লড়াইয়ে ট্রাম্প-বাইডেন, জেনে নিন তাদের সম্পর্কে

  মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন
  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

লড়াইয়ে ট্রাম্প-বাইডেন, জেনে নিন তাদের সম্পর্কে

লড়াইয়ে ট্রাম্প-বাইডেন, জেনে নিন তাদের সম্পর্কে

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আর মাত্র একদিন বাকি। দুই প্রার্থী তাদের প্রচারণাও শেষ করেছেন। করোনায় নানামুখী সংকটে থাকা যুক্তরাষ্ট্রে এবারের নির্বাচন হবে অন্যান্য নির্বাচন থেকে একবারে আলাদা এবং চ্যালেঞ্জিং। মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার এ লড়াইয়ে এবার মুখোমুখি রিপাবলিকান প্রার্থী ৪৫তম প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ট ট্রাম্প ও ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন।

এখন পর্যন্ত ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকশনের তথ্য অনুযায়ী, শনিবার পর্যন্ত দেশটির নয় কোটিরও বেশি মানুষ আগাম ভোট দিয়েছে। দেশটিতে মোট ভোটারের সংখ্যা প্রায় ১৬ কোটি। জনমত জরিপগুলো বলছে- জো বাইডেন এগিয়ে থাকলেও চার বছর আগের নির্বাচনে বিশ্লেষকদের নিশ্চিত রায় ভুল হওয়ায় নির্দ্বিধায় কোন ধরনের পূর্বাভাস বা ভবিষ্যদ্বাণী করছেন না বিশ্লেষকরা।

বিজ্ঞাপন

তবে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট যেই হোক না কেন? চলুন জেনে নেই এই দুই প্রধান প্রার্থী সম্পর্কে-


টেলিভিশন সেলিব্রেটি থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট- ডোনাল্ড ট্রাম্প


আমেরিকার ৪৫তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার আগেই ডোনাল্ড ট্রাম্প ধনাঢ্য ব্যবসায়ী, বিনিয়োগকারী, বিশিষ্ট সামাজিক ব্যক্তিত্ব ও টেলিভিশন সেলিব্রেটি হিসেবে হিসেবে আলোচিত ছিলেন।

১৯৪৬ সালে নিউ ইয়র্কের বিত্তশালী ফ্রেড ট্রাম্পের ঘরে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্ম। পাঁচ সন্তানের মধ্যে ট্রাম্প চতুর্থ। তার মা ম্যারী অ্যানী স্কটল্যান্ডের বাসিন্দা ছিলেন। ১৩ বছর বয়সে ট্রাম্পকে সামরিক স্কুলে দেওয়া হয়।

সামরিক একাডেমিতে থাকাকালীন সম েট্রাম্প

ট্রাম্প ১৯৬৮ সালে পেনসিলভানিয়া হোয়ার্টন বিজনেস স্কুল থেকে অর্থনীতির উপর স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।

এক ইন্টারভিউতে ট্রাম্প জানিয়েছিলেন- পিতার কাছ থেকে ১০ লাখ মার্কিন ডলার ঋণ নিয়ে রিয়েল এস্টেট ব্যবসা শুরু করেন। পরে অবশ্য বাবার কোম্পানিতে যোগ দিয়ে ব্যবসার বিপুল প্রসার করেন। ১৯৭১ সালে বাবার কোম্পানির নাম পরিবর্তন করে  ‘দ্য ট্রাম্প অর্গানাইজেশন’ রাখেন।

রিয়েল এস্টেটের ব্যবসার পাশাপাশি ট্রাম্প বিনোদন জগতের ব্যবসায়ও সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন। ১৯৯৬ সালে ২০১৫ সাল পর্যন্ত মিস ইউনির্ভাসসহ কয়েকটি সুন্দরী প্রতিযোগিতার সফল আয়োজক ছিলেন ট্রাম্প। দ্য অ্যাপ্রেন্টিস নামে জনপ্রিয় একটি রিয়েলিটি টিভি শো উপস্থাপনা করতেন তিনি।

