বুধবার থেকে রাঙামাটিতে অনির্দিষ্টকালের নৌ ধর্মঘট
কাপ্তাই হ্রদে যাত্রী পরিবহনে বেসরকারি উদ্যোগে চলাচলকারী স্পিডবোট ও স্টাফবোট পরিবহন সার্ভিস বন্ধের দাবিতে বুধবার (১০ এপ্রিল) থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিবহণ ডেকেছে রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদে চলাচলকারী লঞ্চ মালিক সমিতি তথা বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল (যাত্রী পরিবহণ) সংস্থা’র রাঙামাটি জোন কর্তৃপক্ষ।
মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) সন্ধ্যায় সংস্থার রাঙামাটির চেয়ারম্যান মঈন উদ্দিন সেলিম স্বাক্ষরিত উক্ত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, রাঙামাটি লেকে প্রায় শতাধিক অবৈধ স্পিডবোট ও স্টাফ বোট নিজেরাই সময়সূচী দিয়ে যাত্রী পরিবহন করায় লঞ্চ মালিকদের চরম আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে যা সম্পূর্ণ বেআইনি ও অবৈধ। অবৈধ স্পিডবোট ও স্টাফ বোটের শ্রমিকদের সাথে যাত্রী নিয়ে টানাটানিকে কেন্দ্র করে নৌযান শ্রমিকদের সাথে প্রতিদিন হাতাহাতি ও মারামারি হচ্ছে। এতে নৌ-যান শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ হয়ে বুধবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য নৌ-ধর্মঘট পালন করবে বলে লঞ্চ মালিকরা জানায়।
প্রেস বিজ্ঞপ্তির শেষের প্যারায় উল্লেখ করা হয়, বুধবার শুরু হওয়া নৌ-ধর্মঘটের মাধ্যমে যদি আমাদের দাবি মানা নাহয় তাহলে বৃহস্পতিবার থেকে এই ধর্মঘটকে সমর্থন জানিয়ে সড়ক ও নৌযান মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ সকল পরিবহন বন্ধ রেখে একসাথে ন্যায্য দাবি আদায়ের ঘোষণা দিবে।
এদিকে, বিষয়টি নিয়ে রাঙামাটির জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদ এর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি জানান, এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা-বানোয়াট এবং বেআইনি অভিযোগ জনাব সেলিমের। রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নিজের গুরুতর অসুস্থ স্ত্রীকে দেখতে সেখানে অবস্থান করছেন জানিয়ে জেলা প্রশাসক প্রতিবেদককে বলেন, আমি এই বিষয়টি নিয়ে একাধিক বৈঠক করেছি। সর্বশেষ গত এক সপ্তাহ আগেও বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে, বৈঠকে নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ বিআইডব্লিউটিএ এবং ডিজি শিপিংয়ের প্রতিনিধিও অংশগ্রহণ করেছিলেন। এসময় উভয় পক্ষই সমঝোতায় এসেছিলেন। এর পরবর্তী আমি আবারো জনাব মঈন উদ্দিন সেলিম সাহেবকে ডেকে পহেলা বৈশাখ ও বিজু অনুষ্ঠানের পর্যন্ত শান্ত থাকার জন্যে অনুরোধও করেছিলাম। কিন্তু তিনি বিষয়টি সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে এমন একটি অভিযোগ জানালেন যাহা এক্কেবারেই মিথ্যাচার।
জেলা প্রশাসক জানান, আমি এ পর্যন্ত সকল প্রকার সার্বিক সহযোগিতা করে এসেছি। কিন্তু দুঃখজনকভাবে অনাকাঙ্ক্ষিত কর্মসূচীর ডাক দিয়ে সেলিম যদি মনে করেন, রাঙামাটির প্রশাসন তার কথামতো চলতে হবে তাহলেতো বিষয়টি তেমনভাবে হয় না।
অপরদিকে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন সংস্থা বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করা হলে সংস্থাটির চট্টগ্রামের ডেপুটি ডিরেক্টর নয়নশীল জানিয়েছেন, আমরা উভয় পক্ষের সাথে আলোচনা করেছি এবং স্পিডবোট মালিকগণ আইনানুগভাবে নিয়মকানুন মেনে তাদের বোট চালাবেন এ ক্ষেত্রে কয়েকটা দিন সময় প্রার্থনা করেন তারা। এতে সকলেই একমত পোষণ করেছিলেন। কিন্তু আকস্মিকভাবে নৌ-ধর্মঘটের ডাক দেওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক এবং এটা জনদূর্ভোগ বাড়াবে। এই ধরনের কর্মসূচী দিয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়া মোটেও যৌক্তিক নয় বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
রাঙামাটির দুইটি উপজেলা ছাড়া বাকি আটটি উপজেলা যোগাযোগের অন্যতম প্রধান রুট হলো কাপ্তাই হ্রদ। পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যতম প্রধান উৎসব বিঝু-সাংগ্রাই-বৈসাবিনসহ পহেলা বৈশাখ অনুষ্ঠানের সময় এই ধরণের নৌ-পরিবহন ধর্মঘট ডাকায় চরমভাবে জনদূর্ভোগে পড়বে এ অঞ্চলের বাসিন্দারা।