গত বছরের নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জিতে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার অজুহাত তুলে গ্রিনল্যান্ড কিনতে ইচ্ছা ব্যক্ত করেন আমেরিকার নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ডেনমার্ক এটি বিক্রি করতে রাজি না হলে সামরিক হস্তক্ষেপের কথা উড়িয়ে দেননি তিনি।
গত তিনশ বছর ধরে বিশ্বের বৃহত্তম দ্বীপ গ্রিনল্যান্ডের উপর ডেনমার্কের আধিপত্য আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। ৫৬ হাজার জনসংখ্যার এ দ্বীপটি ডেনমার্কের একটি স্বশাসিত অঞ্চল।
এবারই প্রথম ট্রাম্প গ্রিনল্যান্ড কেনার ইচ্ছা ব্যক্ত করেননি। ২০১৯ সালে প্রথম বার প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন ট্রাম্পকে গ্রিনল্যান্ড কেনার কথা বলতে শোনা গিয়েছিল।
এছাড়াও ১৯৪৬ সালে একবার গ্রিনল্যান্ড কেনার প্রস্তাব দিয়েছিল আমেরিকা। ওই সময়ে ১০ কোটি ডলারের সোনার ডেনমার্ককে দিতে চেয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। বর্তমানে ওই টাকার অংক ১৬০ কোটি ডলারের বেশি দাঁড়াবে বলে জানিয়েছে ডেইলি মেইল।
১৫৭ বছর আগে ১৮৬৭ সালে রাশিয়ার কাছ থেকে ৭২ লক্ষ ডলারে আলাস্কা কিনে নিয়েছিল আমেরিকা। বর্তমানে তার মূল্য দাঁড়িয়েছে ১৫ কোটি ৩৫ লক্ষ ডলার। আমেরিকার উত্তরে এবং কানাডার পশ্চিম প্রান্তে ৫ লক্ষ ৮৬ হাজার ৪১২ বর্গ মাইল এলাকা জুড়ে আলাস্কার অবস্থান। আয়তনের নীরিখে আলাস্কার চেয়ে গ্রিনল্যান্ড অনেকটাই বড়। এর আয়তন প্রায় ৮ লক্ষ ৩৬ হাজার বর্গ মাইল।
আমেরিকা শুধু যে আলাস্কায় কিনে ছিল তা কিন্তু নয়। এর আগে ১৯১৭ সালে ডেনমার্কের কাছ থেকে ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জ কিনেছিল ওয়াশিংটন। এর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের থেকে কোপেনহেগেন পেয়েছিল আড়াই কোটি ডলারের সোনা। বর্তমানে এর বাজারমূল্য প্রায় ৬১ কোটি ৬২ লক্ষ ডলার।
১৮০৩ সালে একই ভাবে ফ্রান্সের থেকে লুসিয়ানা ক্রয় করে যুক্তরাষ্ট্র। সেবার ওয়াশিংটনের খরচ হয়েছিল দেড় কোটি ডলার মূল্যের সোনা। আজকের দিনে যা প্রায় ৪১ কোটি ৮৮ লক্ষ ডলার।
সংবাদ সংস্থা ডেইলি মেইলের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত শতাব্দীর ষাটের দশকে যে টাকায় যুক্তরাষ্ট্রের সরকার আলাস্কা কিনেছিল, বর্তমানে তার মূল্য দাঁড়িয়েছে ১৫ কোটি ৩৫ লক্ষ ডলার। অন্যদিকে গ্রিনল্যান্ডের আয়তন প্রায় ৮ লক্ষ ৩৬ হাজার বর্গ মাইল। আলাস্কার চেয়ে এর দর ৫০ শতাংশ বেশি হলে ওয়াশিংটনকে দিতে হবে আনুমানিক ২৩ কোটি ২ লক্ষ ৫০ হাজার ডলার। যদিও আর্থিক বিশ্লেষকদের মতে, গ্রিনল্যান্ড কেনার প্রকৃত খরচ স্পষ্টভাবে বলা সম্ভব নয়।
আর এসব হিসেব নিকেশ তখনই আসবে যদি ডেনমার্ক সত্যি সত্যিই গ্রিনল্যান্ড বিক্রিতে রাজি হয়। কিন্তু তা আপাতদৃষ্টিতে কোনভাবেই সম্ভব না কেননা ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডারিকসেন গ্রিনল্যান্ড বিক্রির কথা নাকচ করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘গ্রিনল্যান্ড বিক্রির জন্য নয়। গ্রিনল্যান্ড ডেনমার্কেরও নয়। গ্রিনল্যান্ড হল গ্রিনল্যান্ডবাসীদের।’