‘পেশা নয়, শিক্ষকতা আমার স্বপ্ন’
গত ৩ সেপ্টেম্বর বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী তাইয়্যেবুন নাহার মিমি। ছোটবেলা থেকে লালিত স্বপ্ন আজ তার কাছে বাস্তব। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে তিনি পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন।
বার্তা২৪.কমের সঙ্গে আলাপকালে মিমি বলেন, শিক্ষকতা আমার স্বপ্ন, পেশা নয়। এটা আমার খুব আগ্রহের, খুব আকাঙ্ক্ষিত এক যাত্রা। এই যাত্রায় শামিল হয়ে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি। জাতির সেবার প্রতি দায়িত্ববোধ আরও বেড়ে গেল।
তিনি বলেন, আমি যখন হাইস্কুলে পড়ি আমার আপু তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন। বাসায় যখন উনি এসে ওনার শিক্ষকদের গল্প করতেন। আমি শুনে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হতে চাইনি। খুব ইচ্ছে হত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মত মহৎ কিছু হতে। আর পারিবারিকভাবে শিক্ষকতা পেশার সঙ্গে একটা সংযোগ আমাদের আছে। আমাদের গ্রামের বাড়িটা পরিচিত ‘সেকান্দার মাস্টারের বাড়ি’ নামে। তিনি আমার দাদা। আমার বাবাও শিক্ষকতা দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন। আমার বড় দুইবোন শিক্ষক। ছোটবেলা থেকে আজ পর্যন্ত আশ্চর্যজনকভাবে আমি অসংখ্য শিক্ষকদের বিশেষ সুদৃষ্টি ও মমতা পেয়েছি। একারণেই শিক্ষক হতে চেয়েছি সব সময়।
তাইয়্যেবুন নাহার মিমি বলেন, ছেলেবেলা থেকেই নাচ, গান, আবৃত্তি, নাটক, আঁকাআঁকি আমাকে মানসিক শান্তি দিত। পড়াশোনার সঙ্গে সমান তালে আমি এসবের সঙ্গে সংযুক্ত থেকেছি। বেশিরভাগ সময় পড়াশোনায় ভালো করলে সহশিক্ষা কার্যক্রমে আমরা পিছিয়ে পড়ি। আমি পিছিয়ে পড়তে চাইনি। থিয়েটার কুবি, অনুপ্রাস, শুভসংঘের সঙ্গে আমার সংযোগ ছিল বেশি। নাটকের স্ক্রিপ্ট লেখা, অভিনয় করার পাশাপাশি অনুষ্ঠান পরিচালনা ও সঞ্চালনা করার কাজগুলো এখানেই করেছি। এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সাংস্কৃতিক চর্চা আমার ব্যক্তিত্ব ও আচরণকে আমূল বদলে দিয়েছে।
তিনি জানান, গবেষণাধর্মী পড়াশোনার চেয়ে আমি সৃজনশীল রচনার প্রতি আগ্রহী বেশি। তবে একাডেমিক পর্যায়ে গবেষণার বিকল্প নেই বলে নিজেকে সেভাবেই প্রস্তুত করেছি এবং করছি। বাংলাদেশের নামকরা কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আর্টিকেল প্রকাশের চেষ্টা করছি। বর্তমানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি।
মিমি আরও জানান, প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনার ওপর জোর দিতে হবে। নিজেকে প্রাতিষ্ঠানিক ও সাংস্কৃতিক উভয় পর্যায়েই দক্ষ করে তোলা উচিত। ব্যক্তিগত বা পেশাগত উন্নয়নের জন্য পড়াশোনা ও নিরলস পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই। আমি ২০২২ সালে মাস্টার্স পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েই বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরিচালিত একটি ইংরেজি মাধ্যম কলেজে শিক্ষকতায় যোগদান করি। এরপর সারাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে থাকি, পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে থাকি। বিসিএসের প্রস্তুতিও নিচ্ছিলাম।
তিনি জানান, আমি যে মূলমন্ত্রে বিশ্বাসী তা হলো ‘সফলতার শর্টকাট নেই, সততার ঊর্ধ্বে পন্থা নেই’। সুতরাং পড়াশোনা আর পরিশ্রমের পাশাপাশি সৎ থাকাটা জরুরি। তাহলে সময়ই পৌঁছে দেবে সফলতার বার্তা।