৫ বছর পর মিয়ানমারের সংসদে দুই মুসলিম
মিয়ানমারের সাধারণ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) দুই মুসলিম প্রার্থী জয়লাভ করেছেন। দুই প্রার্থীর মধ্যে একজন নারী ও একজন পুরুষ।
পাবেডান শহরের আসনে জয়ী হয়েছেন ৩৩ বছর বয়সী ইউ সিথু মাউং। আর মান্ডালি অঞ্চলের শিংগাইং শহরের আসনে জয়ী হয়েছেন দও উইন মেয়া মেয়া।
ক্ষমতাসীন দলের দুই মুসলিম প্রার্থীই তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিপুল ভোটে হারিয়েছেন। ইউ সিথু মাউং তার প্রতিদ্বন্দ্বীকে হারিয়েছেন ১২ হাজার ৮৮২ ভোটে।
রোববার (৮ নভেম্বর) মিয়ানমারে সাধারণ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হয়। দেশটিতে ৩ কোটি ৭০ লাখের বেশি নিবন্ধিত ভোটার থাকলেও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় এবার ভোটদানের হার কম ছিল।
২০১৫ সালে দেশটির সংসদে কোনো মুসলিম সাংসদ ছিল না। ইউ সিথু মাউংয়ের নির্বাচনী এলাকার বেশিরভাগ ভোটারই মুসলিম, বাকিরা বৌদ্ধ। তিনি নিজে মুসলিম রাজনীতিবিদ ও এমপি হলেও রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তার প্রশ্ন এড়িয়ে যান।
তবে বিদেশি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘আমি নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার পর কিছু কিছু সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি। আমাকে ‘কালার’ (দক্ষিণ এশীয়দের উদ্দেশে দেওয়া স্থানীয়দের গালি) বলেছেন অনেকে। এমনকি অনেক মুসলমানও আমাকে নাস্তিক বলে গালি দিয়েছেন। তাদের অভিযোগ, আমি যথেষ্ট ধার্মিক নই, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি না, ধর্ম-কর্ম করি না। আমি অনেক বিদ্বেষ সহ্য করেছি আমার জাতি ও ধর্মের কারণে। এসব শুনতে শুনতে গা সওয়া হয়ে গেছে।’
ইউ সিথুর কথা হলো, ‘সংসদ সদস্য হিসেবে সবার জন্য কাজ করতে হবে। বিশেষ করে যারা বৈষম্যের শিকার হচ্ছে, তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে।’
নির্যাতিত না হলেও অন্যদের মতো ইউ সিথু মাউংও বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। যেমন জাতীয় পরিচয়পত্র পেতে বেশ কয়েক বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে এই সংসদ সদস্যকে।
মিয়ানমারের রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর প্রভাব প্রবল। সংবিধান অনুযায়ী, পার্লামেন্টের ২৫ শতাংশ আসন সেনাসদস্যদের জন্য বরাদ্দ। গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়গুলোরও দেখভাল করে সেনাবাহিনী করে।
মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) দেশটির সাধারণ নির্বাচনে জয় দাবি করেছে। সোমবার (৯ নভেম্বর) দলটির মুখপাত্র এই দাবি করেন।
অপরদিকে, মিয়ানমারের সাধারণ নির্বাচনে অং সান সু চির দল এনএলডি রাখাইন রাজ্যের বেশিরভাগ আসন হেরেছে। জাতিগত সংখ্যালঘু রাখাইনদের দল আরাকান ন্যাশনাল পার্টি (এএনপি) ও আঞ্চলিক দলগুলোর কাছে এনএলডি এখানে পরাজিত হয়েছে। রাখাইনে অর্ধেকের বেশি আসনে ভোটগ্রহণ বাতিল হওয়ায় ২৮ আসনে ভোট হয়। ওই আসনগুলোর বেশিরভাগে জয় পেয়েছে এএনপি ও স্থানীয় আঞ্চলিক দলগুলো।
দেশটির তৃতীয় বৃহত্তম দল এএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য দাও আই নু সেইন বলেন, এএনপির সদস্যরা কেন্দ্রীয় পার্লামেন্টের আটটি আসনে আর রাজ্য পার্লামেন্টের ছয়টি আসনে জয়লাভ করেছে।
তিনি বলেন, রাখাইন রাজ্যের উত্তরাঞ্চলে ভোট বাতিল না হলে আরও বেশি আসন পেত তার দল।
মিয়ানমারে অর্ধশত বছরের বেশি সময় ধরে সেনাবাহিনী ও সেনাসমর্থিত সরকারের অবসান ঘটিয়ে ২০১৫ সালের সাধারণ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পায় এনএলডি। একসময় স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করে খ্যাতি অর্জন করা সু চি রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে কার্যত কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে পড়েন। এর পরও মিয়ানমারের জনগণের মধ্যে সু চি এখনও জনপ্রিয়।
সম্প্রতি পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, ৭৫ বছর বয়সী নোবেলজয়ী সু চিকে সবচেয়ে আস্থাভাজন রাজনীতিবিদ হিসেবে এখনও মনে করেন দেশটির ৭৯ শতাংশ মানুষ।