চুরির ২৩ বছর পর হাজরে আসওয়াদ যেভাবে উদ্ধার হয়

  • ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

হাজরে আসওয়াদ, ছবি: সংগৃহীত

হাজরে আসওয়াদ, ছবি: সংগৃহীত

পবিত্র কাবাঘরের পূর্ব কোণে স্থাপিত একটি কালো পাথরকে আরবিতে হাজরে আসওয়াদ বলা হয়। একে মুসলমানরা জান্নাতি পাথর হিসেবে বিশ্বাস করে। এই পাথরের সঙ্গে নবী কারিম (সা.)-এর স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে। ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ বিধান হজ ও উমরা পালনের সময় তাওয়াফের প্রতি চক্করে হাজরে আসওয়াদে চুমু দেওয়া সুন্নত।

যদি হাজরে আসওয়াদ চুম্বন দেওয়া সম্ভব না হয়, ডান হাত দিয়ে ইশারা করলেও হবে। অর্থাৎ কালো পাথরটির দিকে সম্প্রসারিত করে স্বীয় হস্তে চুম্বন করলেও সুন্নত আদায় হয়ে যাবে এবং আল্লাহতায়ালা হাজরে আসওয়াদ চুম্বনের সওয়াব ও বরকত দান করবেন। তাই মুসলমানদের কাছে হাজরে আসওয়াদের গুরুত্ব অপরিসীম।

বিজ্ঞাপন

তবে অবাক করা তথ্য হলো, এই হাজরে আসওয়াদ একসময় চুরি হয়েছিল। আব্বাসি আমলে এই বিস্ময়কর ঘটনা ঘটে। অনেকে হয়তো জানেনই না, চুরি যাওয়া হাজরে আসওয়াদ উদ্ধার করতে আব্বাসি খলিফাদের ২৩ বছর সময় লেগেছিল।

হাজরে আসওয়াদ, ছবি: সংগৃহীত

৯৩০ সালের জানুয়ারি মাসে শিয়া ইসমাইলি গোষ্ঠী কারামিতার নেতা আবু তাহের আল-কারামাতি এটি চুরি করেছিলেন এবং বর্তমান বাহরাইনে অবস্থিত একটি সামরিক ঘাঁটিতে নিয়ে গিয়েছিলেন।

আবু তাহির আল-কারামাতি বাহরাইনকে ঘিরে গড়ে ওঠা সেকালের কারামিতা অঞ্চলের শাসক ছিলেন। তার ভাই আবু সাইদ হাসান ছিলেন কারামিতা রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা। ৯২৩ সালে আবু তাহির ভাইয়ের স্থলাভিষিক্ত হন। সে বছরই তিনি বসরা আক্রমণ করেন। পাঁচ বছর পর ৯২৭ সালে আক্রমণ করেন বসরা। আব্বাসি খলিফাদের তিনি বাগদাদ দখলের হুমকিও দেন। ইরাকের বিভিন্ন জনপদে নিয়মিত লুটতরাজ চালান।

৯৩০ সালে এই নেতা আব্বাসিদের হাত থেকে মক্কা ছিনিয়ে নেওয়ার গোপন পরিকল্পনা করেন। আব্বাসিরা তা বুঝতে পেরে তাকে মক্কায় প্রবেশে বাধা দেন। পরে তিনি শাসকগোষ্ঠীর সঙ্গে শান্তি আলোচনা করে মক্কায় প্রবেশ করেন। তবে মক্কায় প্রবেশ করে তিনি চুক্তি লঙ্ঘন করেন। হজের প্রথম দিনেই তিনি মক্কায় আক্রমণ করে বসেন। কারামিতা বাহিনী ঘোড়া নিয়ে মসজিদুল হারামে প্রবেশ করে। হাজিদের তারা নির্বিচারে হত্যা করতে থাকে। ঐতিহাসিকগণ বলেন, সেবার প্রায় ৩০ হাজার হাজি খুন হন।

হাজরে আসওয়াদ চুম্বনের জন্য সবসময় ভিড় থাকে, ছবি: সংগৃহীত

কারামিতা বাহিনী পবিত্র কাবাঘর লুট করেছিল। বাড়িঘর ধ্বংস করেছিল। অনেক হাজির মরদেহ জমজম কূপে ফেলে দিয়েছিল। লাশ পচাতে রাস্তায়ও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দিয়েছিল তারা। আবু তাহির হাজরে আসওয়াদ কুক্ষিগত করেছিলেন। তিনি সেটি নিজের মসজিদে নিয়ে যান। মূলত মসজিদটিকে তিনি পবিত্র কাবাঘরের মতো পবিত্র স্থান ঘোষণা করতে চেয়েছিলেন, যা কখনোই পূর্ণ হওয়ার নয়।

আবু তাহিরের ভয়ংকর পরিণতি সম্পর্কে ঐতিহাসিকেরা লেখেন, মৃত্যুর সময় তার দেহ পুরোটায় পোকায় খেয়ে ফেলেছিল। দীর্ঘ ২৩ বছর পর বিপুল পরিমাণ টাকার বিনিময়ে পাথরটি উদ্ধার করা হয়েছিল। এ সময় পাথরটি ভেঙে কয়েক টুকরো হয়ে গিয়েছিল।

হাজরে আসওয়াদ তাওয়াফের শুরু এবং সমাপ্তিস্থল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন হাদিসে নবী কারিম (সা.) এ পাথরের মর্যাদা বর্ণনা করেছেন।

যুগ যুগ ধরে পাথরটি নানাভাবে সংরক্ষিত ছিল। সুরক্ষার জন্য পাথরটি খাঁটি রৌপ্যের ফ্রেমে আবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। সর্বশেষ ২০০২ সালে বাদশাহ ফাহাদের সময় তা স্থাপন করা হয়।

পঞ্চাশের দশকে তোলা হাজরে আসওয়াদের ছবি

একটি বাদামী পেস্টে আবৃত পাথরটি মুসল্লিরা স্পর্শ করেন এবং চুম্বন করেন। পেস্টে রয়েছে মোমের মিশ্রণ, কস্তুরী ও অম্বর।

১৩৭৬ হিজরির ১ রবিউল আউয়াল মোতাবেক ১৯৫৭ সালে ক্যালিগ্রাফার শেখ মুহাম্মদ তাহির আল কুর্দি হাজরে আসওয়াদের ৮টি খণ্ডের চিত্র অঙ্কন করেন। তিনি কালো পাথরের ওপর স্বচ্ছ কাগজ রেখে আলাদাকরে ছবিগুলো আঁকেন।

কয়েক বছর আগে ফক্স স্ট্যাক প্যানোরামা প্রযুক্তি ব্যবহার করে হাজরে আসওয়াদের সবচেয়ে স্বচ্ছ ছবি তোলা হয়। ৪৯ হাজার মেগাপিক্সেলের ১০৫০ ছবি তুলতে ৭ ঘণ্টা সময় লাগে। এরপর প্রায় ৫০ ঘণ্টা সময় ব্যয়ে তা ব্যবহারযোগ্য করা হয়। ৩০ সেন্টিমিটার ব্যাসরেখার কালো ও লালচে বর্ণের পাথরটি ডিম্বাকৃতির।