ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলের সর্বশেষ কার্যকারিতা সম্পন্ন কামাল আদওয়ান হাসপাতালে অভিযান চালিয়েছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। এ সময় হাসপাতালের পরিচালক এবং অন্যান্য কর্মীদের গ্রেফতার করে জোরপূর্বক খালি করে দিয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, কমল আদওয়ান হাসপাতাল "এখন খালি" বাকি রোগীদের মধ্যে কিছু গুরুতর অসুস্থ - কেয়ারগিভার এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের সাথে বেইট লাহিয়ার ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। এই অভিযানের মধ্য দিয়ে উত্তর গাজার শেষ হাসপাতালটির কার্যক্রমও বন্ধ হয়ে গেলো।
কামাল আদওয়ানের পরিচালক ড. হুসাম আবু সাফিয়া এবং অন্যান্য কর্মীরা কোথায় আছেন তা স্পষ্ট নয় বলে সিএনএনকে জানিয়েছেন তার বন্ধু ও সহকর্মীরা।
কামাল আদওয়ান হাসপাতালের একজন নার্স রাউইয়া আল বাতশ সিএনএনকে বলেছেন, আমরা ডাঃ হুসামের ভাগ্য জানি না। তিনি হাসপাতালে পৌঁছানোর সাথে সাথেই সেনাবাহিনীর দ্বারা তাকে হুমকি দেওয়া হয়েছিল।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী শনিবার স্বীকার করেছে যে তারা ডক্টর আবু সাফিয়াকে আটক করেছে এবং বলেছে যে তাকে "হামাস সন্ত্রাসী অপারেটিভ বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।"
কামাল আদওয়ান হাসপাতালের নার্সিং বিভাগের প্রধান ঈদ সাব্বাহ বিবিসিকে বলেন, শুক্রবার সকাল ৭টার দিকে সেনাবাহিনী তাদের হাসপাতালে রোগী ও কর্মীদের সরিয়ে নিতে প্রশাসনকে ১৫ মিনিট সময় দেয়।
পরে ইসরায়েলি সেনারাই হাসপাতালে প্রবেশ করে বাকি রোগীদের সরিয়ে দিয়েছে বলে জানান তিনি।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী শুক্রবার বিকেলে জানিয়েছে, তারা হাসপাতাল এলাকায় অভিযান চালাচ্ছে। তারা 'হাসপাতালকে হামাসের শক্ত ঘাঁটি' বলে অভিহিত করেছে।
বিবিসি লিখেছে, অভিযান শুরুর আগে ইসরায়েলি সেনারা হাসপাতাল থেকে বেসামরিক, রোগী ও চিকিৎসাকর্মীদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করে। তবে রোগীদের কোথায় নিয়ে যাওয়া হবে তা জানায়নি সেনাবাহিনী।
চিকিৎসক সাব্বাহ বলেন, “এটি বিপজ্জনক কারণ অনেক রোগী কোমায় রয়েছেন। তাদের ভেন্টিলেশন মেশিনের প্রয়োজন হয়। মুমূর্ষু রোগীদের স্থানান্তরিত করা খুবই বিপদজনক।
“সেনাবাহিনী যদি এসব রোগীকে সরিয়ে নিতে চায়, তাহলে তাদের বিশেষায়িত গাড়ির প্রয়োজন হবে”, বলেন তিনি।
তার কিছুক্ষণ পর গাজার উপ-স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইউসুফ আবু-আল রিশ বিবিসিকে বলেন, “আশঙ্কাজনক অবস্থায় রোগীদের ইন্দোনেশিয়ার একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।”
তিনি বলেন, “ঠিক হাসপাতাল বলা যায় না। এটি একটি আশ্রয়স্থল। রোগীদের জন্য প্রস্তুত নয়।"
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) আন্তর্জাতিক মুখপাত্র নাদাভ শোশানি শুক্রবার সন্ধ্যায় এক্স পোস্টে বলেন, "প্রাথমিক তদন্ত অনুযায়ী, অভিযানের সময় হাসপাতালের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বিভাগ মারাত্মকভাবে পুড়ে গেছে।”
আইডিএফ সৈন্যরা যখন হাসপাতালের ভিতরে ছিল না তখন আগুন লাগে জানিয়ে তিনি বলেন, “প্রাথমিক তদন্তে আইডিএফের ক্রিয়াকলাপের সঙ্গে আগুনের কোনও সংযোগ পাওয়া যায়নি।”
এর কয়েক ঘণ্টা আগে কামাল আদওয়ান হাসপাতালের পরিচালক জানান, হাসপাতালের আশপাশের এলাকা লক্ষ্য করে চালানো ইসরায়েলি বিমান হামলায় পাঁচ মেডিকেল স্টাফসহ প্রায় ৫০ জন নিহত হয়েছেন।
হুসাম আবু সাফিয়ার বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হাসপাতালের বিপরীতে একটি ভবন লক্ষ্য করে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান হামলা চালায়। এতে একজন শিশু বিশেষজ্ঞ ও ল্যাব টেকনিশিয়ান ও তাদের পরিবার নিহত হয়।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে এই স্থাপনাটি ঘন ঘন ইসরায়েলি অগ্নিসংযোগের আওতায় এসেছে এবং এটি বন্ধ করা উত্তর গাজায় একটি ভয়ানক মানবিক পরিস্থিতিকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।