মক্কা-মদিনার গ্র্যান্ড মসজিদ পরিচালনা কমিটিতে ১০ নারী

  • ইসলাম ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

কাবা শরিফ, মক্কা, ছবি: সংগৃহীত

কাবা শরিফ, মক্কা, ছবি: সংগৃহীত

সৌদি আরবের পবিত্র দুই মসজিদ মক্কার মসজিদে হারাম ও মদিনার মসজিদে নববীর পরিচালনা কমিটির ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে ১০ জন নারীকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। মক্কা-মদিনার মসজিদ পরিচালনা কর্তৃপক্ষ হারামাইন প্রেসিডেন্সি এক বিবৃতিতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে। তবে নিয়োগ পাওয়া নারীদের নাম-পরিচয় এখনও জানায়নি কর্তৃপক্ষ। সেই সঙ্গে নিয়োগের মেয়াদকাল সম্পর্কে কিছু জানানো হয়নি।

পরিচালনা কমিটির ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে ১০ নারী নিয়োগের বিষয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্বস্থানে নারীর ক্ষমতায়ন গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। উন্নয়ন এবং অর্থনীতিতে এর প্রভাব প্রতিফলিত হবে।’

বিজ্ঞাপন

সৌদি সরকার নিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যম এসপিএতে বলা হয়েছে, পবিত্র দুই মসজিদের কার্যক্রম পরিচালনা কমিটিতে নিয়োগ পাওয়া নারীদের অংশগ্রহণ থাকবে। সেসব কার্যক্রম নির্দেশিকা প্রণয়ন, নির্দেশ, প্রকৌশলী, প্রশাসনিক বা তদারকি পরিষেবা যাই হোক না কেন।

পবিত্র কাবা সংশ্লিষ্ট কিং আবদুল আজিজ কমপ্লেক্সের উপ-প্রধান আবদুল হামিদ আল মালিকি বলেন, গ্র্যান্ড মসজিদে আসা মানুষের মধ্যে প্রায় অর্ধেকই নারী। তাই কমিটিতে নারী নেতৃত্ব থাকলে আরও ভালো মানের সেবা নিশ্চিত করা যাবে।

দেশটিতে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উচ্চ পদে নারীদের নিয়োগ দেওয়ার ঘটনা বিরল হলেও বিষয়টিকে নারীর ক্ষমতায়নের উদ্যোগ বলে বিভিন্ন নারীবাদী সংগঠন ধন্যবাদ জানিয়েছে সৌদি প্রশাসনকে।

এ ঘটনাকে নারীর ক্ষমতায়নের দিকে আরও এক ধাপ অগ্রসর হওয়া বলে মনে করছেন অনেকে। নিয়োগ পাওয়া এই ১০ নারী দুই মসজিদের বিভিন্ন বিভাগে কাজ করবেন। তন্মধ্যে প্রশাসনিক পদই বেশি। কর্তৃপক্ষের মতে, এই নিয়োগের উদ্দেশ্য ‘সৌদি নারীদের যোগ্যতা ও দক্ষতা অনুসারে ক্ষমতায়ন করা।’

সৌদি গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালে ৪১ জন নারীকে নিয়োগ দেওয়া হয় এই দুই মসজিদের বিভিন্ন পদে। এ ছাড়া বহু আগে থেকেই নিরাপত্তাসহ নানাবিধ কাজে দুই মসজিদে বহু নারী কর্মী নিয়োজিত ছিলো। তবে শীর্ষ পর্যায়ে এবারই প্রথম নিয়োগ দেওয়া হলো নারীদের।

সৌদি অর্থনীতিতে তেলনির্ভরতা কমিয়ে আনার লক্ষ্যে যুবরাজ মোহাম্মদ ভিশন ২০৩০ গ্রহণ করেছেন। নারীর চাকরির ক্ষেত্র সম্প্রসারণ এর মধ্যে অন্যতম। সৌদি সরকারের হিসেব অনুযায়ী ২০১৫ সালে দেশটিতে কর্মজীবী নারীর সংখ্যা ছিল আট লাখের বেশি, ২০১৯ সালে তা ১০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে।

সৌদি আরবে ১৯৫৫ সালে মেয়েদের জন্য প্রথম স্কুল ও ১৯৭০ সালে মেয়েদের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে এসে পরিচয়পত্র পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। সৌদি আরবে নারীদের পরিচয়পত্র নিতে হলে পুরুষ অভিভাবকের অনুমতি নিতে হতো। ২০০১ সালে সৌদি নারীরা পুরুষ অভিভাবকের অনুমতি ছাড়াই পরিচয়পত্র নেওয়ার সুযোগ পান।

২০০৫ সালে সৌদি আরবে নারীদের জোরপূর্বক বিয়ে নিষিদ্ধ হয়। ২০০৯ সালে বাদশাহ আবদুল্লাহ সৌদি আরবের কেন্দ্রীয় সরকারে প্রথম নারী মন্ত্রী নিয়োগ করেন। নূরা আল কায়েজ নারী বিষয়ক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

২০১২ সালে প্রথমবারের মতো অলিম্পিকে অংশ নেন সৌদি নারীরা। তাদের মধ্যে সারাহ আত্তার নারীদের ৮০০ মিটার দৌঁড়ে লন্ডন অলিম্পিকের ট্র্যাকে নামেন হিজাব পড়ে। ২০১৩ সালে সাইকেল ও মোটরসাইকেল চালানোর অনুমতি সৌদি নারীরা। তবে কিছু নির্দিষ্ট এলাকায় এবং ইসলামি রীতিতে পুরো শরীর ঢেকে এবং কোনো পুরুষ আত্মীয়ের উপস্থিতিতে তা চালানোর অনুমতি দেওয়া হয়।

২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাদশাহ আবদুল্লাহ সৌদি আরবের রক্ষণশীল কাউন্সিল ‘শুরা’য় প্রথমবারের মতো ৩০ জন নারীকে নিয়োগ দেন। ২০১৫ সালে সৌদি আরবের পৌরসভা নির্বাচনে নারীরা প্রথমবারের মতো ভোট দেওয়ার এবং নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ পান। ওই নির্বাচনে ২০ জন নারী নির্বাচিত হন।

২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে সৌদি আরব দেশটির স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারপার্সন হিসেবে সারাহ আল সুহাইমির নাম ঘোষণা করে আরেক ইতিহাস রচনা করে। আর ২০১৮ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর সৌদি আরব নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমতি সংক্রান্ত এক আদেশ জারি করে। এর দেশটির নারীরা লাইসেন্স ও একাকী গাড়ি চালানোর সুযোগ পান।

তবে সৌদি আরবের রক্ষণশীলরা যুবরাজের এসব উদ্যোগকে খুব একটা ভালো নজরে দেখছেন না। বিশেষ করে নারীদের গাড়ি চালনোর অধিকার, স্টেডিয়ামে পুরুষদের সঙ্গে খেলা দেখা ও সিনেমা হল চালুর ঘটনা। কিন্তু পরিস্থিতির কারণে এটা নিয়ে মুখও খুলতে পারছেন না।

-আরব নিউজ অবলম্বনে