২য় শ্রেণির ছাত্রী বন্ধ করল নিজের বাল্যবিয়ে

  • ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, বরগুনা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

মনিকা। ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম।

মনিকা। ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম।

নিজের বাল্যবিয়ের কথা প্রশাসনকে বলে তা ভেঙে দিয়েছে বরগুনার আমতলীর ২য় শ্রেণির ছাত্রী মনিকা (১০)।

শুক্রবার (২৩ আগস্ট) রাতে পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বরের মা ও কনের মাকে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরিমানা করা হয়।

শনিবার (২৪ আগস্ট) দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক সহকারী কমিশনার (ভূমি) কমলেশ মজুমদার।

বিজ্ঞাপন

মনিকা বরগুনা পৌর শহরের ৮নং ওয়ার্ডের বাসুগী এলাকার রিকশা চালক জুয়েল প্যাদার মেয়ে। সে আমতলী মফিজ উদ্দিন বালিকা বিদ্যালয় সংলগ্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২য় শ্রেণির ছাত্রী।

জানা গেছে, শুক্রবার সন্ধ্যায় মনিকার সঙ্গে বরগুনা পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের রিকশা চালক তৌফিকের ছেলে সুমনের (১৪) বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। ওই দিন বিকেলে শিশু মনিকা তার বিয়ের কথা জানতে পেরে দুই বান্ধবী কনিকা ও ফারজানাকে নিয়ে আমতলী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে যায়। কোর্ট বন্ধ দেখে সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করে মনিকা তার বান্ধবীদের নিয়ে আমতলী থানায় আসে। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল বাশারকে বিয়ে বন্ধ করে দেয়ার জন্য অনুরোধ করে। তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে বিয়ে বন্ধসহ বর সুমন, বরের মা ডলি বেগম ও কন্যার মা শাহানাজ ওরফে শাহিনুরকে আটক করে পুলিশ। পরে পুলিশ আটককৃতদের ভ্রাম্যমাণ আদালতে সোপর্দ করে।

বিজ্ঞাপন

ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক সহকারী কমিশনার (ভূমি) কমলেশ মজুমদার বাল্যবিয়ে নিরোধ আইনের ২০১৭ এর ৮ ধারা মোতাবেক বরের মা ডলি বেগমকে ২ হাজার টাকা ও কনের মা শাহানাজ ওরফে শাহিনুরকে ১ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ২০ দিনের কারাদণ্ড দেন।

মনিকা বলে, ‘আমি শুক্রবার দুপুরে জানতে পারি সন্ধ্যায় আমার বিয়ে হবে। আমি বিকেলে বান্ধবী কনিকা ও ফারজানার সঙ্গে কোর্টে যাই। সেখানে কাউকে না পেয়ে আমতলী থানায় এসে বড় স্যারকে সব খুলে বলি। আমি লেখাপড়া করে অনেক বড় হতে চাই।’

আমতলী থানার ওসি আবুল বাশার বলেন, ‘আমি সব ঘটনা শুনে পুলিশ পাঠিয়ে বর, বরের মা ও কনের মাকে আটক করি। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সোপর্দ করি।’

ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক সহকারী কমিশনার (ভূমি) কমলেশ মজুমদার বলেন, ‘এর আগে অনেক বাল্যবিয়ে বন্ধ করেছি। সার্বিক বিবেচনায় আমার কাছে এটি একটি হৃদয়বিদারক ঘটনা। ধন্যবাদ জানাই সাহসী মেয়ে মনিকাকে। এতো অল্প বয়সে নিজের বিয়ে ভেঙে দৃষ্টান্ত স্থাপন করল।’

আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনিরা পারভীন বলেন, ‘সাহসী মেয়ে মনিকা যতদূর লেখাপড়া করতে চায় আমরা তাকে সহযোগিতা করব।’