ইতালিতে কমে গেছে মহামারী করোনায় আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে জীবন ও জীবিকা। ধাপে ধাপে শিথিল করা হয়েছে করোনা লকডাউন।
খুলেছে অফিস আদালত, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, দোকানপাট, রেস্তোরাঁসহ সব কিছু। এদিকে করোনার প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে থাকায় দীর্ঘ তিনমাস পর বুধবার (৩ জুন) থেকে সীমান্ত খুলে দেওয়ার পাশাপাশি নাগরিকদের ওপর থেকেও তুলে নেয়া হলো ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা।
সীমান্ত খুলে দেওয়ার মাধ্যমে প্রায় তিন মাস পর ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল হচ্ছে ইতালির ।
বৃহস্পতিবার (৪ জুন) থেকে ইতালির নাগরিকেরা ইউরোপের অন্য দেশগুলোতে অবাধে ভ্রমণ করতে পারবেন। একইসাথে আঞ্চলিক শহরগুলোর মধ্যে নাগরিকদের যাতায়াতে আর কোন নিষেধাজ্ঞা থাকছে না।
প্রথম ধাপে খুলে যাচ্ছে ইতালির পর্যটনশিল্প। বিশ্বের যে কোনো দেশ থেকে পর্যটকরা ইতালিতে প্রবেশ করতে পারবেন। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ইতালির সর্বত্র ভ্রমণ করতে হবে। এতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এর সকল দেশের পর্যটকদের জন্য ১৪ দিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারান্টাইন লাগবেনা।
ইতালির প্রধানমন্ত্রী জুসেপ্পে কন্তে বলেন, ইতালি জাতি আজ থেকে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক কার্যক্রম বা ভ্রমণ করতে পারবে ইতালির সর্বত্র। সেই সাথে বিশ্বের সকল দেশের পর্যটকদের জন্য ইতালি খোলা আছে।
তবে ইউরোপ মহাদেশের বাইরে থেকে আসা পর্যটকরা ইতালিতে আসলে বাধ্যতামূলক ১৫ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। এই নিয়ম ইউরোপ মহাদেশের নাগরীকদের জন্য প্রযোজ্য হবেনা।
উল্লেখ্য, গত ফেব্রুয়ারীর শেষ সপ্তাহে ইতালিতে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় এর ১১ই মার্চ থেকে পুরো ইতালিতে লকডাউন ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।
লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ইরানসমর্থিত হিজবুল্লাহকে অর্থ জোগানদাতা ব্যাংকে হামলা চালিয়েছ ইসরায়েল। তাদের এবারের লক্ষ্য হিজবুল্লাহকে অর্থ জোগান দেয় এমন আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো।
সোমবার (২১ অক্টোবর) যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম বিবিসি বাংলা এ খবর জানায়।
খবরে বলা হয়, লেবাননভিত্তিক হিজবুল্লাহকে অর্থের জোগান দেয় এমন ব্যাংকে হামলা করেছে ইসরায়েল। এর মধ্যে বৈরুতের দক্ষিণে দাহিয়েহ শহরে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। তবে এসব হামলায় কেউ হতাহত হয়েছেন কিনা, তা এখনো জানা যায়নি।
লেবাননের ২৫টি এলাকা, যার ১৪টিই রাজধানী বৈরুতে, সেসব এলাকায় রাতভর হামলা হতে পারে বলে সেখানকার বাসিন্দাদের ইসরায়েল আগেই সতর্ক করে দিয়েছিল।
ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ) বলেছে, হিজবুল্লাহকে সমর্থন করে এমন ব্যাংক ও অন্য আর্থিক অবকাঠামোগুলো তাদের হামলার মূল লক্ষ্য।
রোববার সন্ধ্যায় এক বিবৃতিতে আইডিএফের মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হ্যাগারি সতর্ক করে বলেন, হিজবুল্লাহর ‘সন্ত্রাসী’ কার্যক্রমে অর্থদান করে, এমন প্রতিষ্ঠানের কাছে যারা রয়েছেন, তাদের অবিলম্বে সেখান থেকে সরে যেতে হবে।
এ সময় তিনি বলেন, আগামী কয়েক ঘণ্টায় কয়েকটি টার্গেটে হামলা চালানো হবে এবং আরো কিছু জায়গায় রাতভর হামলা করা হবে।
