শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করাই শ্রেয়

  • ড. সুলতান মাহমুদ রানা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

পৃথিবীর বহু দেশে করোনা ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশও এ থেকে বাঁচতে পারেনি। গত কয়েক দিনে বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণের মনে করোনাভাইরাস নিয়ে বেশ আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। আতঙ্কের ভিত্তিতে ইতোমধ্যেই সকলেই সতর্ক অবস্থান গ্রহণ শুরু করেছে। স্পেন, আমেরিকা, ইংল্যান্ড, পর্তুগাল করোনাভাইরাস মোকাবিলায় জরুরি অবস্থা জারি করেছে। যুক্তরাষ্ট্র গোটা বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করছে। ইতালি ও ইংল্যান্ড ইতোমধ্যে আলাদা দ্বীপ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনাভাইরাসকে মহামারি হিসেবে ঘোষণা করেছে। অবস্থা কতটা ভয়াবহ হলে উন্নত দেশগুলো জরুরি অবস্থা জারি করতে পারে!

ভারত বাংলাদেশের সীমানা বন্ধ করে দিয়েছে। সিঙ্গাপুর আক্রান্ত দেশগুলো থেকে ভ্রমণে কড়াকড়ি নজরদারি করছে। আক্রান্ত দেশগুলো থেকে সিঙ্গাপুরে এলে সুস্থ বা অসুস্থ যে অবস্থাই হোক না কেন বাধ্যতামূলক ১৪ দিনের Stay Home Notice (SHN) জারি করেছে। চীনের সঙ্গে অনেক আগেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অন্য সব দেশের। ফিলিপাইন গত সপ্তাহে বাংলাদেশের মানুষকে তার দেশে নিষিদ্ধ করছে। অবশ্য ইতোমধ্যে বাংলাদেশও বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

বিজ্ঞাপন

তা সত্ত্বেও আমরা ভাবছি করোনা ছড়িয়ে পড়লে বাংলাদেশের কী অবস্থা হবে! ভাবতেই আঁতকে উঠছি। আমাদের এই মহাবিপর্যয় থেকে রক্ষা পেতে সরকারের এখনই গুরুত্বপূর্ণ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করাসহ রাজনৈতিক, ধর্মীয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক জনসমাবেশ এখনই বন্ধ না করলে আমাদের ভাগ্যে বড় বিপর্যয় নেমে আসবে। এখনও পর্যন্ত যারা এ ভাইরাসকে অবহেলা করেছে, তারাই আজ আক্রান্ত। তবে আমি খুবই আতঙ্কিত কারণ সারা বিশ্ব যখন করোনাভাইরাস মোকাবিলা করতে হিমশিম খাচ্ছে। প্রতিটা রাষ্ট্র যেখানে ধার্মিক, অধার্মিক, সরকারি দল, বিরোধী দল, বুদ্ধিজীবী সবাই এক কাতারে এসে করোনাভাইরাস মোকাবিলা করছে, সেখানে আমাদের দেশে এ নিয়ে চলছে রাজনীতি। ভিন্ন দলের ভিন্নমত। তারা এই দুর্যোগকালীনও এক হতে পারছে না।

জানি না কবে আবার সবকিছু স্বাভাবিক হবে। আমার শিশু সন্তান রাজশাহী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুলের প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী। আজ থেকে ওদের ক্লাস টেস্ট (সিটি) পরীক্ষা শুরু হয়েছে। পরীক্ষার ইস্যু না হলে কোনোভাবেই ওকে স্কুলে পাঠাতাম না। বেশ কয়েকদিন থেকে শুনছিলাম শিশুরা করোনায় আক্রান্ত হবে না। কিন্তু আজ সকালেই কোনো একটি সংবাদ থেকে জানলাম নবজাতক একজন শিশু করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। তবে জানা গেছে এ ভাইরাসে মূলত ১৮-৩৫ বছরের ব্যক্তিরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা সকলেই এই বয়সসীমার মধ্যে রয়েছে। আমার ক্লাসে প্রতিদিন ১১০ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত থাকে। বহু শিক্ষার্থীর সর্দি-কাশি রয়েছে। তাদেরকে নিশ্চয়ই শ্রেণিকক্ষ থেকে আমি বের করে দিতে পারি না। কারণ তাদের অধিকার রয়েছে ক্লাসে বসে থাকার। প্রকৃতপক্ষে শিশু-কিশোর, যুবক, বৃদ্ধ কেউই করোনাভাইরাস থেকে মুক্ত থাকার গ্যারান্টি দিতে পারবে না। পরিস্থিতি কোনোভাবেই অনুকূলে নেই।

করোনা মোকাবিলায় সরকার বেশ সতর্ক রয়েছে। ইতোমধ্যেই একটি মোটা অঙ্কের বাজেটও বরাদ্দ করেছে। মুজিববর্ষের উদ্বোধনী জাকজমক অনুষ্ঠানটিও স্থগিত করা হয়েছে। খুব সচেতনভাবেই সরকারের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে দেখছি। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার দাবিতে আন্দোলনে নামলেও এ বিষয়ে সরকারকে কোনো ভ্রুক্ষেপ করতে দেখা যাচ্ছে না। ফলে নানা ধরনের বিভ্রান্তি ও গুজব তৈরি হচ্ছে। এমনকি ইস্যুটিতে রাজনীতির ফ্লেভার দেয়া হচ্ছে।

আমি মনে করি এটি একটি আন্তর্জাতিক মহামারি। এই সমস্যা মোকাবিলায় সকল সম্ভাব্য সমাধান গ্রহণ করা উচিত। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সাময়িকভাবে বন্ধ করলে কোনোভাবেই দেশ ও জাতির বড় কোনো ক্ষতি হবে না। বরং সকলের দাবি সত্ত্বেও সেটি আমলে না নেওয়ায় পরবর্তীতে করোনাভাইরাস নিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ঘটে গেলে যার মাশুল আমাদের সবাইকে দিতে হবে। কাজেই সরকারের উচিত সমস্যা সমাধানের জরুরি পদক্ষেপ হিসেবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জরুরি ভিত্তিতে সাময়িক বন্ধ রাখা।

ড. সুলতান মাহমুদ রানা: সহযোগী অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।