সিলেট জেলার জয়িন্তাপুরে অবস্থিত সিলেট-১০ কূপটি গ্যাস উত্তোলনের জন্য প্রস্তুত থাকলেও পাইপলাইন না থাকায় কূপটি থেকে গ্যাস উত্তোলন করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে ফেব্রুয়ারি মাস নাগাদ মিলতে পারে সিলেট-১০ কূপের গ্যাস। এ কূপ থেকে দৈনিক ২০ থেকে ২৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
কূপটি থেকে হরিপুর পর্যন্ত ৬ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপলাইন বসানোর কাজ চলমান রয়েছে। পাইপলাইন নির্মাণের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে বলে সিলেট গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি লিমিটেড (এসজিএফসিএল) সূত্রে জানা গেছে।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার বার্তা২৪.কম-কে বলেছেন, আমরা ডিসেম্বরের মধ্যেই পাইপলাইন নির্মাণ কাজ শেষ করতে প্রচেষ্টা নিয়েছিলাম। সওজের (সড়ক ও জনপথ বিভাগ) কিছু জটিলতার কারণে কাজটি বিলম্বিত হয়েছে। তিন কিলোমিটারের মতো পাইপলাইন অবশিষ্ট রয়েছে, আমরা এক মাসের মধ্যেই শেষ করার নির্দেশনা দিয়েছি। পেট্রোবাংলার একটি টিম শিগগিরই সিলেট সফর করবে। প্রয়োজনে সওজের সঙ্গে বসে দ্রুত সমাধান করা হবে।
যখন গ্রীষ্মকাল, রমজান ও সেচ মৌসুম একসঙ্গে হাজির হচ্ছে ঠিক সেই সময়ে উৎপাদনে আসছে কূপটি। গ্যাস সংকটে নাকাল অবস্থায় এই খবর ভীষণ স্বস্তির বলে মনে করা হচ্ছে। ২০২৩ সালের নভেম্বরে কূপটির খনন শেষ হয়, কূপটিতে তেলের পাশাপাশি গ্যাসের ৩টি স্তর পাওয়া গেছে। স্তরগুলোর অবস্থান হচ্ছে ২৪৬০ থেকে ২৪৭৫ মিটার, ২৫৪০ থেকে ২৫৭৬ মিটার ও ৩৩০০ মিটার গভীরতায়। গ্যাসের সম্ভাব্য মজুদ ৪৩.৬ থেকে ১০৬ বিলিয়ন ঘনফুট হতে পারে বলে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ আশা করছে।
গ্যাস উন্নয়ন তহবিল ও সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেডের নিজস্ব অর্থায়নে সিলেটের ১০নং কূপের খনন কাজ করা হয়। এ জন্য গ্যাসফিল্ড কোম্পানির সঙ্গে সিনোপ্যাক ইন্টারন্যাশনাল পেট্রোলিয়ম সার্ভিস করপোরেশন, চায়নার সঙ্গে ২০২২ সালের ১১ সেপ্টেম্বর চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়। কূপটিতে গ্যাসের পাশাপাশি তেলের অবস্থান নিশ্চিত করেছে এসজিএফসিএল। ওই কূপটির পাশেই আরেকটি কূপ (সিলেট-১০এক্স) খনন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ওই কূপটির খনন কাজ ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে শেষ হবে। তখন দৈনিক ৪৫ থেকে ৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস প্রাপ্তির আশা করা হচ্ছে।
সিলেট-১০ কূপটির ১৩৯৭-১৪৪৫ মিটার গভীরতায় তেলের অবস্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রথম দিন ২ ঘণ্টায় ৭০ ব্যারেল তেল উঠেছে। আপাতত কূপটি বন্ধ রাখা হয়েছে। মজুতের বিষয়টি নিশ্চিত করতে কনসালটেন্সি ফার্ম নিযুক্ত করা হয়। সেই প্রতিষ্ঠানও ইতোমধ্যেই রিপোর্ট জমা দিয়েছে। সেই রিপোর্ট নিরীক্ষার কাজ চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান এক প্রশ্নের জবাবে বার্তা২৪.কম-কে বলেন, তেলের কোয়ালিটি উন্নতমানের। সিলেট-১০ থেকে পাওয়া তেল বুয়েট এবং ইস্টার্ন রিফাইনারিতে প্রেরণ করেছিলাম, তারা উৎকৃষ্টমানের বলে রিপোর্ট দিয়েছে।
এক সময় দেশীয় গ্যাস ফিল্ডগুলো থেকে দৈনিক ২৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যেত। ২৩ ডিসেম্বর মাত্র ১৯৩০ মিলিয়ন ঘনফুট উৎপাদন হয়েছে। প্রতি দিনেই কমে আসছে দেশীয় গ্যাস ফিল্ডগুলোর উৎপাদন। পেট্রোবাংলার প্রাক্কলন বলছে, ২০২৬-২৭ অর্থবছরে দেশে গ্যাসের চাহিদা ৪৫০০ মিলিয়ন ছাড়িয়ে যাবে। যদিও কেউ কেউ বলতে চান এখনই গ্যাসের প্রকৃত চাহিদা সাড়ে ৪ হাজারের ওপরে রয়েছে।
পেট্রোবাংলা সূত্র জানিয়েছে, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সিলেট গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি লিমিটেড থেকে ১ টাকা দরে, বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি থেকে ১.২৫ টাকা দরে, বাপেক্স থেকে ৪ টাকা দরে এবং বহুজাতিক কোম্পানি শেভরন বাংলাদেশ ও টাল্লোর কাছ থেকে কেনা গ্যাসের সংমিশ্রণে গড় দর দাঁড়ায় ৬.০৭ টাকা ঘনমিটার। দেশীয় এসব উৎস থেকে গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে দৈনিক কমবেশি ২০০০ মিলিয়ন ঘনফুট। অন্যদিকে এলএনজি আমদানি থেকে ৯০০ মিলিয়ন গ্যাস সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে। এক-তৃতীয়াংশ আমদানির পর গড় দর ৬.০৬ টাকা থেকে বেড়ে ২৪.৩৮ টাকা হয়েছে (২০২৩-২৪ অর্থবছর)। সেখানে সবচেয়ে সাশ্রয়ী উৎস থেকে (১ টাকা ঘনমিটার) দৈনিক ২০ থেকে ২৫ মিলিয়ন গ্যাস যুক্ত হওয়া নিশ্চয় খুশির সংবাদ।