ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিরোধী প্রার্থীকে গ্রেফতারের চেষ্টা চালাচ্ছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। বিরোধী ঐ প্রার্থীর নাম এডমান্ডো গঞ্জালেজ উরুতিয়া। তাকে গ্রেফতার করতে এবং তাঁর সম্পর্কিত তথ্য চেয়ে ১ লাখ ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছে দেশটির কর্তৃপক্ষ।
বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) এই পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। এত দিন স্পেনে নির্বাসিত থাকা এ নেতা এখন আর্জেন্টিনার পথে আছেন। সংবাদ সংস্থা এএফপি’র বরাত দিয়ে এই খবর প্রকাশ করছে একাধিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম।
এদিকে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া পোস্টে গঞ্জালেজ উরুতিয়া লিখেছেন, ‘লাতিন আমেরিকায় আমাদের ভ্রমণ শুরু হলো। প্রথম স্টপেজ: আর্জেন্টিনা।আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের একটি সূত্র এএফপিকে বলেছে, আগামী কয়েক ঘণ্টার মধ্যে উরুতিয়া বুয়েন্স এইরেসে পৌঁছাবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
গঞ্জালেজ উরুতিয়া দাবি করে আসছেন, গত জুলাইয়ে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তিনি ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরোকে পরাজিত করেছেন। এক্সে একটি বিবৃতিতে তিনি জানান, আগামীকাল শনিবার আর্জেন্টিনার নেতা জেভিয়ার মিলেইর সঙ্গে দেখা করবেন উরুতিয়া। পাশাপাশি আর্জেন্টিনার প্লাজা দে মায়ো চত্বরে সমবেত হতে ভেনেজুয়েলার নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
অনুগত সামরিক বাহিনীর সমর্থনে নতুন মেয়াদে আগামী ১০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট হিসেবে মাদুরোর শপথ নেওয়ার কথা। তবে ৭৫ বছর বয়সী উরুতিয়া দেশে ফিরে মাদুরোর জায়গায় তিনিই প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন বলে প্রতিজ্ঞা করেছেন।
ভেনেজুয়েলার পুলিশ গতকাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাবেক এই কূটনীতিকের একটি ছবি প্রকাশ করেছে। ছবির নিচে ‘ওয়ান্টেড’ শব্দটি লেখা আছে। ছবি–সংবলিত পোস্টারটি সারা দেশের বিমানবন্দর এবং পুলিশের তল্লাশি চৌকিতে দেখানো হবে বলে এএফপিকে নিশ্চিত করেছে দেশটির বিচার বিভাগীয় সূত্র ।
জুলাইয়ে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে মাদুরোকে তৃতীয় মেয়াদে ছয় বছরের জন্য বিজয়ী ঘোষণা করেছিল ভেনেজুয়েলা কর্তৃপক্ষ। তবে তা প্রত্যাখ্যান করে বিরোধীরা। বিরোধীদের দাবি, তাদের কাছে ভোট কেন্দ্রের বিস্তারিত হিসাব আছে। আর সে সংখ্যা অনুযায়ী গঞ্জালেজ উরুতিয়াই নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন।
এমন অবস্থায় ভোটের প্রকৃত ফল প্রকাশের জন্য ভেনেজুয়েলার সরকারের ওপর দেশ-বিদেশ থেকে তীব্র চাপ তৈরি হয়। তবে সরকার সেসব চাপ প্রতিহত করেছে।
নির্বাচনের পর ভেনেজুয়েলার সড়কে ছড়িয়ে পড়ে বিক্ষোভ । এই বিক্ষোভে ২৮ জন নিহত এবং ২০০ জন আহত হয়েছে। গ্রেফতার হয়েছে ২ হাজার ৪০০-এর বেশি মানুষ। এছাড়াও কারাগারে কমপক্ষে তিনজন বন্দী মারা গেছেন। আর গ্রেফতার হওয়াদের মধ্য থেকে প্রায় ১ হাজার ৪০০ জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ, গত জুলাইয়ে ভেনেজুয়েলায় অনুষ্ঠিত নির্বাচনে মাদুরো বিজয় দাবি করেন। নির্বাচনের পরপরেই দেশটির ভিন্নমতাবলম্বীদের ওপর কঠোর দমন-পীড়ন শুরু হয়। এরপর গত সেপ্টেম্বরে বিরোধীদলীয় প্রার্থী গঞ্জালেজ উরুতিয়া স্পেনে পালিয়ে যান। ভেনেজুয়েলা কর্তৃপক্ষ উরুতিয়ার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও তাণ্ডব চালানোর অভিযোগ আনার পর গত ২০ ডিসেম্বর স্পেন তাঁকে আনুষ্ঠানিকভাবে আশ্রয় দেয়।
