমাম ও সমাজের নেতা হিসেবে বেছে নেন। সেই সঙ্গে প্রত্যেক গোত্রে একটি মসজিদ ও একটি ক্লাসরুম ছিল। এই শ্রেণিকক্ষটি ছিল কোরআন মুখস্থ করার এবং কোরআনিক বিজ্ঞান শেখার জন্য একটি বিশেষ কক্ষ, যা মক্তব নামে সমধিক পরিচিত।
কয়েক শতাব্দী ধরে, হুসা গোত্রের লোকজন কোরআন শিক্ষার এই ঐতিহ্য বজায় রেখেছে। মক্তবগুলো এমনভাবে গড়ে উঠেছে যে, যেসব ছাত্র সম্পূর্ণ কোরআন মুখস্ত করত এবং ইসলামি জ্ঞান শিখত- তারা এই ক্লাসরুম এবং মসজিদে থাকতে পারত। এভাবে গত শতাব্দীর শুরু পর্যন্ত ইমাম ও ছাত্রদের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়, যখন এ অঞ্চলের ইতিহাস এক বিরাট পরিবর্তনের সাক্ষী।
নাইজারে রাজনৈতিক পট-পরিবর্তন, ফরাসি আগ্রাসন সত্ত্বেও বেশিরভাগ পরিবার এখনও তাদের সন্তানদের সরকারি স্কুলে ভর্তির আগে মক্তবে পাঠানোর ঐতিহ্য বজায় রাখে। তারা বিশ্বাস করে যে, ‘শৈশবে কোরআন মুখস্থ করা বা শিক্ষা করা একটি পাথরের ওপর খোদাই করার মতো।’
কোরআনি মক্তবগুলো বন্ধ করার জন্য ফরাসিরা অনেক চেষ্টা করেছে। অনেক শিক্ষককে মেরে ফেলা হয়েছে, অনেকে প্রাণের ভয়ে দেশত্যাগ করেছেন। এমনকি কোরআন শিক্ষার উপকরণও পুড়িয়ে দিয়েছে ওই সময় সম্পর্কে ফাতিমা এভাবেই বলছিলেন।
বর্তমানে দেশে শত শত মক্তব রয়েছে। যদিও কিছুটা ভিন্ন আকারে এগুলো চলছে। আগে ছাত্রদের কাছ থেকে কোনো বেতন নেওয়া হতো না, এখন প্রতিটি ছাত্রের কাছ থেকে প্রতি মাসে কমপক্ষে চারশো ফ্রাঙ্ক (স্থানীয় মুদ্রা) নেওয়া হয় এবং বোর্ডিং এর জন্য আলাদাভাবে পরিশোধ করতে হয়।
এখন অনেক তরুণ কোরআন শেখানোর দিকে ঝুঁকছে। তারা দেশটির ঐতিহ্য রক্ষায় যথাসাধ্য চেষ্টা করছে।
উন্নতমানের বাসা, স্বাস্থ্যসম্মত খাবার ও গাইড খরচের নামে বেসরকারি হজ এজেন্সিগুলো নানা কৌশলে অর্থ হাতিয়ে নিলেও কাঙ্ক্ষিত সেবা পান না হাজিরা। বরং তাদেরকে জিম্মি করে চরম দুর্ভোগে ফেলা হয়।
অভিযোগ উঠেছে, চিকিৎসা ও পরিবহন সুবিধাসহ যেসব সুযোগ-সুবিধা হাজিদের দেওয়ার কথা ছিলো তা দেওয়া হয়নি। তাদের যে ধরনের বাড়িতে রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সৌদি আরবে নেওয়া হয়, বাস্তবে তা হয়নি। রাখা হয় অত্যন্ত নিম্নমানের ঘরে গাদাগাদি করে। কাবা শরিফের কাছাকাছি বাড়ি ভাড়ার কথা বলে তাদের রাখা হয় ৫-১০ কিলোমিটার দূরবর্তী স্থানে। যেখান থেকে পায়ে হেঁটে মসজিদে হারামে গিয়ে নামাজ আদায় করা অসুস্থ ও বৃদ্ধদের জন্য প্রায় অসম্ভব। গাড়ির কথা বললেও সেখানে গাড়ি দেওয়া হয়নি। গাইডের অভাবেও অপরিচিত জায়গায় হাজিদের অনেক ভোগান্তিতে পড়তে হয়। অনেকে হজের আহকামও ঠিকমতো পালন করতে পারেননি।
আবার কিছু এজেন্সির বিরুদ্ধে হজ যাত্রীদের খাবার না দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। পলিথিনে করে খাওয়া অযোগ্য পঁচা-বাসি খাবার দেওয়া হয় তাদেরকে। এজেন্সিগুলো খাবার সরবরাহ বাবদ মোটা অংকের অর্থ নিলেও হাজিদের নির্ভর করতে হয়েছে বাইরে থেকে কিনে আনা খাবারের ওপর। আবার অনেকে দেশ থেকে নেওয়া চিড়া মুড়ি খেয়েই দিন পার করেছেন।
পশু কোরবানি নিয়েও ছিল অস্বচ্ছতা। পশু ক্রয়ের জন্য টাকা নিয়ে হাজিদের অজ্ঞাতে কোরবানি দেওয়া হয়েছে। এমনই নানা অভিযোগ জমা পড়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়ে। অভিযুক্ত হজ এজেন্সির সংখ্যা ২০-২৫টির মতো।
ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালের হজ মৌসুমে বিভিন্ন হজ এজেন্সির বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগগুলো তদন্ত করা হচ্ছে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট সব হজ এজেন্সির বক্তব্য গ্রহণ, আনা অভিযোগ ও অভিযোগকারীর বক্তব্য যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে, লাইসেন্স বাতিল, লাইসেন্স স্থগিত, জামানত বাজেয়াপ্ত, আর্থিক জরিমানা, তিরস্কার দণ্ড থেকে শুরু করে যেকোনো শাস্তি দেওয়া হতে পারে। ক্ষেত্রবিশেষ অভিযোগ গুরুতর হলে অভিযোগকারীদের ফৌজদারি মামলারও পরামর্শ দেয় ধর্ম মন্ত্রণালয়।
আবার অনেক এজেন্সিকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার পাশাপাশি ছোট অপরাধ করা এজেন্সিগুলোকে সতর্ক করা হয় ভবিষ্যতের জন্য।
হজ এজিন্সেগুলোকে শাস্তি দেওয়ার প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বার্তা২৪.কমকে বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর এজেন্সিগুলোকে শুনানির জন্য ডাকা হয়। আবার কোনো এজেন্সিকে কারণ দর্শানোর নোটিশও দেওয়া হয়।
হজ এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে আসা অভিযোগের বিষয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. মতিউল ইসলাম বার্তা২৪.কম-কে বলেন, এবার আমাদের কাছে ২০-২৫টি হজ এজেন্সির বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে। অভিযোগ পাওয়ার পর আমরা অভিযোগের বিষয়ে ব্যাখ্যা চাই। সন্তোষজনক হলে অভিযোগ থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। কাউকে সতর্ক করে দেওয়া হয় ভবিষ্যতের জন্য। ইতোমধ্যে কিছু অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হয়েছে। বাকিগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি করা হবে।
শুরু হয়েছে আগামী হজের প্রাথমিক নিবন্ধন। চলতি মাসেই হজ প্যাকেজ ঘোষণা করা হবে, ইতোমধ্যে তিন ধাপে ২০২৫ সালের হজের প্রাথমিকভাবে যোগ্য ৮৯১টি হজ এজেন্সির তালিকা প্রকাশ করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। যাচাই-বাছাই শেষ আরও হজ এজেন্সির তালিকা প্রকাশ করা হবে।
অভিযোগের ধরণ হজ এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের নানা ধরণ রয়েছে। যেমন তদন্তের জন্য শুনানিতে ডাকা হয়েছে রোজিনা এয়ার ট্রাভেলসকে (হজ লাইসেন্স নং ১১২৭)। এই এজেন্সির বিরুদ্ধে চারজন হাজি অভিযোগ করেছেন। তাদের অভিযোগ, ‘এ’ প্যাকেজে রাখার চুক্তি করা হলেও অত্যন্ত নিম্নমানের হোটেলে রাখা, হারাম শরিফ থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে রাখা, নিম্নমানের খাবার পরিবেশন, মক্কা-মদিনায় কয়েক বেলা খাবার সরবরাহ না করা, হোটেল থেকে হারামে ও জিয়ারায় নিজস্ব খরচে যাতায়াত, মিনায় অসুস্থ হাজিদের চিকিৎসার সুব্যবস্থা না করা এবং জেদ্দা-ঢাকা বিমান টিকিট চড়ামূল্যে হাজিগণের নিজেদের ক্রয় করা ইত্যাদি।
রোজিনা এয়ার ট্রাভেলসের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ, ২০২৪ সালের হজপালনের জন্য মৌখিক চুক্তির ভিত্তিতে কোরবানিসহ এজেন্সিকে ৫ লাখ ৮০ হাজার টাকা প্রদান করেন। পরবর্তীতে ফ্লাইটের আগে আরও ১০ হাজার টাকা দাবি করলে তাও পরিশোধ করেন। কথা ছিল হাজিরা নিজেরা কোরবানির পশু জবাই করবেন। মিনা-আরাফা-মুজদালিফা থেকে জামারায় পাথর নিক্ষেপের পর এজেন্সির লোক মক্কায় হোটেলে নিয়ে যেতে চায় এবং কোরবানি হয়ে গেছে বলে জানায়। এতে হাজিরা প্রতারণার স্বীকার হয়েছেন এবং কোরবানির টাকা আত্মসাৎ হয়েছে বলে মনে করেন।
