ভারতের উত্তর প্রদেশের প্রয়াগরাজে মহাকুম্ভ মেলা শুরু

  • আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

ভারতের উত্তর প্রদেশ রাজ্যের প্রয়াগরাজে (সাবেক এলাহাবাদ) শুরু হয়েছে ৪৫ দিনব্যাপী মহাকুম্ভ মেলা। ১২ বছর পরপর এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ ২০১৩ সালে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেবার ১০ কোটি পুণ্যার্থীর সমাগম হয়েছিল।

কুম্ভ মেলায় যোগ দিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পুণ্যার্থীরা প্রয়াগরাজে এসে জড়ো হচ্ছেন। ধারণা করা হচ্ছে এবার ৪০ কোটি পুণ্যার্থী মেলায় আসবেন। অ্যাপলের প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবসের স্ত্রী লরেন পাওয়েল মহাকুম্ভ উপলক্ষে ভারতে এসেছেন। প্রয়াগে যমুনা-গঙ্গা ও সরস্বতি নদীর সঙ্গমস্থলে নিরঞ্জনী আখড়ার তাঁবুতে বাস করছেন।

বিজ্ঞাপন

প্রতি এক যুগ পরপর এই মেলাটি অনুষ্ঠিত হয়। সোমবার (১৩ জানুয়ারি) থেকে শুরু হয়ে ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই মেলা চলবে। ভারতের সবচেয়ে পবিত্র নদী খ্যাত গঙ্গার সঙ্গে যমুনা এবং সরস্বতী নদীর সংযোগস্থলে গোসল করার উৎসবই কুম্ভ মেলার উদ্দেশ্য। সনাতন ধর্মালম্বীদের বিশ্বাস অনুযায়ী এ সময়ে এ তিন নদীর সঙ্গমস্থলে গোসল করলে পাপমোচন হয়, আত্মা বিশুদ্ধ হয় ও জন্ম-মৃত্যুর চক্র থেকে মুক্তি লাভ করা যায়।

মেলা উপলক্ষ্যে প্রয়াগরাজ শহরটিকে উৎসবের সাজে সাজানো হয়েছে। কর্মকর্তারা বলেছেন, প্রায় ২০০ রাস্তা চওড়া করা হয়েছে, নতুন করে ৬৫০ কিলোমিটার রাস্তা তৈরি করা হয়েছে এবং স্নানের মূল স্থান সঙ্গমের দিকে যাওয়া সড়কের দুই পাশের দেয়ালে নতুন রঙের প্রলেপ দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে দেয়ালগুলোতে হিন্দু পৌরাণিক কাহিনীর গল্প তুলে ধরে রঙিন চিত্রকলা এবং ম্যুরাল তৈরি করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

ভক্তদের আশ্রয় দিতে ৪ হাজার হেক্টর এলাকাজুড়ে ১ লাখ ৬০ হাজার তাঁবু খাটানো হয়েছে। পুরো মেলার কার্যক্রম তদারক করতে ৪০ হাজার পুলিশ ও নিরাপত্তাকর্মী, ১৫ হাজার পরিচ্ছন্নতাকর্মী মোতায়েন করা হয়েছে। ৯৯টি পার্কিং লট তৈরি করা হয়েছে, যেখানে ৫ লাখ গাড়ি রাখা যাবে। এ ছাড়া, ৩০টি ভাসমান সেতু তৈরি করা হয়েছে যাতায়াতের সুবিধার জন্য।

এ ছাড়া, ৬৭ হাজার ল্যাম্পপোস্ট, দেড় লাখ টয়লেট, ২৫ হাজার ডাস্টবিন, ২০০টি ভাসমান পানির বুথ এবং ৮৫টি নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে। ভারত সরকার জানিয়েছে, তারা উৎসবটি আয়োজনের জন্য ৭ হাজার কোটি রুপি ব্যয় করছে। স্থানীয় গণমাধ্যমের খবর অনুসারে, এই মেলা থেকে রাজ্য সরকার ২৫ হাজার কোটি রুপি রাজস্ব উপার্জন করবে।

এই মহাকুম্ভ মেলার সূত্রপাত মূলত একটি পৌরাণিক কাহিনীর মাধ্যমে। কাহিনী অনুসারে, সমুদ্র মন্থনের ফলে সৃষ্ট এক কুম্ভ বা পেয়ালা অমৃতের জন্য দেবতা ও অসুরেরা লড়াই করেছিলেন এখানে। যুদ্ধের সময় কুম্ভ থেকে অমৃতের চারটি ফোঁটা পড়ে প্রয়াগরাজ, হরিদ্বার, উজ্জয়নী ও নাসিক শহরে।

পুরাণ অনুসারে, এই দেবতা ও অসুরদের মাঝে এই যুদ্ধটি চলেছিল ১২ স্বর্গীয় দিন ধরে। এই ১২ স্বর্গীয় দিন পৃথিবীর ১২ বছরের সমান হিসেবে ধরে প্রতি এক যুগ পরপরও এই চার শহরে কুম্ভ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। দুই উৎসবের মধ্যে আধ কুম্ভ বা অর্ধকুম্ভ মেলাও অনুষ্ঠিত হয়।

এ মেলার বিশেষ আকর্ষণ নাগা সন্ন্যাসীরা স্নান। সবচেয়ে বড় সমাবেশটি হতে পারে ২৯ জানুয়ারি। এদিন, ৫ থেকে ৬ কোটি স্নান করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

পুণ্যার্থীদের সুবিধার্থে এখানে অসংখ্য অস্থায়ী হাসপাতাল, ওষুধের দোকান, খাবার দোকান, পুরুষ ও নারীদের জন্য পৃথক দেড় লাখ শৌচালয়, স্নানের ঘাট, নিরাপত্তারক্ষী—সব বন্দোবস্ত রাখা হয়েছে। স্নানের এলাকা ঘিরে ফেলা হয়েছে, যাতে সেই ঘেরা এলাকার বাইরে কেউ যেতে না পারে। ঘেরাটোপের বাইরে রাখা হয়েছে ওয়াটার স্কুটারসহ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ডুবুরি ও উদ্ধারকর্মীদের, কেউ ডুবে গেলে বা ভেসে গেলে যাতে দ্রুত উদ্ধার করা যায়।