জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আগ্নেয়গিরির দ্বীপে ঘোড়া উদ্ধার

  • মাজেদুল নয়ন,স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ঘোড়াগুলোর পুড়ে যাওয়া স্থান পরিষ্কার করা হচ্ছে/ ছবি: সংগৃহীত

ঘোড়াগুলোর পুড়ে যাওয়া স্থান পরিষ্কার করা হচ্ছে/ ছবি: সংগৃহীত

ঘোড়াগুলোকে যখন নৌকা থেকে নামানো হচ্ছিল, তখনো তাদের শরীরে চামড়ায় পোড়া ক্ষত স্থান। সেখানে লেগে রয়েছে ছাই। সরকারি বাধা উপেক্ষা করে তাল আগ্নেয়গিরির উপত্যকায় যাচ্ছেন ঘোড়ার মালিকরা এবং উদ্ধার করার চেষ্টা করছেন,‘নো ম্যানস ল্যান্ড’ থেকে।

নৌকা থেকে নামিয়ে আহত ঘোড়াগুলোর পুড়ে যাওয়া স্থানে পানি দিচ্ছেন এবং ভেষজ মলম দিচ্ছেন মালিকরা। ঘোড়াগুলোর মতই যেন যন্ত্রণা পাচ্ছেন তাদের ওপর নির্ভরশীল মালিকরা।

বিজ্ঞাপন
আগ্নেয়গিরিটি বিপজ্জনক হয়ে উঠছে/ ছবি: সংগৃহীত

এই ঘোড়ার মালিকরা হচ্ছেন এই দ্বীপের ক্ষুদ্র ট্যুরিস্ট অপারেটর। এই ঘোড়াগুলো আগ্নেয়গিরির উপত্যকায় পর্যটকদের নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। সুইপিং লেকের তীরে এবং উপত্যকায় ঘোড়ায় ঘুরে বেড়ানো এখানে পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ।

কিন্তু গত রোববার তাল আগ্নেয়গিরি বিস্ফোরিত হলে এখানকার বাসিন্দারা তাদের মূল্যবান এসব গৃহপালিত প্রাণী এবং সব সম্পদ রেখে দ্রুত দ্বীপ ত্যাগ করেন এবং সরকার অঞ্চলটিকে ‘নো ম্যানস ল্যান্ড’ হিসেবে জারি করে।

৬২ বছর বয়সী আলফ্রেড দায়েতের ৪টি ঘোড়া ছিল। তিনি উপত্যকায় গিয়ে ৩টি ঘোড়া খুঁজে বের করে এনেছেন। আলফ্রেড বলেন, আমাদের ঘোড়াগুলোই আমাদের জীবন। তাদের মাধ্যমেই আমরা আমাদের জীবিকা নির্বাহ করি। আমরা আমাদের ঘোড়াগুলোকে ভালবাসি এবং এই কারণেই তাদের রক্ষা করতে চাই।

এই ঘোড়াগুলো তাদের প্রতিটি ট্রিপে ৭ ডলার বা প্রায় ৬০০ টাকা আয় করে। অথচ ফিলিপাইনে লক্ষাধিক মানুষ রয়েছেন, যাদের দৈনিক আয় ২ ডলারের নিচে। অগ্নুৎপাতে দ্বীপের গরু-ছাগলসহ অসংখ্য প্রাণীর মৃত্যু হয়েছে।

এখনই দ্বীপে ফিরে যাওয়ার অবস্থা নেই মানুষের। দ্বীপটিতে আগ্নেয়গিরির ছাইয়ের স্তূপ পড়েছে। তবে নিজেদের প্রিয় পশু এবং রেখে আসা সম্পদের জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাচ্ছেন অনেকে। কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে দ্বীপে না যেতে সতর্ক করে জানিয়েছে, যে কোনো সময়ই বড় ধরনের বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। তারপরও স্থানীয়রা দল বেঁধে নির্দেশ উপেক্ষা করে দ্বীপে যাচ্ছেন।

ছাইয়ে ঢাকা পড়েছে দ্বীপটির পথ-ঘাট/ ছবি: সংগৃহীত 

পেজা মাগপানতের নামে একজন ক্ষুদ্র পর্যটক অপারেটরের পরিবার তাদের ১৪টি ঘোড়ার মধ্যে এগারোটিকে রক্ষা করতে পেরেছে। তিনি বলেন, আমরা যদি ঘোড়াগুলোকে মরতে দিই, একসময় আমাদেরও মারা যেতে হবে।

এরই মধ্যে স্থানীয়রা ভূমিকম্প এবং অগ্নুৎপাতের মধ্যেও নিজেদের এলাকায় ফিরে যাওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছেন। এদিকে সরকারের আগ্নেয়গিরি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাল স্থায়ীভাবেই একটি বিপদজনক এলাকা হিসেবে পরিণত হয়েছে।

পূর্ববর্তী একটি আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণ থেকেই এই তাল আগ্নেয়গিরিকে ঘিরে ২৩ বর্গ কিলোমিটারের একটি লেক তৈরি হয়েছে। এই সব কিছু মিলিয়েই এই স্থানটি ফিলিপাইনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্যটন স্থানের মধ্যে একটি।

অবশ্য তাল আগ্নেয়গিরির ইতিহাসে রয়েছে ১২টিরও বেশি বিস্ফোরণের ঘটনা। সবচেয়ে বড় বিস্ফোরণ হয়েছিল ১৯১১ সালে, সে সময় প্রায় ১৩০০ মানুষের মৃত্যু হয়। এবং অগ্লুৎপাতের ছাই ম্যানিলা পর্যন্ত ভেসে এসেছিল। এরপর ১৯৭৭ সালেও একটি বড় বিস্ফোরণ ঘটে।

ফিলিপাইনের প্রতিরক্ষা সচিব ডেলফিন লোরেঞ্জানাও বলেছেন, আমি পরামর্শ দিচ্ছি তাল’কে নো ম্যানস ল্যান্ড হিসেবে ঘোষণা দেয়ার জন্য।