অন্যদিকে আমদা ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলস (হজ লাইসেন্স নং ৫৯৮)-এর গ্রুপলিডার এবং মোজাহিদ হজ কাফেলার পরিচালক মোজাহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে উমরাযাত্রীদের প্রতিশ্রুত সেবা না দিয়ে হয়রানির অভিযোগ করা হয়েছে।
স্কাই ওয়ার্ল্ড ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরস (হজ লাইসেন্স নং ১২১১)-এর বিরুদ্ধে ৮ জন হাজি অভিযোগ দিয়েছেন, তিন তারকা হোটেলে ও ক্লক টাওয়ার থেকে ৩৫০ মিটার দূরে রাখার কথা থাকলেও এজেন্সি তা করেনি। মক্কায় ৩ ঘণ্টা অপেক্ষা শেষে নিম্নমানের হোটেলে রাখে, যা সৌদি সরকারের কালো তালিকাভুক্ত।
এছাড়া মক্কা থেকে মিনার তাঁবুতে নারী হাজিরা সিট পাননি। তারা অন্যের পাশে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন। আরাফাতের তাঁবুতেও অনেক হয়রানি পোহাতে হয়েছে, আরাফাত থেকে মুজদালিফা যাওয়ার পর এজেন্সির লোক যোগাযোগ করেনি। মুজদালিফা থেকে জামারায় পাথর মেরে অত্যন্ত কষ্ট করে মক্কার হোটেলে পৌঁছান। হোটেলে পৌঁছানোর পর এজেন্সির লোকজন কোনো খবর রাখেনি এবং ঠিকমত খাবার দেয়নি।
রহমানিয়া হজ গ্রুপ (উমরা লাইসেন্স নং ৪৩০)-এর বিরুদ্ধে প্রতিশ্রুতি মোতাবেক সেবা না দেওয়ার অভিযোগ, দি পদ্মা এয়ার ইন্টারন্যাশনাল (হজ লাইসেন্স নং ১২৬৬) উমরাপালনে গিয়ে হাজি হারিয়ে যাওয়া সংক্রান্ত অভিযোগ, আবাবিল ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরস (উমরা লাইসেন্স নং ৪৬৩)-এর বিরুদ্ধে প্রতিশ্রুতি মোতাবেক সেবা না দেওয়া এবং ১ লাখ টাকা আর্থিক ক্ষতি সংক্রান্ত অভিযোগ, স্টার হলিডেইজ (উমরা লাইসেন্স নং ৩৬১ ও হজ লাইসেন্স নং ৩৬২)-এর বিরুদ্ধে উমরাযাত্রীদের দেশে ফেরার সময় জাল টিকিট দেওয়া, ৪০ জনের টিকিটি না দিয়ে ১০ জনকে বাংলাদেশে পাঠাবে বলে মদিনা এয়ারপোর্টে নিয়ে প্রতারণা করা হয়েছে।
আবহা এয়ার ট্রাভেলস (হজ লাইসেন্স নং ১২৯৭)-এর বিরুদ্ধে প্রতারণা, সাদ ওসওয়াহ ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরস (হজ লাইসেন্স নং ১১৩৮)-এর বিরুদ্ধে অন্য এজেন্সির (মেসার্স এন.এম.এস.এস ইন্টারন্যাশনাল, হজ লাইসেন্স নং ১৩১৯) মালিক লাইসেন্সের সুনাম ক্ষুন্ন করার অভিযোগ উত্থাপন করেছেন। ভার্সেটাইল এয়ার সার্ভিসেস লিমিটেড (হজ লাইসেন্স নং ১৩৯৭)-এর বিরুদ্ধে প্রতিশ্রুত সেবা না দেওয়ার অভিযোগ করেন এক হাজি।
স্বদেশ ওভারসিস (হজ লাইসেন্স নং ১৫৩১)-এর বিরুদ্ধে হজ গাইডের অসহযোগিতা, নিজ ব্যবস্থাপনায় মদিনায় যাওয়া ও মদিনায় পরিত্যক্ত হোটেলে রাখাসহ নানাবিধ অভিযোগ এসেছে। লিড এজেন্সি হিসেবে ফিফাস ট্রাভেলস ইন্টারন্যাশনালকেও (হজ লাইসেন্স নং ১৪৯৬) এসব অভিযোগের জবাব দিতে হবে।
লাইম স্টোন রিসোর্ট এন্ড ট্যুরিজম লিমিটেড (হজ লাইসেন্স নং ০৯০৭)-এর বিরুদ্ধে এক নারী হাজি অভিযোগ করেন, ২০২৪ সালের হজে যাওয়ার জন্য ৪ লাখ টাকা প্রদান করেন। হজে না নিয়ে এজেন্সির মালিক সৌদি চলে যান। পরে হজযাত্রী ট্রান্সফার হয়ে অন্য এজেন্সির মাধ্যমে হজে গমন করেন। কিন্তু লাইম স্টোন রিসোর্ট এন্ড ট্যুরিজম হজযাত্রীর টাকা ফেরত দিচ্ছে না।
মুনিরা ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরস (হজ লাইসেন্স নং ১০৫৮)-এর বিরুদ্ধে টাকা নেওয়ার পরেও হজে না নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
আবাবিল ইন্টারন্যাশনাল ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলস লিমিটেড (হজ লাইসেন্স নং ১২৯৫)-এর বিরুদ্ধে হজে না নিয়ে টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে।
এমদাদ এয়ার ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরস (হজ লাইসেন্স নং ১৪৭৭)-এর বিরুদ্ধে ৪২ জন হাজি প্রতিশ্রুত সেবা না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন।
প্যান ব্রাইট ট্রাভেলস (প্রা.) লিমিটেডের (হজ লাইসেন্স নং ১১১)-এর বিরুদ্ধে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী হোটেল না দেওয়া, ৩/৪ দিন পানি সরবরাহ না করা, কোনো বেডশিট না থাকা, এসি নষ্ট, ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার না করা, ফ্যান ও ফ্রিজ নষ্ট ইত্যাদির অভিযোগ এসেছে হজযাত্রীর পক্ষ থেকে।
২০২৪ সালের হজে হাজিদের হেনস্থা এবং খাওয়া নিয়ে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ এসেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পক্ষ থেকে হাজি শরীয়তুল্লাহ ওভারসিজ লিমিটেড (হজ লাইসেন্স নং-০৩১৭) এবং মদিনা স্টার ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলস (হজ লাইসেন্স নং ০৯৮২)-এর বিরুদ্ধে।
অনুমোদিত ইমেইল আইডি ব্যবহার না করে অন্য আইডির মাধ্যমে ২৬ জন যাত্রীর প্রাক-নিবন্ধন কার্যক্রম চালানোর দায়ে রাইসা ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসকে (হজ লাইসেন্স নং ১৪৭৮) কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠিয়েছে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
হারিয়ে যাওয়া ৭৮ বছর বয়স্ক উমরাযাত্রীকে পালিয়ে গেছেন মর্মে প্রচারের মতো গুরুতর অভিযোগ এসেছে সাফা মারওয়া ট্রাভেলস (হজ লাইসেন্স নং ৩৬০)-এর বিরুদ্ধে। যদিও পরে হারানো ব্যক্তিকে বাংলাদেশ হজ মিশনের সহযোগিতায় দীর্ঘ এক মাস পর মক্কার আল-নূর স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পাওয়া গেছে। এছাড়া এই এজেন্সির উমরায় যাত্রী পাঠানোর বৈধ অনুমোদন নেই।
ট্রাভেল নূরানী (হজ লাইসেন্স নং ১২৭৬)-এর বিরুদ্ধে এম আলী ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেলস (হজ লাইসেন্স নং ১৪০৬)-এর দেনা-পাওনা বিষয়ক পারস্পরিক বিরোধ এবং কিবলা ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেলস (হজ লাইসেন্স নং-১১০৮)-এর বিরুদ্ধে মক্কার বাড়ি ভাড়া বাবদ টাকা পাওনার অভিযোগ করেছেন মেসার্স সায়েম ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরস ইন্টারন্যাশনাল (হজ লাইসেন্স নং ৫০৫)-এর স্বত্বাধিকারী। অন্যদিকে সিনেটর এয়ার ট্রাভেলস (হজ লাইসেন্স নং ১১৭৩০-এর বিরুদ্ধে উমরাযাত্রীর টিকিটের টাকা ফেরত না দেওয়ার অভিযোগ এসেছে।
অভিযুক্ত এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে শাস্তি পাবেন। সেক্ষেত্র তাদের আর হজ কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার সুযোগ থাকবে না।
জানা যায়, ২০২৪ সালের হজ কার্যক্রমে মোট ২৫৯টি হজ এজেন্সি অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে ২৩৪টি ছিলো লিড হজ এজেন্সি। যদিও ১৫৩৩টি হজ এজেন্সির মাধ্যমে হজে হাজি পাঠানোর অনুমোদন দিয়েছিল ধর্ম মন্ত্রণালয়। কিন্তু পর্যাপ্ত হাজি না পাওয়া ছোট ছোট এজেন্সিগুলো ২৩৪টি বড় এজেন্সির সঙ্গে একত্রিত করা হয়েছে। অর্থাৎ যেসব হজ এজেন্সি সর্বনিম্ন ২৫০ জন হজযাত্রী নিবন্ধন করতে পারেনি এমন এজেন্সি কয়েকটি এজেন্সির সমন্বয়ে একটি লিড এজেন্সি নির্ধারণ করা হয়। সৌদি আরব যোগাযোগসহ নানা সুবিধার জন্য কমসংখ্যক এজেন্সির মাধ্যমে হজযাত্রী গ্রহণে বেশি আগ্রহী।
