নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে সুন্দরবনে চলছে কাঁকড়া আহরণ
প্রজনন মৌসুমে সুন্দরবনের কাঁকড়া আহরণ নিষিদ্ধ থাকলেও তা কোনভাবেই কার্যকর হচ্ছে না। বনবিভাগ ও প্রসাশনের ঢিলেঢালা নজরদারীর সুযোগ নিয়ে অসাধু জেলেরা প্রাকৃতিক এ সম্পদের প্রজননকে বাধাগ্রস্থ করে চলেছে। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৮ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সুন্দরবন থেকে কাঁকড়া আহরণ পুরোপুরি নিষিদ্ধ করেছে বন বিভাগ। কিন্তু বন সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকার এক শ্রেণির অসাধু জেলে ও মহাজনদের অপতৎপরতার কারণে অবৈধভাবে কাঁকড়া আহরণ বন্ধ হচ্ছে না। অপরদিকে ঘেরে/খামারে কাঁকড়া ছাড়া বা বিক্রির নামে বন সংলগ্ন এলাকার কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী সংশ্লিষ্ট উপজেলা মৎস্য দপ্তরের অনুমতি নিয়ে সুন্দরবন থেকে অবৈধ পথে আহরিত কাঁকড়া হালাল করছেন।
বন বিশেষজ্ঞদের মতে কাঁকড়ার প্রজনন মৌসুমে আহরণ বন্ধ করা না গেলে হুমকির মুখে পড়বে এ প্রাকৃতিক সম্পদ। তাই এ সম্পদ রক্ষায় আরও ভূমিকা পালন করতে হবে বন বিভাগ ও প্রসাশনকে। প্রজনন মৌসুম কাঁকড়া আহরণ বন্ধ না হলে উৎপাদন ব্যবস্থা বাধাগ্রস্থ হওয়ার পাশাপাশি এ সম্পদ রক্ষা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।
গত ১ মাসের ব্যবধানে বন বিভাগ, মৎস্য বিভাগ, কোস্ট গার্ড ও পুলিশ বন সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকায় পৃথক পৃথক অভিযান চালিয়ে অবৈধভাবে আহরণকৃত প্রায় ৮০০ কেজি কাঁকড়াসহ ১০ জন অসাধু জেলেকে আটক করেছে। পরে আটককৃতদের অর্থদণ্ড দেয়ার পাশাপাশি আহরিত কাকড়া সুন্দরবনের বিভিন্ন নদী ও খালে ছেড়ে দেয়া হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সুন্দরবনের নদ-নদী ও জলাভূমিতে বেড়ে ওঠা সব ধরণের কাঁকড়া প্রতি শুষ্ক মৌসুমের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি এই দুই মাসের জন্য আহরণ, মজুদ, বিক্রি ও পরিবহণ নিষিদ্ধ করা হয়।
বন বিভাগের মতে, নদ-নদী ও জলাভূমিতে বেড়ে ওঠা দেশের রফতানি পণ্য শিলা কাঁকড়াসহ সব ধরণের কাঁকড়ার প্রজনন মৌসুম।
এ সময়ের মধ্যে মা কাঁকড়ার ডিম থেকে প্রচুর পরিমাণ ছোট ছোট কাঁকড়ার জন্ম নেয়। তাই মা কাঁকড়া রক্ষার জন্য প্রতি বছর সুন্দরবন থেকে দু’মাসের জন্য কাঁকড়া আহরণ নিষিদ্ধ করা হয়। কাঁকড়া প্রজননের জন্য সবেচেয় বড় ভান্ডার সুন্দরবন।
মৎস্য বিশেষজ্ঞদের মতে, কাঁকড়া নদী বা খালে বেড়ে উঠলেও এর প্রজনন হয় সাগরের মোহনায়। তাই এই সময় কাঁকড়া ডিম দেয়ার উদ্দেশ্যে সাগরের দিকে ছুটতে থাকে। এছাড়া প্রজনন মৌসুমে সুন্দরবনের পানি থেকে সাগরের পানি গরম এবং নদীর পানি থেকে সাগরের পানি লবণাক্ততা বেশি হওয়ায় সুন্দরবনের নদী ও খাল থেকে মা কাঁকড়া সাগরের মোহনায় ছুটতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ছুটে যাওয়ার মুহূর্তে যাতে তাদের কেউ ধরতে না পারে সেজন্য কাঁকড়া অভয়ারণ্য সুন্দরবনের মা কাঁকড়া রক্ষায় প্রতিবছর এ নিষেধাজ্ঞা জারি করে বনবিভাগ।
এছাড়া মা কাঁকড়া যখন ডিম দেয় তখন তাদের ধরা খুবই সহজ। ওই মুহূর্তে কাঁকড়াগুলো খুবই ক্ষুধার্থ ও দুর্বল থাকে। সামনে যে কোন খাবার দেয়া হলে তা দ্রুত খাবার জন্য এগিয়ে আসে। যার ফলে প্রজনন মৌসুমে খুব সহজেই কাঁকড়া শিকার করতে পারেন জেলেরা।
বাগেরহাটের বন সংলগ্ন উপজেলার উত্তর রাজাপুর গ্রামের বাসিন্দা কাঁকড়া ব্যবসায়ী জেলে মোতালেব হাওলাদার বলেন, সুন্দরবন থেকে চোরাই পথে কাঁকড়া আহরিত হচ্ছে। স্থানীয় আড়তগুলো থেকে তিনি কাঁকড়া ক্রয় করে পরবর্তীতে উপজেলার বিভিন্ন বাজারে ২০০/৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শরণখোলা ও মোংলার কয়েকজন মৎস্য ব্যবসায়ী অভিযোগ করে বলেন, বনবিভাগের কতিপয় কর্মকর্তাদেরকে ম্যানজে করেই একটি চক্র সুন্দরবনের নদী খাল থেকে বেআইনিভাবে কাকড়া ধরছে। আমরা খবর পেয়ে বনবিভাগকে জানালে তারা বলেন চুরিচামারি করে কেউ গেলে আমরা কি করবো, এতো বড় বন তো আর ঢেকে রাখা সম্ভব না।
এ বিষয়ে বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা বিনয় কুমার রায় বলেন, প্রজনন মৌসুমে কাঁকড়া আহরণ পুরোপুরি বন্ধ করা না গেলে এ সম্পদ রক্ষা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। তবে কাঁকড়ার প্রজনন রক্ষায় সম্মিলিতভাবে পদক্ষেপ জরুরী।
পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের সহকারি বন সংরক্ষক মোঃ জয়নাল আবেদীন বলেন, পূর্বের তুলনায় সুন্দরবনে কাঁকড়া নিধন এখন কম হচ্ছে। তবে কিছু অসাধু জেলেরা বেশি লাভের আশায় এমন অনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন। বনবিভাগ ওই চক্র কিংবা অসাধু জেলেদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে ইতোমধ্যে নানা অভিযান শুরু করেছে বলেও জানান তিনি।