দ্য অ্যাপ্রেন্টিস নামে জনপ্রিয় একটি রিয়েলিটি টিভি শো উপস্থাপনা করতেন ট্রাম্প

আমেরিকার ধনকুবের ট্রাম্প ১৯৮৭ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নিতে চেয়েছিলেন। এরপর ২০১৫ সালে ‘মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগাইন’ স্লোগানে আনুষ্ঠনিকভাবে নির্বাচন করার ঘোষণা দেন।

ফোর্বস ম্যাগাজিনের হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্পত্তি ৩৭০ কোটি ডলার। যদিও ট্রাম্প দাবি করেন তার সম্পত্তির পরিমাণ এক হাজার কোটি ডলার।

বর্তমান স্ত্রী মেলানিয়া নস

ট্রাম্প জীবনে তিনবার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। তার ব্যক্তিগত জীবনও বেশ আলোচিত। তিনি ১৯৭৭ সালে মডেল ইভানা জেলনিকোভাকে বিয়ে করেন। তাদের তিন সন্তান রয়েছে। ইভানা ‘দ্য ট্রাম্প’ নামে ট্রাম্পকে সম্বোধন করতেন এরপর থেকেই এই নামটি ব্যাপকভাবে প্রচার হয়। ইভানার সাথে থাকাকালীন ট্রাম্প অভিনেত্রী মার্লা ম্যাপলসের সাথে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৯১ সালে ইভানা আর ট্রাম্পের বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটে। ট্রাম্প আর অভিনেত্রী মার্লা ম্যাপলস্‌ ১৯৯৩ সালে একটি কন্যা শিশুর জন্ম দেন। ওই বছরেই তারা দুইজন বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৯৯৯ সালের জুন মাসে তাদের বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটে।

পরিবারের সাথে ট্রাম্প

ট্রাম্প ১৯৯৮ সালে স্লোভেনিয়ান-বংশোদ্ভুত মডেল মেলানিয়া নসের সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। ২০০৫ সালে তারা বিয়ে করেন। ২০০৬ সালে এই দম্পতি ঘরে ব্যারন উইলিয়াম ট্রাম্প নামের এক পুত্র সন্তানের জন্ম দেয়।

২০১৬ সালের মার্কিন নির্বাচনের পর ২০১৭ সালের ২০ জানুয়ারি ডোনাল্ড ট্রাম্প ৪৫ তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

আমেরিকার ৪৫তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার আগেই ডোনাল্ড ট্রাম্প ধনাঢ্য ব্যবসায়ী, বিনিয়োগকারী, বিশিষ্ট সামাজিক ব্যক্তিত্ব ও টেলিভিশন সেলিব্রেটি হিসেবে হিসেবে আলোচিত ছিলেন

ব্যক্তি জীবনের মতো রাজনীতিক জীবনেও ট্রাম্প নানা বিতর্ক সৃষ্টি করেন। নির্বাচনী প্রচারণার সময় মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণ, মুসলিমদের যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন না দিতে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেওয়া, ইরানের সাথে পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসা, ইরাক-আফগানিস্থান থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করা, জলবায়ু চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসা- এমন নানা ইস্যু নিয়ে ক্ষমতা থাকাকালীন সময়ে সমালোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে ছিলেন ট্রাম্প। এমনকি তাকে ইম্পিচমেন্টের (অভিশংসন) মুখোমুখি হতে হয়েছিল। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেছিলেন ক্ষমতার চার বছর মেয়াদ তিনি পূরণ করতে পারবেন না। কিন্তু সবাইকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আবারও রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী তিনি।


৫০ বছরের রাজনৈতিক জীবনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট দৌড়ে-জো বাইডেন


জো বাইডেনের রাজনীতিতে পথ চলা ৫০ বছর! ২০০৯-১৭ পর্যন্ত আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে ছিলেন তিনি। ৩৬ বছর ডেলাওয়্যার অঙ্গরাজ্যের সিনেটর ছিলেন প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ।

৪৬ তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন

পেনসিলভানিয়া ১৯৪২ সালে ক্যাথলিক পরিবারে জন্ম জো বাইডেনের। ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো ধনাঢ্য পরিবারে সন্তান ছিলেন না বাইডেন। অভাব-অনটনের কারণে তার পরিবারকে ডেলাওয়্যারে আসতে হয়। ছোট বেলায় তেতলামির জন্য নানা কটুক্তি শুনতে হয়েছে তাকে, বয়স বাড়ার সাথে সাথে সেই সমস্যা তিনি কাটিয়ে ওঠেন। পড়াশুনা করেছেন আইন, ইতিহাস ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে। সেরাকিউজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে স্নাতক অর্জনের আগে ডেলাওয়্যার বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্র বিজ্ঞানে পড়েন তিনি। কৈশোর থেকে জো বাইডেনের মধ্যে নেতৃত্বগুণ ছিল।