তিনি আরো বলেন, বেসামরিক প্রতিষ্ঠান, অ্যাসোসিয়েশন ও এনজিওগুলোকে ব্যবহার করে ইরান কীভাবে হিজবুল্লাহর ‘সন্ত্রাসী’ কার্যক্রমে অর্থের জোগান দেয়, আগামী কয়েক দিনেট আমরা সিটি প্রকাশ করবো।
সর্বশেষ, লেবাননের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ সংস্থা এনএনএ’র খবরে বলা হয়, পূর্ব বেক্কা ভ্যালিসহ বিভিন্ন জায়গায় ব্যাংক আল কার্দ আল হাসান অ্যাসোসিয়েশনের বিভিন্ন শাখায় হামলা হয়েছে।
বৈরুতের রফিক হারিরি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছেও ব্যাংকটির একটি শাখায় হামলা হয়েছে। ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, বিমান বন্দরের কাছে বিস্ফোর ণস্থল থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, লেবানন জুড়ে ওই ব্যাংকটির ৩০টির বেশি শাখা রয়েছে। এর মধ্যে ১৫টি আছে বৈরুতের জনবহুল এলাকায়।
ইসরায়েল ওই ব্যাংকটির বিরুদ্ধে হিজবুল্লাহকে অর্থায়নের অভিযোগ এনেছে। যুক্তরাষ্ট্রও বলছে, হিজবুল্লাহর আর্থিক ব্যবস্থাপনায় ব্যাংকটি ব্যবহৃত হচ্ছে।
অন্যদিকে, হিজবুল্লাহ বলছে, রোববারেও ইসরায়েলে সামরিক ঘাঁটি লক্ষ করে রকেট হামলা চালিয়েছে তারা। দক্ষিণ লেবাননে ইসরায়েলি সেনাদের লক্ষ করে গুলি করা হয়েছে বলেও দাবি করেছেন তারা।
মাত্র চার মিনিটের ব্যবধানে ইসরায়েলে ৭০টি রকেট হামলা চালিয়েছে লেবাননের প্রতিরোধ সংগঠন হিজবুল্লাহ।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স এ দেওয়া এক পোস্টে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানায়, রোববার (২০ অক্টোবর) সকাল ১১টা ৯ মিনিট থেকে ১১টা ১২ মিনিটের মধ্যে লেবানন থেকে এ হামলা চালানো হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি আটকে দেয় সামরিক বাহিনী। বাকি রকেটগুলো বিভিন্ন জায়গায় আঘাত হেনেছে।
এতে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং কেউ হতাহত হয়েছে কিনা তা জানায়নি আইডিএফ। হিজবুল্লাহর পক্ষ থেকেও এই হামলার ব্যাপারে জানানো হয়নি কিছুই।
মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডলইস্ট আই বলছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে হামলার বেশ কয়েকটি ভিডিও। এতে দেখা যায়, এক ঝাঁক রকেট আসছে ইসরায়েলের আকাশে। এসব রকেট এসে বিভিন্ন জায়গায় পড়ে। আগুন নেভাতে আসতে দেখা যায় দমকল বাহিনীকে।
এদিকে, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বাসভবনে হিজবুল্লাহর ড্রোন হামলার পর প্রতিশোধ নিতে লেবাননের বৈরুতে বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। বার্তা সংস্থা এএফপি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, স্থানীয় সময় শনিবার বৈরুতে ইরান সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠি হিজবুল্লাহর অস্ত্রাগারে হামলা চালানো হয়েছে। একই সঙ্গে ফিলিস্তিনের গাজায় হামাস সন্ত্রাসীদের লক্ষ্য করেও হামলা চালানো হয়েছে। এতে তিনজন কমান্ডার নিহতের দাবিও করা হয়।
ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন দখলদার ইসরায়েলের ৪০১তম সাঁজোয়া ব্রিগেডের কমান্ডার কর্নেল ইহসান দাকসা।
রোববার (২০ অক্টোবর) গাজার উত্তরাঞ্চলে তিনি নিহত হন বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। এছাড়া একই হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন আরেক সেনা কর্মকর্তা।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, কর্নেল ইহসান দাকসা ট্যাংক নিয়ে গাজার উত্তরাঞ্চলের জাবালিয়ায় ছিলেন। তিনি যে ট্যাংকে অবস্থান করছিলেন সেটিসহ মোট দুটি ট্যাংকে বিস্ফোরক দিয়ে হামলা চালান হামাসের যোদ্ধারা।
সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, গাজায় স্থল হামলা চালাতে গিয়ে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর যত উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা প্রাণ হারিয়েছেন তার মধ্যে কর্নেল ইহসান অন্যতম।
৪১ বছর বয়সী ইহসান দাকসা দ্রুজ শহর দলিয়াত আল-কার্মেলের বাসিন্দা ছিলেন। গত জুনে তিনি এই ব্রিগেডের কমান্ডারের দায়িত্ব নেন। ২০০৬ সালের আয়তা আস-সাব যুদ্ধে অবদান রাখায় তাকে সম্মানিত করা হয়।
গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাস ও দখলদার ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়। এক বছরের বেশি সময় ধরে চালানো এই বর্বরতায় এখন পর্যন্ত ৪৩ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। দিন দিন এ সংখ্যা বেড়েই চলছে।
ইসরায়েল হামলা চালালে ইরান পাল্টা হামলা চালাবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে। এরই মধ্যে ইসরায়েলের সামরিক সব স্থাপনা শনাক্ত করা হয়েছে। তেল আবিব হামলা করলেই এসব লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালাবে তেহরান।
শনিবার তুর্কি টিভি চ্যানেল এনটিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি এ হুঁশিয়ারির কথা বলেন। রোববার (২০ অক্টোবর) ইরানের সংবাদ সংস্থা ইরনার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
আব্বাস আরাগচিকে উদ্ধৃতি দিয়ে ইরনা জানায়, "আমরা ইসরায়েলের সব সামরিক লক্ষ্যবস্তুকে চিহ্নিত করেছি। ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েল যেকোন পদক্ষেপ নিলে তেহরান তা দ্বিগুণ রূপে প্রতিক্রিয়া জানাবে।"
- ইরানে ইসরায়েলের হামলার পরিকল্পনার মার্কিন নথি ফাঁস
- ইসরায়েলি হামলায় হাশেম সাফিয়েদ্দিন নিহত
- লেবাননে ইসরায়েলি হামলায় হিজবুল্লাহর ৩ কমান্ডার নিহত
- নেতানিয়াহুর বাসভবনে হিজবুল্লাহর ড্রোন হামলা
- ইয়াহিয়া সিনওয়ারের মৃত্যুর প্রতিক্রিয়া জানাল ইরান
- ইসরায়েলের হামলায় হামাসের সিনিয়র কমান্ডার নিহত
ইরানের ওপর ইসরায়েলি হামলাকে ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের জন্য লাল রেখা হিসেবে বিবেচনা করা হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, “ইরানের বিরুদ্ধে যেকোনও আক্রমণের অর্থ একটি লাল রেখা অতিক্রম করা। আমরা এ ধরনের হামলার জবাবে ছাড় দিবো না। ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যেকোনো হামলা বা অনুরূপ কোনো আক্রমণের প্রয়োজনীয় জবাব দেওয়া হবে।”
তিনি আরও বলেন, ইরান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ইসরায়েলের মিত্র হিসেবে বিবেচনা করে। কারণ ইসরায়েল গাজা এবং লেবাননে আমেরিকার সরবরাহকৃত অস্ত্র ব্যবহার করে তাদের ওপর হামলা চালাচ্ছে।
"মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই যুদ্ধের সঙ্গে জড়িত। যদি এই অঞ্চলে বড় আকারের যুদ্ধ হয়, তবে তাদেরকেও এতে টেনে আনা হবে এবং আমরা এটি মোটেই চাই না"- বলেছেন আরাগচি।
উল্লেখ্য, গত ১ অক্টোবর ইসরায়েলের সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালায় ইরান। এরপর তেহরানেও পাল্টা হামলার হুমকি দেয় ইসরায়েল। তাদের এ হুমকির প্রেক্ষিতেই হুঁশিয়ারি দিয়েছে তেহরান।
প্রসঙ্গত, জুলাইয়ের শেষের দিকে তেহরানে হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়াহকে হত্যা, সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে হিজবুল্লাহ নেতা সাইয়েদ হাসান নাসরুল্লাহ এবং ইরানের সামরিক কমান্ডার আব্বাস নীলফরৌশানকে হত্যার প্রতিশোধ হিসেবে ইরান এই অভিযান পরিচালনা করে।
ইরান বলছে, তারা ইসরায়েলের আগ্রাসনের বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃঢ় প্রতিক্রিয়ার অভাবে এই অভিযান চালাচ্ছে।