৩০তম বিয়েবার্ষিকী উদযাপন থেকে বিরত থাকলেন সানী-মৌসুমী

  • বিনোদন ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ওমর সানী ও মৌসুমী দম্পতি

ওমর সানী ও মৌসুমী দম্পতি

শোবিজ তারকাদের বিয়ে টেকে না এমন অপবাদ নতুন নয়। তবে তাদের মধ্যেও গুটিকয়েক তারকা ব্যতিক্রম উদাহরন তৈরি করেছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম চিত্রনায়ক ওমর সানী ও নায়িকা মৌসুমী দম্পতি।

যে কোন দম্পতির জীবনে বিবাহবার্ষিকীর এক একটি মাইলফলক খুব উল্লেখযোগ্য। সেখানে এমন সফল তারকা দম্পতির ৩০ বছর একসঙ্গে থাকার উপলক্ষ্য কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। ধুমধাম করে পালনের মতো বিষয়।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু দেশের এই বিরূপ পরিস্থিতিতে এতো হত্যা, রক্ত আর উৎকণ্ঠার প্রতি শ্রদ্ধা ও সংহতি রেখে নিজেদের ৩০তম বিয়েবার্ষিকী উদযাপন থেকে বিরত থাকলেন সানী-মৌসুমী দম্পতি।

আজ এই জনপ্রিয় দম্পতির ৩০তম বিবাহবার্ষিকী বছর পূরণ হলো। বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে ওমর সানী বলেন, ‘আজ ২ আগস্ট আমাদের বিবাহবার্ষিকী, আলহামদুলিল্লাহ ৩০ বছর পার করলাম। খুব ইচ্ছে ছিল অনেক বড় করে সবার সাথে শেয়ার করব, কিন্তু হলো না চারিদিকে লাল শুধু লাল এর মধ্যে আমাদের হাসিটা কোথায় যেন হারিয়ে গেছে। কোনও আয়োজন নয় যদি পারেন মন থেকে দোয়া করবেন আমাদের জন্য।’

মৌসুমী ও ওমর সানী দম্পতি

মৌসুমীর অভিষেক সিনেমা ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’-এর মহরতে দুজনের প্রথম দেখা। ততদিনে ওমর সানীর প্রথম সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। এরপর প্রথম কথা হয় মৌসুমীর বাসায় ১৯৯২ সালে।

ওমর সানীর বিপরীতে একটি সিনেমায় মৌসুমীকে নিতে চাইলেন পরিচালক শেখ নজরুল ইসলাম। সে বিষয়ে কথা বলতেই সানীকে নিয়ে মৌসুমীর বাসায় হাজির হলেন পরিচালক। মৌসুমী সানীর উদ্দেশে বললেন, ‘সানী ভাই, আপনার চাঁদের আলো তো আমরা সবাই দেখলাম। বেশ ভালো করেছেন। কিন্তু আমি তো এই ছবিটা করতে পারছি না। অন্য কমিটমেন্ট আছে।’

১৯৯৩ সালে মুক্তি পায় ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’। ছবিটি মুক্তি পাওয়ার পর ওমর সানী ও মৌসুমীকে নিয়ে একটি সিনেমা বানানোর পরিকল্পনা করে চার-পাঁচজন পরিচালক। ‘দোলা’ ছবির প্রস্তাব দেওয়া হলে ছবির নাম শুনেই ওমর সানী বললেন, ‘না না। নারীপ্রধান ছবি করব না।’ ওমর সানীর চার-পাঁচটি ছবি তখন সুপারহিট। না বলার পরও গল্পটা শুনে ভালো লাগল, রাজি হয়ে গেলেন সানী। দোলা সিনেমা দিয়ে জুটি গড়লেন মৌসুমী-সানী।

