দুপুর গড়ালেই ছুটির ঘণ্টা
এক সময়ে মাত্র পাঁচশত টাকা মাসিক বেতনে চাকরি করা একজন শিক্ষকের এখন বেতন প্রায় ২৫ হাজার টাকা। সময়ের বিবর্তনে মানুষ গড়ার কারিগরদের বেতন ভাতা ২০১৩ সাল থেকে বৃদ্ধি পায়। এতে (শিক্ষকদের) জীবনমানের উন্নয়ন হলেও বাড়েনি বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষার মান।
স্থানীয় শিক্ষা দফতরের তেমন কোনো নজরদারি না থাকায় গ্রাম পর্যায়ে অবস্থিত উপজেলার অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চিত্র খুবই হতাশাব্যঞ্জক। দুপুর গড়ালেই অধিকাংশ বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা ফাঁকি দিয়ে ধীরে ধীরে একে একে বেরিয়ে পড়েন নিজ নিজ গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। ফাঁকি দেয়াটা যেন অনেকটা রেওয়াজেই পরিণত হয়েছে সুন্দরবন সংলগ্ন দেশের সর্ব দক্ষিণে অবস্থিত এ উপজেলার শিক্ষকদের। যার ফলে দিন দিন স্কুলগুলোতে কমছে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা। এতে ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দাসহ অভিভাবকেরা। তবে শিক্ষার মান উন্নয়ন ও শিক্ষকদের কাজ কর্ম তদারকির জন্য প্রতিটি স্কুলে ম্যানেজিং কমিটি থাকলেও তা এখন অকার্যকর।
সরেজমিনে শরণখোলা উপজেলার ৩০ নং বগী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ১০০ নং দক্ষিণ খুড়িয়াখালী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মুলগেইটে তালা ঝুলতে দেখা গেছে দুপুর ২টার দিকে। বিদ্যালয় দু’টিতে কোনো কোলাহল নেই। নেই শিক্ষক, শিক্ষার্থী। এ যেন সরকারি ছুটি উপভোগের কোন চিত্র। বগী ও খুড়িয়াখালী এলাকার বাসিন্দা আ. রহিম (৪৫) ও সমাজ সেবক রোকসানা বেগম (৩৫) ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘স্কুল শুরু হয় সকাল ৯ টায় এবং ছুটি ৪টা ৩০ মিনিটে হওয়ার কথা থাকলেও সকাল ১০-১১টার দিক ছাড়া শিক্ষকেরা শ্রেণী কক্ষে আসেন না।’
তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষকেরা স্কুলে এসে নামমাত্র দু’একটি ক্লাস নিয়ে ঘড়ির কাটায় দুপুর একটা/দেড়টা বাজলেই বেশিরভাগ দিন স্কুল বন্ধ করে ধীরে ধীরে সবাই বেরিয়ে পড়েন। এসব স্কুলে ছেলে-মেয়েদের পড়ানোর চেয়ে নদীতে মাছ ধরতে ও জঙ্গলে কাঠ কাটতে পাঠানো ভালো। মাস শেষে সরকারি ২৫/৩০ হাজার টাকা করে বেতন তুললেও ছাত্র/ছাত্রীদের তেমন কোনো উপকার হচ্ছে না। তাদের মতে প্রাথমিক শিক্ষার ভীত মজবুত করতে হলে কর্মরত শিক্ষক/শিক্ষিকাসহ সংশ্লিষ্টদের কঠোর নজরদারির মধ্যে রেখে তাদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। অন্যথায় নতুন প্রজন্ম মেধাশুণ্য হয়ে পড়বে।’
এছাড়া বিদ্যালয়গুলোতে ম্যানেজিং কমিটি থাকলেও তারা কোনো খোঁজ খবরই রাখেন না। শিক্ষা বিভাগের এ সকল অনিয়ম দুর্নীতি দেখার যেন কেউই নেই।
এমনকি সরকারি স্কুলগুলোর শিক্ষকরা তাদের ইচ্ছা মাফিক স্কুল চালানোর ফলে ব্যক্তি মালিকানাধীন কিন্ডার গার্টেনগুলোতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ভিড় বাড়ছে।
এ ব্যাপারে ওই বিদ্যালয় দু’টির প্রধান শিক্ষক মঞ্জুরুল আহসান ও মমতাজ খানম বলেন, ‘শনিবার শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম থাকায় শিক্ষা কর্মকর্তাদের অবহিত করে একটু আগেভাগে ছুটি দিয়েছেন।’
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘নিয়মের বাহিরে আগেভাগে স্কুল ছুটি ও বন্ধের কোনো বিধান নেই। খোঁজ-খবর নিয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।'