হাজীগঞ্জ মৎস্য অধিদফতরে অনিয়ম: ৩ দিনের প্রশিক্ষণ একদিনেই শেষ

  • মনিরুজ্জামান বাবলু, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, চাঁদপুর
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

প্রশিক্ষণ নিতে আসা জেলেরা, ছবি: সংগৃহীত

প্রশিক্ষণ নিতে আসা জেলেরা, ছবি: সংগৃহীত

চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলায় মৎস্য অধিদফতরে চলছে চরম অনিয়ম। তিন দিনের ট্রেনিং প্রোগ্রাম এক দিনেই ফটোসেশনের মাধ্যমে শেষ হয়েছে। সেই সঙ্গে অংশ নেওয়া জেলেদের জন্য সরকার নির্ধারিত ভাতার অর্ধেক টাকা কেটে রাখারও অভিযোগ উঠেছে। জেলেদের তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা মিলল ৬০ ভাগ জেলেই প্রকৃত জেলে নয়। তালিকায় পাওয়া জেলেদের অনেকেই অন্য পেশার সঙ্গে জড়িত। প্রকৃত অর্থে তারা কেউই জেলে নন। তবে প্রকৃত জেলেদের সঙ্গে ভুয়া জেলেরা মিলেমিশে মৎস্য অধিদফতর থেকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন।

রোববার (১৮ আগস্ট) দুপুরে সরেজমিনে হাজীগঞ্জ মৎস্য কর্মকর্তার অফিসে গিয়ে জানা গেছে, হাজীগঞ্জ উপজেলায় ১ হাজার ৮২৫ জন নিবন্ধিত জেলে রয়েছেন। তাদেরকে নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। তবে এবারের প্রশিক্ষণে তাদেরকে সরকারের বরাদ্দকৃত তিনদিনের প্রশিক্ষণ মাত্র একদিনেই দেওয়া হয়েছে। আবার তিনদিনের ভাতার অর্ধেক টাকা কেটে রেখেছেন মৎস্য কর্মকর্তা।

বিজ্ঞাপন

কার্যালয়ে থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, হাজীগঞ্জ উপজেলার ১২ ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম থেকে তৈরি করা তালিকায় এ পর্যন্ত ৬৬০ জনকে সেলাই মেশিন, ৪৭০ জনকে বেড় জাল, ১০০ জনকে ছাগল পালনের জন্য ২০০টি ছাগল দেয়া হয়েছে। মোট ১ হাজার ২৩০ জনকে এমন সুবিধার আওতায় আনা হয়েছে। বর্তমানে ৬০ জনের প্রশিক্ষণ চলছে। চলমান প্রশিক্ষণ ৩ দিন হওয়ার কথা থাকলেও মাত্র ১দিন প্রশিক্ষণ শেষে ভাতা প্রদান করা হয়।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Aug/18/1566120771089.jpg

কয়েকজন প্রশিক্ষণার্থী নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, ‘প্রশিক্ষণে তেমন কিছু শেখানো হচ্ছে না। কয়েকটি ছবি তুলে শুধু ফটোসেশনেই শেষ হয়ে যায় প্রশিক্ষণ। আমরা জেনেছি তিনদিনের প্রশিক্ষণ। প্রতিদিনের ৩০০ টাকা হিসেবে মোট ৯০০ টাকা দেয়ার কথা। অথচ একদিন প্রশিক্ষণ দিয়ে তিনদিনের রেজুলেশন খাতায় স্বাক্ষর নিয়ে ৯০০ টাকার স্থলে দেওয়া হয়েছে মাত্র ৪৫০ টাকা। বাকি ৪৫০ টাকা কেটে রাখা হয়েছে।'

প্রশিক্ষণ নিতে আসা দীপক হালদার বলেন, 'তিনি আড়তের পার্টনার। তিনি প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। রঞ্জন দাস জানান, তিনি সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালক। সেও জেলে হিসেবে কার্ড নিয়ে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। ভাতাসহ সকল সুবিধাও নেবেন। বিভিন্ন অভিযোগের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে হাজীগঞ্জ উপজেলা ভারপ্রাপ্ত মৎস্য কর্মকর্তা মাহবুব মোস্তফা জানান, সময়ের অভাবে তিনদিনের প্রশিক্ষণ একদিনে শেষ করেছি।'

ভাতা সংক্রান্ত প্রসঙ্গে বলেন, অফিসিয়াল কাগজপত্রসহ অনেক খরচ আছে। তাই ৪৫০ টাকা কেটে রাখা হয়েছে। জেলেদের তালিকায় ভুয়া জেলে প্রায় ৬০ ভাগ। এমন প্রশ্নের জবাবে এই মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, ‘তাদের স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলতেই বিভিন্ন পেশার লোকজনকে জেলে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। হাজীগঞ্জ উপজেলায় মোট ১ হাজার ৮২৫ জন নিবন্ধিত জেলে রয়েছে। অথচ এসব জেলেদের মধ্যে প্রায় ৭৫ ভাগ বিভিন্ন পেশার রয়েছেন। এরা অনেকেই মৎস্য ব্যবসায়ী, ভ্যান চালক, রিকশা চালক, আড়তের পার্টনার ও দিন মজুর। এখানে কিছুই করার নেই।