সৈন্য প্রত্যাহারের পর আফগানিস্তানের হালচাল

  • মহিউদ্দিন আহামেদ, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

ইরাক বা সিরিয়ার মত সুখকর হলো না বিষয়টা। শত্রুরাও বিনাশ হলো না, আবার জয়টাও ধরা দিল না, এমন পরিস্থিতিতে প্রায় ২০ বছরের যুদ্ধের ইতি টেনে অবশেষে তল্পিতল্পা ঘুটিয়ে আফগানিস্তানকে বিদায় জানাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো। অবশ্য এছাড়া আর উপায়ও ছিল না। পাওনা থেকে দেনার পরিমাণ হয়ে যাচ্ছিলো মাত্রা ছাড়া। এমন পরিস্থিতিতে নানান গালগপ্প ছড়িয়ে সৈন্য প্রত্যাহার ছাড়া আর কিইবা করার ছিল যুক্তরাষ্ট্রের?

বিদেশি সৈন্য প্রত্যাহারের পর কেমন চলছে আফগানিস্তান? আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে নিয়মিতই প্রচার হচ্ছে সে সব খবর। বার্তা২৪.কম এর পাঠকদের জন্য সেসব সংকলিত খবরের আলোকেই তৈরি করা হয়েছে এই প্রতিবেদন।

বিজ্ঞাপন

২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে বিদেশি সৈন্যরা প্রায় যুদ্ধ করেই ক্ষমতাচ্যুত করে ইসলামপন্থী তালেবান সরকারকে। তারপর সেখানে প্রতিষ্ঠিত করা হয় গণতন্ত্র এবং বসানো হয় জনগণের সরকার। যদিও স্থানীয় মানুষজন সেটাকে যুক্তরাষ্ট্রের আজ্ঞাবহ সরকার হিসেবে বলে থাকেন। ক্ষমতার পালাবদলে তালেবানরা হয়ে যায় বিদ্রোহী। যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো সৈন্যদের সাথে শুরু হয় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। শেষ পর্যন্ত রণেভঙ্গ দিতে বাধ্য হয় যুক্তরাষ্ট্র।

আফগানিস্তান থেকে বিদেশি সৈন্য প্রত্যাহার শুরুর পর আবারও একের পর এক দখল হয়ে যাচ্ছে আফগানিস্তানের প্রদেশগুলো। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ঘোষণা অনুযায়ী আফগানিস্তান থেকে পশ্চিমা দেশগুলোর অবশিষ্ট সেনা তাড়াহুড়ো করে জুলাই মাসেই প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তে তালেবানরা আরও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এরপর থেকে আফগানিস্তানে তালেবান বাহিনী একের পর এক জেলায় হামলা চালিয়ে সেগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে। মনোবল হারানো সরকারি সেনারা তাদের ঘাঁটি ছেড়ে হয় পালাচ্ছে, নয়তো আত্মসমর্পণ করছে। এসব ঘাঁটি এখন তালেবান বাহিনীর দখলে।

এদিকে সামগ্রিক বিষয় পর্যবেক্ষণ করে পশ্চিমা বিশেষজ্ঞরা আফগানিস্তানে আবারও আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ প্রত্যাবর্তনের অপচ্ছায়া দেখতে পাচ্ছেন। কিন্তু সেটা নির্মূলে আর আগ্রহ দেখাচ্ছে না বিশ্ব নেতারা। অনেক আগেই পরাজিত রাশিয়া আফগানিস্তান ত্যাগের পর এবার যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো যেভাবে আফগানিস্তান ছাড়লো বা ছাড়ছে তাতে ভবিষ্যতে আর কেউ সেখানে যাওয়ার আগে বার কয়েক ভাবতে হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। অথবা এমনও হতে পারে আর কোন বিদেশি শক্তি হয়তো আর কোনদিনই আফগানিস্তানের পথ মাড়ানোর কোন আগ্রহ দেখাবে না।

আফগানিস্তান থেকে বিদেশি সৈন্য প্রত্যাহার ঘোষণার পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় দেশটির তিন ভাগের এক ভাগ তালেবানের দখলে চলে গেছে। এক ভাগ আফগানিস্তান সরকারের দখলে আছে আর বাকি এক ভাগে দখলের জন্য সংঘর্ষ চলছে দুই বাহিনীর মধ্যে। তবে আশঙ্কা করা হচ্ছে অচিরেই সেখান থেকে নিয়ন্ত্রণ হারাবে বর্তমান আফগান ক্ষমতাসীন সরকার।

এদিকে আবার শুরু হওয়া সংঘর্ষে অনেক আফগান বাস্তুহারা হচ্ছে। অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এবং সবচেয়ে বড় হুমকির মুখে পড়েছে নারী শিক্ষা। যদিও এবারের তালেবান নেতাদের মুখে নারী শিক্ষা নিয়ে ভিন্ন সুর শোনা যাচ্ছে। তারা বলছে, তারা নারী শিক্ষার বিপক্ষে নয় কিন্তু বাস্তবে সেটা কতটুকু কার্যক্রর হবে সেটা অবশ্যই চিন্তার বিষয়। তাছাড়া ১৯৯৬ সাল হতে ২০০১ সাল পর্যন্ত কঠোরভাবে যারা আফগানিস্তান শাসন করেছে, সেই তালেবান কোন না কোন চেহারায় ফিরে আসতে যাচ্ছে এটা বেশ বোঝা যাচ্ছে।

ইসলামপন্থী সংগঠন আল-কায়েদাসহ আরও অনেক সংগঠনের নিরাপদ বিচরণ ভূমি হতে যাচ্ছে ইসলামিক স্টেট আফগানিস্তান। যদিও বেশ কয়েকটি আর্ন্তজাতিকভাবে নিষিদ্ধ ইসলাম ভিত্তিক সংগঠন সেখানে আগে থেকেই অবস্থান করছিলো। এখন তারা সহ অন্যান্য আরও ইসলামী সংগঠনের কার্যক্রম সেখান থেকে পরিচালনার একটি সুযোগ তৈরি হলো। আফগানিস্তান খুবই পর্বতময় এবং বন্ধুর একটি দেশ। সেখানে এমন অনেক দুর্গম এলাকা আছে যেখানে সহজেই আন্তর্জাতিকভাবে নিষিদ্ধ গোষ্ঠীগুলো লুকিয়ে থাকতে পারে। উদ্ভুত এই পরিস্থিতি বিশ্ববাসীর জন্য কতটা চিন্তার সেটা অবশ্যই আসছে সময়ে বিশ্ববাসীর সামনে আরও সবিস্তারে উন্মোচিত হবে।

যদি তালেবান কোনভাবে আফগানিস্তানের ক্ষমতায় ফিরে আসে, তার মানে কি সেখানে আল-কায়েদার প্রত্যাবর্তন অবশ্যম্ভাবী? আবারও কি সেখানে আল-কায়েদার ঘাঁটি, সন্ত্রাসবাদীদের প্রশিক্ষণ শিবির, কুকুরের ওপর বিষাক্ত গ্যাসের পরীক্ষা- এগুলো দেখা যাবে? যেগুলো বন্ধ করার কথা বলেই ২০০১ সালে আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে অভিযান চালানো হয়েছিল? পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলো আসলে গত ক'বছর ধরে এসব প্রশ্ন নিয়েই মাথা ঘামিয়ে চলেছে। আর আফগানিস্তান থেকে যত রকমের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, তাতে বোঝাই যায়, সেরকম একটি পরিবেশই তারা পেতে যাচ্ছে।