নয়টি দেশের সিনেমা করার রেকর্ড রয়েছে শুধুই অঞ্জনার
২০ দিনের মতো অসুস্থ থেকে অবশেষে জীবন যুদ্ধে পরাজিত হলেন ঢালিউডের অন্যতম সফল অভিনেত্রী অঞ্জনা রহমান। শুক্রবার দিনগত রাত ১টা ১০ মিনিটে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
দক্ষ অভিনয়, গ্ল্যামার, ফ্যাশন সেন্স আর নৃত্যে পারদর্শীতার জন্য তিনি হয়ে উঠেছিলেন আশির দশকের লেডি সুপারস্টার। তার নামে অসংখ্য সিনেমা সুপারহিট বাম্পারহিট হয়েছে। সেই ছবির তালিকা নিজের ফেসবুকে মাঝে মধ্যেই পোস্ট করতেন এই নায়িকা। বয়স সত্তর পেরোলেও চির যৌবনা এই তারকা মৃত্যুর ক’দিন আগ পর্যন্ত কাজ করে গেছেন। কোন অনুষ্ঠানে গেলে স্বভাবসুলভ কারিশমা দিয়ে হয়ে উঠতেন মধ্যমণি। গল্প আড্ডা হাসি আর মিষ্টি ব্যবহারে ভরিয়ে রাখতেন সবার মন।
অঞ্জনা জন্মগ্রহণ করেছিলেন ঢাকায় একটি সংস্কৃতিমনা পরিবারে। ১৯৬৫ সালের ২৭ জুন জন্ম হয় অভিনেত্রীর। ছোটবেলা থেকে নৃত্যের প্রতি দারুণ আগ্রহ ছিল।
তাই বাবা-মা তাকে ভারতে নৃত্য শেখার জন্য পাঠান। সেখানে তিনি ওস্তাদ বাবুরাজ হীরালালের অধীনে নাচের তালিম নেন এবং কত্থক নৃত্য শিখেন। নৃত্যে তিনবার জাতীয় পুরস্কারও লাভ করেন এবং একবার এশিয়া মহাদেশীয় নৃত্য প্রতিযোগিতায় প্রথম হন তিনি। ১৯৭৬ সালে বাবুল চৌধুরী পরিচালিত ‘সেতু’ সিনেমা দিয়ে অঞ্জনার অভিনয় জীবন শুরু হয়।
তবে তার অভিনীত প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা শামসুদ্দিন টগর পরিচালিত ‘দস্যু বনহুর’ (১৯৭৬)। এরপর থেকে সাফল্যের সঙ্গে তিনি বিভিন্ন সিনেমায় অভিনয় করেন। তার অভিনীত বাংলা সিনেমাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- ‘অশিক্ষিত’, ‘জিঞ্জীর’, ‘আশার প্রদিপ’, ‘আশার আলো’, ‘আনারকলি’, ‘সুখে থাকো’, ‘সানাই’, ‘বৌ কথা কও’, ‘অভিযান’, ‘রাম রহিম জন’, ‘রূপালি সৈকতে’, ‘মোহনা’, ‘পরিণীতা’ ইত্যাদি।
সুদীর্ঘ ক্যারিয়ারে অঞ্জনা তিন শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন। শুধু বাংলাদেশই নয়, ৯টি দেশের ১৩টি ভাষার সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি। যে রেকর্ড ঢালিউডের আর কোন তারকার নেই। এমনকি ভারত পাকিস্তানের কোন তারকারও এই রেকর্ড আছে কি না সন্দেহ!
দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, তুরস্ক, থাইল্যান্ড ও শ্রীলংকা। অঞ্জনা দাবি করেছিলেন, তিনিই দেশের একমাত্র চিত্রনায়িকা যিনি ৯টি দেশের এতোগুলো ভাষায় প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন।
ক্যারিয়ারে নিজের সময়কালের শীর্ষ জনপ্রিয় সব অভিনেতার সঙ্গেই অভিনয় করেছেন অঞ্জনা। তাদের মধ্যে আছেন- রাজ্জাক, আলমগীর, জসিম, বুলবুল আহমেদ, জাফর ইকবাল, ওয়াসিম, উজ্জ্বল, ফারুক, ইলিয়াস জাভেদ , ইলিয়াস কাঞ্চন, সোহেল চৌধুরী, রুবেল, সুব্রত বড়ুয়া, মান্না প্রমুখ। এছাড়া মিঠুন চক্রবর্তী (ভারত), ফয়সাল (পাকিস্তান), নাদীম (পাকিস্তান) জাভেদ শেখ (পাকিস্তান), ইসমাইল শাহ (পাকিস্তান), শীবশ্রেষ্ঠ (নেপাল) ও ভূবন কেসি (নেপাল) অভিনেতাদের সঙ্গে অভিনয় করেছেন অঞ্জনা।
১৯৮১ সালে ‘গাংচিল’ সিনেমায় অভিনয়ের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার লাভ করেন অঞ্জনা। এরপর ১৯৮৬ সালে ‘পরিণীতা’ সিনেমায় ললিতা চরিত্রে অনবদ্য অভিনয় করে একই পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া তিনি ‘পরিণীতা’, ‘মোহনা’ ও ‘রাম রহিম জন’ সিনেমার জন্য তিনবার বাচসাস পুরস্কার লাভ করেন।
অভিনয়ের পাশাপাশি অঞ্জনা চলচ্চিত্র প্রযোজনা ও করেছেন। তার প্রযোজিত চলচ্চিত্রগুলো হলো- ‘নেপালী মেয়ে’, ‘হিম্মতওয়ালী’, ‘দেশ বিদেশ’, ‘বাপের বেটস’, ‘রঙিন প্রাণ সজনী’, ‘শ্বশুরবাড়ি’, ‘লাল সর্দার’, ‘রাজা রানী বাদশা’, ‘ডান্ডা মেরে ঠান্ডা’, ‘বন্ধু যখন শত্রু’।