এর আগে, নানা অভিযোগে ২০১৯ সালে ৪৭, ২০২২ সালে ৫৪ এবং ২০২৩ সালে ৬১টি হজ এজেন্সিকে শাস্তি দেওয়া হয়।
ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা পরিচয়ে ফোনে টাকা ফেরতের আশ্বাস দিয়ে হাজি, হজযাত্রী ও এজেন্সি মালিকদের সঙ্গে প্রতারণা করছে একটি চক্র। তাদের প্রতারণা থেকে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক করতে রোববার (২০ অক্টোবর) জরুরি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সম্প্রতি ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তার পরিচয় দিয়ে এক শ্রেণির প্রতারকচক্র টাকা ফেরত দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়ে হজযাত্রী, হাজি, হজ এজেন্সির মালিক বা প্রতিনিধি ও হজ গাইডদের ফোন করে তাদের ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, বিকাশ ও নগদ ইত্যাদির তথ্য চাচ্ছে।
ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে হাজি, হজ এজেন্সি ও হজ গাইডদের অর্থ ফেরত (রিফান্ড) সরাসরি ব্যাংক হিসাবে BEFTN বা চেকের মাধ্যমে পাঠানো হয়। এজন্য কোনো ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, বিকাশ ও নগদের তথ্য চাওয়া হয় না। গত ৯ অক্টোবর ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগকে অনুরোধ করা হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
এমতাবস্থায়, প্রতারকচক্র ফোন করে টাকা ফেরতের কথা বলে ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, বিকাশ ও নগদের তথ্য চাইলে তা না দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। এ ধরনের ফোন আসলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ করার জন্যও পরামর্শ দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।
এর আগে জনৈক মিজানুর রহমানের প্রতারণার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানায় ধর্ম মন্ত্রণায়।
মিজানুর রহমান নিজেকে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উপসচিব পরিচয় দিয়ে ০১৩০৪-১৬০২৮০ মোবাইল নম্বর থেকে সাধারণ হজযাত্রী কিংবা যারা ইতোপূর্বে হজে গিয়েছেন, তাদেরকে ফোন করে রিফান্ড হিসেবে অর্থ ফেরত দেওয়ার কথা জানায়। সেই অর্থ ফেরত দেওয়ার কথা বলে সাধারণ হাজিদের নিকট থেকে ব্যাংক একাউন্ট, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, মোবাইল ব্যাংকিং (নগদ ও বিকাশ) তথ্য জানার চেষ্টা করে। এ বিষয়ে বিভিন্ন হজযাত্রী, হাজিদের নিকট হতে অভিযোগ পাওয়ার পর ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় জানায়, এই নামে কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী তাদের নেই এবং মোবাইল নম্বরটি (০১৩০৪- ১৬০২৮০) এ মন্ত্রণালয়ের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর নয়।
উল্লেখ্য, হজ শেষে যদি কোনো টাকা হাজি সাহেবদের টাকা ফেরত দেওয়া হয়, তাহলে সেটা মন্ত্রণালয় যথাযথভাবে হাজি ও হজ এজেন্সির মাধ্যমে পরিশোধ করে। এ ছাড়া বেসরকারি মাধ্যমে প্রাক-নিবন্ধিন বাতিল করলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি টাকা ফেরত পান। সেটাও দেওয়া হয় চেকের মাধ্যমে।