ওমর সানী ও মৌসুমী দম্পতি

সিলেটে আউটডোরে শুটিং করতে গিয়ে দুজনের মনোমালিন্য হলো। কাজ শেষ করে ঢাকায় ফিরলেন তারা। ওমর সানী বলেন, ‘এরপর কেন জানি মেয়েটার জন্য মায়াই লাগল। যে বিষয়টি আমাকে সবচেয়ে বেশি ধাক্কা দিয়েছিল, সেটা ওর মৌসুমীর ব্যক্তিত্ব। ওই সময় অন্য যাদেও সঙ্গে কাজ করতেন, তাদের থেকে আলাদা। তার বাবাও ছিলেন খুব স্মার্ট ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন। পুরো পরিবারের প্রতি আলাদা একটা শ্রদ্ধাবোধ তৈরি হলো। ভেতরে-ভেতরে হয়তো ভালোবাসাও জন্মে গেল।’

২ নভেম্বর শুটিং শেষ করে রাত সাড়ে দশটার দিকে সানীকে দাওয়াত দিতে গেলেন নায়িকা, ‘হিরো, কালকে আমার জন্মদিন। দুপুরে আমার সঙ্গে খাবেন।’

দাওয়াত পেয়ে চিন্তাতেই পড়ে গেলেন সানী, ‘মৌসুমীকে কী দেওয়া যায় ভাবছিলাম। এমন অজপাড়াগাঁ, কিছুই তো নেই। গলায় তখন সাড়ে তিন-চার ভরি ওজনের একটা স্বর্ণের চেইন ছিল। হঠাৎ সেটা খুলে ওর হাতে দিয়ে দিলাম। বললাম, আমি তোমায় কি যে দেব? এখানে তো ফুলটুলও কিছুই নেই। ও তো হতবাক। বললাম, এটাই তোমার উপহার। আমি তোমাকে দিচ্ছি, তুমি এটা রাখো। মা আমাকে এই চেইনটা দিয়েছিলেন।’

ওমর সানী ও মৌসুমী দম্পতি

‘আত্ম অহংকার’ মুক্তির পর একটি ম্যাগাজিনে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে ওমর সানী মুখ ফসকে বলে ফেলেন, ‘আমি মৌসুমীকে ভালোবাসি। ও আমাকে ভালোবাসে কি না জানি না।’ ওমর সানীর সাক্ষাৎকার পড়ে মৌসুমী অবাক। সানীকে বললেন, ‘এটা বলা কি আপনার ঠিক হলো?’ সানীর উত্তর, ‘বলেছি তো বলেছিই। ঠিক হইছে কি না, জানিটানি না। কইয়াই তো ফালাইছি। ভালোবাসা না হইলে যাও, তুমি তোমার মতো কাজ করো, আমি আমার মতো। মানুষ যদি কিছু বলে আমারে বলবে।’

ওমর সানীর মা মৌসুমীকে ভীষণ পছন্দ করে ফেলেছেন। ছেলের বউ যে বানাবেন, এ কথা বলেও দিয়েছেন। মৌসুমীর শুটিংয়ে মাঝেমধ্যে তার নানিও আসতেন। সানীর মায়ের সঙ্গে মৌসুমীর নানির একটা সুন্দর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তারা দুজনই উদ্যোগী হলেন। মৌসুমী বললেন, ‘নানি বলতেন, ছেলেটাকে আমার পছন্দ। ওর সঙ্গে তোকে বিয়ে দেব। তিনিই ছিলেন দুই পরিবারের মূল মধ্যস্থতাকারী।’ তবে মৌসুমীর মা কখনোই চাননি, ফিল্মের কেউ তার মেয়েকে বিয়ে করুক। এরপর একটা পর্যায়ে তিনিও রাজি হলেন।

একদিন সানীদের বাসায় মৌসুমীকে নিয়ে হাজির তার নানি। ১৯৯৫ সালে সানীর মাকে বললেন, ‘এক্ষুনি কাজি ডাকেন, আজই ওদের বিয়ে দেব।’ মৌসুমী ও ওমর সানীর বিয়ের খবর কেউ জানতেন না। ওমর সানী বলেন, ‘বিয়ের পর দুজনেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম কাজ চালিয়ে যাব, তাই কাউকে জানাইনি। তবে দুজন পরিচালক বিয়ের খবরটা জানতেন।’

মৌসুমী ও ওমর সানী দম্পতি

ওমর সানী-মৌসমুীর দম্পতির দুটি সন্তান স্বাধীন ও ফাইজা। ছেলেকে এরইমধ্যে বিয়ে দিয়েছেন, মেয়ে আমেরিকায় পড়াশুনা করছে।