ব্যক্তিজীবনে নানা ট্র্যাজেডির মুখোমুখী হয়েছেন জো বাইডেন। সড়ক দুর্ঘটনা, অকালে সন্তান হারানোর মতো ঘটনা ছিল তার পারিবারিক জীবনে। ১৯৬৬ সালে সহপাঠী নেইলা হানটারকে বিয়ে করেন। তাদের তিন সন্তান ছিল। ১৯৭২ সালে এক সড়ক দুর্ঘটনা স্ত্রী নেইলাসহ একমাত্র কন্যা নাওমিকে হারান বাইডেন।

প্রথম স্ত্রী নেইলা হান্টার ও সন্তানদের সাথে জো বাইডেন

দীর্ঘ পাঁচ বছর নিঃসঙ্গ জীবন যাপনের পর ১৯৭৭ সালে তার শিক্ষিকা জিল ট্রেসি জ্যাকবসকে বিয়ে করেন।  ২০১৫ সালে মস্তিস্ক কানসারে তার বড় ছেলে বো বাইডেন মৃত্যুবরণ করেন।

শুরুতে জো বাইডেন আইনজীবী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করলেও পরে নগর পরিষদের একটি আসনে জয়ের মাধ্যমে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। ১৯৭২ সালে সিনেটে বিজয় আসে তার। মাত্র ৩০ বছর বয়সে শক্তিশালী সিনেট নেতাকে হারিয়ে ডেমোক্র্যাট দলের এক সম্ভাবনাময় তরুণ নেতাতে পরিণত হন। ১৯৮৮ ও ২০০৮ সালে হোয়াইট হাউসের যাওয়ার লড়াইয়ে অংশ নিলেও সুবিধা করতে পারেননি।

৩৬ বছর ডেলাওয়্যার অঙ্গরাজ্যের সিনেটর ছিলেন জো বাইডেন

২০০৮ সালে জো বাইডেনকে রানিংমেট হিসেবে বেছে নেন ওবামা। ওই সময় ওবামা বলেন, বাইডেন পররাষ্ট্র বিষয়ে ঝানু রাজনীতিবিদ। আমেরিকার পররাষ্ট্র সম্পর্কিত সিনেট কমিটির সভাপতি ছিলেন জো বাইডেন। ২০০২ সালে ইরাকে যুদ্ধে যাওয়ার বিষয়ে তিনি অনুমোদন দেন। তবে এর আগে এর জর্জ ডব্লিউ বুশের সাদ্দাম হোসেনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের বিরোধিতা করায় তোপের মুখে পড়েন তিনি।

পরবর্তীতে তিনি বলকান গৃহ যুদ্ধ, ইরাকে বোমা হামলা, আফগানিস্তান দখলদারিত্বে সমর্থন দেন। ফলে নিজ দল ডেমোক্র্যাটে সমালোচিত হন। জো বাইডেন ইরাক থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের আহ্বান জানান।

বর্তমান স্ত্রী জিল ট্রেসি জ্যাকবস

এবার প্রেসিডেন্ট নির্বোচনের লড়াইয়ের ঘোষণা দেওয়া পর ইরানের সাথে আলোচনা, প্যারিস চুক্তি সমর্থন করেন তিনি। এছাড়াও আর্মেনিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রকে সৌদ আরবকে সমর্থন না করার আহ্বান জানান। 

জো বাইডেনের ৫০ বছরের রাজনীতিক ক্যারিয়ারে হোয়াইট হাউসে যাওয়ার এটাই শেষ লড়াই। এখন দেখা যাক- আমেরিকার জনগণ ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আবার সুযোগ দেন, নাকি ঝানু রাজনীতিবিদ অমায়িক জো বাইডেনের দিকে জয়ের পাল্লা ভারী করেন।৩ নভেম্বরের পর এই অপেক্ষার উত্তর মিলবে ব্যালট বক্সে।