খাবারের সন্ধানে গাজার ক্ষুধার্ত পরিবারের শিশুরা

  • আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

১১ বছর বয়সী মোহাম্মদ জোরাব। বাবা, বোন আর অসুস্থ মাকে নিয়ে জোরাবের পরিবার। একটি প্লাস্টিকের বাটি নিয়ে প্রতিদিন দক্ষিণ গাজার শহর রাফাহতে খাবার খুঁজতে যায় জোরাব। উদ্বাস্তু কেন্দ্রে পরিণত হওয়া স্কুলগুলোতে খাবারের সন্ধানে যায় সে। কখনও প্রতিযোগিতার লাইন ধরে, কখনও সে লাইন ভেঙে অন্যদের আগে সে খাবার সংগ্রহের আশায় থাকে সে। তার চোখে তখন ক্ষুধার্ত মা-বাবা আর ভাই-বোনদেরই ছবি!

মোহাম্মদ যখন এই খাবার নিয়ে পরিবারের কাছে ফিরে যায়, তখন তার পরিবারের বাকি সদস্যরা খুব খুশি হয় এবং সবাই মিলে একসাথে খায়। কখনও কখনও খালি হাতে ফিরতে হয় বলে অনেক দুঃখও প্রকাশ করে জোরাব। 

বিজ্ঞাপন

উল্লেখ্য, মোহাম্মদ চার সন্তানের মধ্যে বড়। প্লাস্টিক এবং টারপলিন দিয়ে ঘেরা একটি ক্ষীণ আশ্রয়ে মা-বাবা এবং তার ভাইবোনদের সাথে থাকে জোরাব। বাড়িতে ফিরে সে তার মা সমরের হাতে সেঁকানো মটরশুটির বাটি তুলে দেয়। তিনি অন্য শিশুদেরও খাবার বিতরণ করেন। জোরাবের মতো আরও অনেকে খাবারের জন্য মানুষের সিরিয়ালে দাঁড়ায়। একটু খাবারের আশায় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা।

জোরাবের মতো অনেক শিশুরাই এখন খাবার সংগ্রহের মাধ্যম হয়ে উঠেছে। ছোট ছোট এ বাচ্চারা খাবার সংগ্রহ করে সে খাবার তুলে দিচ্ছে পরিবারের স্বজনদের মুখে।

বিজ্ঞাপন

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় চলমান সংঘাত ও অস্থিরতার মাঝে প্রতিনিয়ত খাবারের অভাব ভোগ করছেন সাধারণ জনগণরা। এখানে শুধু বেঁচে থাকাই যেন গর্ব করার মতো বিষয়।

সোমবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বৃটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, জাতিসংঘের (ইউএন) মতে, গাজার প্রায় ৯৫ শতাংশ মানুষ উদ্বাস্তু জীবনযাপন করছে। এদের জন্য প্রতিদিন অন্তত পাঁচশ ট্রাক ত্রাণ সহায়তা প্রয়োজন। বিশেষ করে উত্তর গাজার পরিস্থিতি বেশি ভয়াবহ বলে মন্তব্য করেছে জাতিসংঘ।

ইসরায়েল বলেছে, জাতিসংঘ উত্তর গাজায় সাহায্য সরবরাহে ব্যর্থ হচ্ছে এবং সাহায্যের একটি সরবরাহ গাজা সীমান্তে প্রবেশের অপেক্ষায় আছে। তবে নিরাপত্তাজনিত কারণে প্রবেশের অনুমতি নেই।

এদিকে উত্তর গাজায় খাদ্য সহায়তার চলাচলও স্থগিত করেছে সংগঠনটি। কারণ এই এলাকাটিতেও ট্রাক চালকদের জন্যও কোন সুরক্ষা নেই। তারা অপরাধী চক্রের আক্রমণ এবং লুটপাটের মুখোমুখি হয়েছে।

আমেরিকাভিত্তিক দাতব্য সংস্থা পাওস প্রজেক্টস অফ আমেরিকার ফুটন্ত শিমের হাঁড়ির কাছেই মোহাম্মদ দাঁড়িয়ে ছিল। এখান থেকেই পরিবারের জন্য খাবার নেয় সে। এখানে শরণার্থীদের এতোই ভিড় যে, খাবার সংগ্রহ করাও রীতিমতো চ্যালেঞ্জিং বিষয়।

পাওস প্রজেক্টস অফ আমেরিকার মাহমুদ আল-কুইশাভি বলেন, ‘আমরা প্রতিদিন অক্লান্তভাবে চেষ্টা করছি বেসমরিকদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়াতে। আমরা তাদের সাথে আছি। আমরা তাদেরকে একা হতে দেব না।’

অন্যদিকে, উত্তর গাজার আল-শিফা মেডিক্যাল কমপ্লেক্সের একজন ডাক্তার বলেছেন,  তিনি মাহমুদ ফাতুহ নামে দুই মাস বয়সী একটি ছেলের চিকিৎসা করেছিলেন। হাসপাতালে পৌঁছানোর পরেই সে মারা যায়।

ডা. আমজাদ আলিওয়া বলেন,  এই শিশুটিকে দুধ খাওয়ানো সম্ভব হয়নি। তার মা পুষ্টিহীনতাজনিত কারণে তাকে বুকের দুধ খাওয়াতে পারেননি। তাই গুরুতর ডিহাইড্রেশনের কারণে মৃত্যু হয় তার।

সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় গাজা উপত্যকায় এখন দুর্ভিক্ষ বিরাজ করছে। বাধ্য হয়ে উদ্বাস্তু পরিবারগুলো তাদের সন্তানদের মাধ্যমে বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করাচ্ছে ন্যূনতম খাবার। কোনো কোনো দিন সেটিও মিলছে না তাদের। কাটাতে হচ্ছে মানবেতর জীবনযাপন।