সংরক্ষিত বনাঞ্চলে অর্ধশত অবৈধ করাতকল
নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বরগুনার তালতলীতে ম্যানগ্রোভ টেংরাগিরি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ভেতরে অবৈধভাবে একের পর এক স’মিল (করাতকল) গড়ে উঠছে। বন অধ্যাদেশ আইনে বনাঞ্চলের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে স’মিল বসানোর বিধান নেই। তবে সেই আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চলছে এসব স’মিল।
প্রশাসন বলছে বন থেকে ১০ কিলোমিটারের ভিতরে কোন স’মিলের মালিককে সরকারিভাবে অনুমোদন দেওয়া হয়নি। মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে অবৈধ স’মিল বন্ধ করে দেওয়া হবে।
উপজেলা বন বিভাগ অফিস সূত্র জানায়, উপজেলায় সরকারি ম্যানগ্রোভ টেংরাগিরি সংরক্ষিত বনাঞ্চল রয়েছে ১৩ হাজার একর। রেঞ্জ অফিসের জানা মতে তালতলীতে ৩২টি স’মিল আছে। কিন্তু সরকারি তালিকায় নিবন্ধনকৃত ১টি স’মিলে কাগজপত্র আছে তাদের কাছে। উপজেলাসহ বনাঞ্চল ১০ কিলোমিটারের ভিতরে ৫০-৬০টির বেশি অবৈধ স’মিলের নেই কোনো কাগজপত্র।
বুধবার (২১ আগস্ট) বিকেলে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সকিনা বিট অফিসের আওতায় লাউপাড়া বাজারসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় বনের ভেতরে বা কাছাকাছি যত্রতত্র ১০ থেকে ১২টি করাতকল স্থাপন করা হয়েছে। এসব করাতকলে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন শ্যালো মেশিন লাগিয়ে তা চালানো হচ্ছে। এতে চেরাই করা হচ্ছে সুন্দুরি গাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বনের কাছাকাছি একটি প্রভাবশালী মহলের দাপটে অবৈধভাবে এসব স’মিল গড়ে উঠেছে। কেউ কেউ সরকারি খাল দখল করে এসব স’মিল পরিচালনা করছেন।
লাউপাড়া বাজার থেকে টেংরাগিরি সংরক্ষিত বনাঞ্চল ৩ কিলোমিটার দূরত্বে। সেখানেই দেখা যায় জলিল ফকিরের একটি অবৈধ স’মিল।
এ বিষয়ে স’মিলের মালিক জলিল ফকিরের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের এখানে বনের কোনো প্রকার গাছ চেরাই করা হয় না। তবে আমরা রেঞ্জ অফিসে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছি। বনের কাছাকাছি স’মিলের অনুমতি দেওয়া হয় না জানালে এ বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, প্রভাবশালী মহলের কিছু লোক অবৈধভাবে স’মিল করে বনের ১০ কিলোমিটারের ভিতরে দীর্ঘদিন এ ব্যবসা করে যাচ্ছে। তারা যদি প্রশাসনকে ম্যানেজ না করতো তা হলে কিভাবে অবৈধভাবে স’মিল চালায়? প্রায় প্রতিটি স’মিল সড়কের পাশেই, সব ধরনের অফিসার এই সড়ক দিয়েই আসা-যাওয়া করেন। তারা কি চোখে কখনও দেখে না এসব স’মিল?
এ বিষয়ে আমতলী রেঞ্জ (তালতলী) কর্মকর্তা নয়ন মিত্র বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, উপজেলা নিবার্হী অফিসার বরাবর স’মিলের জন্য মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করার আবেদন করা হয়েছে। খুব দ্রুত অবৈধ স’মিলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তালতলী উপজেলা নিবার্হী অফিসার দীপায়ন দাস শুভ বলেন, বন বিভাগে অবৈধ স’মিলের তালিকা চাওয়া হয়েছে। তালিকা পেলে দ্রুত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে অবৈধ স’মিল বন্ধ করে দেওয়া হবে।