খাবার জোগাতে আফগানিস্তানে বিক্রি হচ্ছে কন্যাশিশু!

  • আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

অর্থনৈতিক সংকট তৈরির কারণে মর্মান্তিক বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে আফগান নাগরিকদের। দেশটিতে দুমুঠো খাবার জোগাতে বিক্রি হচ্ছে আদরের সন্তান।

সম্প্রতি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, আফগানিস্তানে খাবার জোগাতে কন্যাশিশুকে ৫০০ ডলারে বিক্রি করলেন বাবা। ৯ বছর বয়সী ছোট শিশুটির নাম পারওয়ান মালিক। ধূসর চোখের শিশুটির দিন কাটে বন্ধুদের সাথে খেলাধুলা করে। খেলা শেষে ঘরে ফিরতেই মুখের লাজুক হাসি যেন মলিন হয়ে যায়। জানতে পারে বধূ হিসেবে ৫৫ বছর বয়সী ‘এক বুড়োলোক’ তাকে কিনে নিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলেই মানুষ এমন মর্মান্তিক সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়। অর্থ সংকট এবং খাদ্যের অভাবে নিরুপায় পারওয়ানের পরিবার। কোনো উপায় না পেয়ে বাধ্য হয়ে নিজের কন্যাকে বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। চার বছর ধরে আফগানের একটি বাস্তুচ্যুত শিবিরে বসবাস করছে পরিবারটি। মানবিক ত্রাণের ওপর নির্ভর করে পরিবারটি টিকে আছে। গত ১৫ আগস্ট তালেবান গোষ্ঠী ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকে শিবিরবাসীদের অবস্থা দিন দিন নাজেহাল হয় যাচ্ছে।

আফগানিস্তানে আন্তর্জাতিক সহায়তা বন্ধ হওয়ার পর থেকে রীতিমতো খাবারের প্রয়োজন মেটাতে হিমিশিম খেতে থাকে পরিবারটি। জমি, ভেড়া এবং নিজের কন্যাকে বিক্রি করে পারওয়ানের বাবা পেয়েছেন দুই লাখ আফগানি মুদ্রা। ছোট শিশু পারওয়ানকে বিক্রির কয়েক মাস আগে তার ১২ বছর বয়সী বোনকেও বিক্রি করেছে তাদের পরিবার। বিষয়টি শুধুমাত্র একটি পরিবারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। পরিস্থিতি নাজুক হওয়ায় আফগানিস্তানে বহু কন্যা শিশুকে বিয়ের নামে বিক্রি করে দিচ্ছে তাদের পরিবার। বাধ্য হয়ে তাদের নিতে হচ্ছে এমন হৃদয় বিদারক সিদ্ধান্ত।

গত ২২ অক্টোবর সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নিজের মনের আশঙ্কা জানিয়েছে পারওয়ান। ছোট শিশু পারওয়ানের মতে, তাকে কিনে নেওয়া লোকটি ‘বুড়ো লোক’। তার চুল-দাঁড়ি পেকে গেছে। সে ভয় পাচ্ছে লোকটি তাকে বাসায় নিয়ে যাওয়ার পর কাজ করাবে এবং মারধর করবে।

এদিকে পারওয়ানের বাবা আব্দুল মালিক জানান, তাদের পরিবারে সদস্যের সংখ্যা আটজন। নিজের কন্যার জন্য অনুশোচনা হয় তার। রাতে ঘুমাতে পারেন না তিনি। কিন্তু কোনো পথ না পেয়ে তিনি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কাজের জন্য অনেক ঘুরেছেন তিনি, এমনকি আত্মীয়-স্বজনের কাছে পর্যন্ত হাত পেতেছেন। এমনকি তার স্ত্রী ভিক্ষাও চেয়েছেন। তাই কোনো উপায় না পেয়ে এবং পরিবারের বাকি সদস্যদের ক্ষুধার যন্ত্রণা থেকে বাঁচাতে এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন। এরই সাথে জানিয়েছেন যেই অর্থ পেয়েছেন তা দিয়ে হয়তো কয়েকমাস চলতে পারবে তাদের পরিবার।

এদিকে আফগানিস্তানের বাগদিস প্রদেশের মানবাধিকার কর্মী নাইম নাজিম বলেন, দিন দিন সন্তান বিক্রি করে দেওয়া পরিবারের সংখ্যা বাড়ছে। খাদ্যের অভাব, কাজের অভাবে এগুলো করতে বাধ্য হচ্ছে এসব পরিবার। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার অবনতির দিকে যেতে থাকলে এমন শিশু বিক্রির সংখ্যা আরও বাড়তে থাকবে বলে আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে।