‘কোনো শিক্ষক যেন ছুটি ছাড়া এই স্টেশনের বাইরে না থাকে’
ক্যাম্পাস
‘কোনো শিক্ষক বা অধ্যাপক যেন ছুটি ছাড়া এই স্টেশনের (বিশ্ববিদ্যালয়ের) বাইরে না থাকে’ বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ।
তিনি বলেন, শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে বলবো তারা যেন ঢাকা কেন্দ্রিক না হয়। ঢাকায় থাকুক তবে ক্লাস থাকলে তা যেন মিস না হয়। কোনো অধ্যাপক বা শিক্ষক যেন ছুটি ছাড়া এই স্টেশনের বাইরে না থাকে। এই কালচার আমাদের গড়ে তুলতে হবে।
উপাচার্য নকীব নসরুল্লাহ বলেন, আজকে যিনি সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন তার মুখের এই প্রতিশ্রুতিমূলক বক্তব্যই আমি শুনতে চেয়েছিলাম। আমি সাংবাদিক ভাইদের বলবো তা রেকর্ড করে যেন সভাপতি এবং ডিন মহোদয়ের নিকট দিয়ে যায়। এতে আমাদের কার্যক্রম এবং চলার পথ আরো সহজ হবে।
নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত সভাপতির উদ্দেশ্যে বলেন, তিনি ডিপার্টমেন্টকে সামনে অগ্রসর করার জন্য যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত তা গ্রহণ করবেন। প্রাক্তন সভাপতির কাজের সাথে সংযোজন করে যুব জিজ্ঞাসার মাধ্যমে তিনি বিভাগকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন।
এছাড়াও উপাচার্য বলেন, আজকের এই হস্তান্তর পোগ্রাম ক্ষমতা হস্তান্তর নয়, এটি দায়িত্ব হস্তান্তর পোগ্রাম। এটি হলো চেয়ারম্যানশিপ যা পোস্ট অব রেসপনসেবলিটি। হেড অব দ্যা ডিপার্টমেন্ট যিনি তার প্রতি আহ্বান থাকবে তিনি যেন ২টার বাসে ক্যাম্পাস ত্যাগ না করেন। বিশ্ববিদ্যালয় খোলা থাকে ৪টা পর্যন্ত তাই অফিস টাইম পর্যন্ত তিনি বিভাগে অবস্থান করবেন এইটা আমার অনুরোধ
দায়িত্ব হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. এমতাজ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও থিওলজি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আ ব ম ছিদ্দিকুর রহমান আশ্রাফী, ইবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন, টিএসসিসি পরিচালক ও একাউন্টটিং বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. জাকির হোসেন, ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওবায়দুল ইসলাম, জার্নালিজম বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. রশিদুজ্জামান, অধ্যাপক ড. আব্দুল বারী, অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর হোসেন, লোকপ্রশাসন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. ফকরুল ইসলাম, ফলিত পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. শরীফ মোহাম্মদ আল রেজা, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহেদ আহমেদ এবং বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকেরা উপস্থিত ছিলেন।
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিকৃবি) প্রক্টর, রেজিস্ট্রার এবং জনসংযোগ ও প্রকাশনা কর্মকর্তার পদত্যাগসহ ৭ দফা দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বর্জন করা হয়েছে ক্লাস-পরীক্ষা ।
রোববার (২৭ অক্টোবর) সকাল থেকে তারা এই ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন শুরু করেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত শনিবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে সিকৃবি কর্তৃপক্ষ দ্বারা ২৪ অক্টোবর দিবাগত রাতের সংঘর্ষকে রাষ্ট্রদ্রোহী কর্মকাণ্ড ও তদন্তবিহীনভাবে সাধারণ শিক্ষার্থীদেরকে ‘ছাত্রলীগ সমর্থিত’ শিক্ষার্থী হিসেবে আখ্যা দেন রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আতাউর রহমান। কোনোরকম ভিত্তি প্রমাণ ও তদন্ত ছাড়া এরকম মন্তব্যের জন্য প্রক্টরিয়াল বডি ও সিকৃবি প্রশাসনকে জবাবদিহি করে তদন্তের অগ্রগতি ও উক্ত সংঘর্ষের সঙ্গে জড়িত সকলের শাস্তি নিশ্চিত, প্রক্টরিয়াল বডির প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়াসহ তাদের পদত্যাগ চাওয়া হয়।
শিক্ষার্থীদের ৭ দফা দাবিগুলো হলো-
১. বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, রেজিস্ট্রার এবং জনসংযোগ ও প্রকাশনা কর্মকর্তা খসরু মোহাম্মদ সালাউদ্দিনসহ সকলকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগ করতে হবে।
২. যারা ভিসিকে রাজনৈতিক ব্যানারে যুক্ত করে বক্তব্য প্রদান করেছ তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
৩. ২৪ অক্টোবর রাতের সংঘর্ষ ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর বহিরাগত ছাত্রদলের সম্পূর্ণ বিষয় যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের করে দ্রুত দোষীদের গ্রেফতার নিশ্চিত করতে হবে।
৪. বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ীভাবে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের প্রক্রিয়া দ্রুত নিশ্চিত করতে হবে।
৫. সংবাদপত্রে প্রকাশিত শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক দলের ট্যাগযুক্ত করা মন্তব্য প্রত্যাহার করা এবং শিক্ষার্থীদের মিথ্যা তথ্য দিয়ে ভুল দলের ট্যাগ দেওয়া সম্পর্কে যুক্তিপূর্ণ জবাব দেওয়া।
৬. শিক্ষার্থীদের অ্যানোনিমাস মার্কিং ও পরীক্ষার ফল প্রকাশের এক মাসের মধ্যে ফেলকৃত বিষয়ের ইমপ্রুভ পরীক্ষা গ্রহণ করতে হবে। শুধু রিক্যারির (একটি বিষয়ে দুবার ফেল) মাধ্যমে ইয়ার ড্রপ ব্যবস্থা বাতিল করতে হবে।
৭. বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্র সার্বক্ষণিক (২৪/৭) খোলা রাখতে হবে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ২৪ অক্টোবর ছাত্রদলের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে প্রশাসন। পরে বিভিন্ন গণমাধ্যমে শিক্ষার্থীদের রাষ্ট্রদ্রোহী হিসেবে দাবি করেছে প্রশাসন।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানান, আমরা দাবি আদায়ের জন্য আমাদের ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করেছি। গত দুইদিন আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘটিত ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমরা এটি করেছি। আমরা গত রাতে ভিসি স্যারের সঙ্গে তার বাসভবনে দেখা করতে চাইলেও তিনি আমাদেরকে সময় দেননি। আমাদের দেওয়া দাবি মানা না হলে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন থাকবে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ প্রফেসর ও চেয়ারম্যান সুলতানা আহমেদ বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলছি। সমস্যা সমাধানে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি দল ভাইস চ্যান্সেলর সাথে কথা বলবেন। আশা করি দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে। শিক্ষার্থীদের রাষ্ট্রদ্রোহী আখ্যা দিয়ে দেওয়া বিবৃতি ভুল করে দেওয়া হয়েছে এবং এ নিয়ে তদন্ত চলছে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে জানতে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার প্রফেসর ড.মোহাম্মদ আতাউর রহমানের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সুষ্ঠু রাজনৈতিক ধারা চালু রাখার আহ্বান জানিয়েছেন ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর।
রোববার (২৭ অক্টোবর ) বিকেলে বাংলাদেশ ছাত্রঅধিকার পরিষদের আয়োজনে জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী ক্যাম্পাসে কেমন ছাত্র রাজনীতি চাই শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এই কথা বলেন।
এসময় তিনি বলেন, আমাদের এমন কোনো নেতা নেই যাদের গায়ে ছাত্রলীগের নির্যাতনের চিহ্ন নেই। গতবছর এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার ওপর হামলা করে ছাত্রলীগ। আমার সারা শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে সবচেয়ে জঘন্য প্রক্টর ছিলেন গোলাম রব্বানী। তার ইঙ্গিতে ছাত্রলীগের নেতারা ছাত্রদের পেটাতো। তিনি চেয়ে চেয়ে দেখতেন। এসময় তিনি আওয়ামীলীগ ও তার দোসরদের নিষিদ্ধের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে সুষ্ঠ রাজনীতির ধারা চালু রাখতে হবে।
এছাড়া ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রচার ও মিডিয়া সম্পাদক জুবায়ের বলেন,কেমন রাজনীতি চাই এর উত্তরে আমি বলবো রাজনীতি হবে ছাত্রদের জন্য। শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে কাজ করবে এমন রাজনীতিই শিক্ষার্থীরা চায়। কিন্তু তাদের বিগত সময়ের করাল রাজনীতির ছায়া তাদের ব্রেনওয়াশ করেছে। শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের রাজনীতি করতে হবে।
ইসলামী ছাত্র আন্দোলন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ইয়াসিন আরাফাত বলেন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সহবস্থান তৈরি করতে হবে। সবাই যেন সব দলের বিরুদ্ধে আলোচনা করতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এসময় ডাকসুর কোনো বিকল্প নেই বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মোজাম্মেল হক বলেন, ৫ আগস্ট এর আগে ছিল অপরাজনীতি। রাজনীতির নামে ফাও খাওয়া, হল দখল, শিক্ষার্থী নির্যাতন করেছে ফ্যাসিবাদি সংগঠনের দোসর ছাত্রলীগ। আমরা আগামীতে এ ধরনের বর্বরতা দেখতে চাইনা। শিক্ষার্থীরা যেন প্রথম বর্ষেই হলে সিট পায় সেটি আমাদের দেখতে হবে। কোনো রাজনৈতিক দল যেন শিক্ষার্থীদের নিয়ে বাণিজ্য করতে না পারে সেটি ও আমাদের দেখতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, আমি সূর্যসেন হলের ছাত্র ছিলাম আমি দেখেছি কিভাবে কনকনে শীতের রাতে ছাত্রদের হল থেকে বের করে দিতো। ছাত্রলীগের প্রোগ্র্যাম না করার কারণে সারারাত পাশবিক নির্যাতন করতো। ছাত্ররাজনীতির নামে যেন ঘন্টার পর ঘন্টা শিক্ষার্থীদের প্রোগ্র্যাম করতে না হয় সেদিকে আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে। রাজনীতি যেন শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে কাজ করে। শিক্ষার্থীরা যেন সিটের জন্য কোনো নেতার দ্বারস্থ না হয় সেটা হল প্রশাসন কে নিশ্চিত করতে হবে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক নাসির উদ্দীন বলেন, ছাত্ররাজনীতি চাই কিনা আমি সে প্রশ্নের উত্তরে প্রথমেই বলতে চাই ছাত্ররাজনীতি দরকার আছে। যদি ছাত্র রাজনীতি না থাকে তাহলে শিক্ষার্থীরা বিগত সরকারের ১৬ বছরের বর্বরতা সম্পর্কে জানতে পারবে না। ছাত্ররাজনীতি যেন শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার অনুকূলে থাকে, তারা যেন প্রথম বর্ষেই হলে সিট পায়, তাদের যেন আবাসন নিয়ে চিন্তা করতে না হয় আমরা এমন ছাত্ররাজনীতি চাই।
৭২'র সংবিধান বাতিলের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) লাল কার্ড সমাবেশ করেছে ইনকিলাব মঞ্চ।
রোববার (২৭ অক্টোবর) বিকেল ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এ সমাবেশ করেন ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যরা।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, যে সংবিধান আপামর জনতার ভাষা বোঝে না সে সংবিধান অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। সংবিধান হবে দেশের মানুষের জন্য। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার সংবিধানকে নিজের ব্যক্তিগত সম্পদের মতো ব্যবহার করেছে। এসময় ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যদের, 'ফাঁসিবাদের সংবিধান লাল কার্ড', 'মুজিববাদ মুর্দাবাদ, ইনকিলাব ইনকিলাব' ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়।
ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য আব্দুল্লাহ আল জাবের বলেন, এই সংবিধান আওয়ামী লীগ সরকারকে সমর্থন দিয়ে গেছে। এই সংবিধান বাংলাদেশের মানুষের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। গণবিরোধী সংবিধান কখনোই ছাত্রজনতা মেনে নিবে না। মুজিববাদী সংবিধান অবিলম্বে বিলুপ্ত করতে হবে।
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ বিন হাদি বলেন, ইতিমধ্যে সংবিধান ১৭ বার সংশোধন করা হয়েছে। তাহলে কেনো সংবিধান বাতিল করতে জটিলতা দেখা দিয়েছে সেটা আমরা জানতে চাই। আপনারা দেখেছেন গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর অনেক দলের নেতাকর্মীরা তাদের মামলা থেকে মুক্তি পেয়েছে তাহলে এই সংবিধান কিভাবে কার্যকর। বাংলাদেশের সংবিধান হবে জুলাই বিপ্লবে শহীদদের স্মরণে। রাজনৈতিক দলগুলোর জটিলতার কারণে আওয়ামী লীগ সরকারের দোসর চুপ্পুকে রাষ্ট্রপতির পদ থেকে সরানো যাচ্ছে না।
যেখানে প্রতিদিন রাষ্ট্র বদলে যাচ্ছে সেখানে সংবিধান কেনো বাতিল হচ্ছে না। মানুষ কি সংবিধানের জন্য নাকি সংবিধান মানুষের জন্য। এসময় সংবিধান বাতিলের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সাহায্যও চেয়েছেন তিনি।
সমাবেশ শেষে ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যরা বাঁশিতে হুইসেল দিয়ে লালকার্ড প্রদর্শন করেন।
ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের নিয়মবহির্ভূত কর্মকান্ড, চাঁদাবাজি, খাবার খেয়ে বিল পরিশোধ না করা সহ নানাবিধ অপরাধমূলক কর্মকান্ডের কাছে জিম্মি ছিল রাজধানী ঢাকার শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের ক্যান্টিনগুলো। দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণার পরে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা হল ক্যান্টিন ৩৩ লাখ টাকা বাকি ও চাঁদা বাবদ নিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ক্যান্টিন মালিকরা। একইসাথে ক্যান্টিন মালিকরা জোরপূর্বক বাকি খাওয়া ও চাঁদাবাজির এসব অর্থ ফেরত পাওয়ার দাবিও জানিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বশেষ শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত হওয়া বিজয়২৪ আবাসিক হলে সাড়ে তিন লাখ টাকার বিনিময়ে ক্যান্টিন ইজারা নিয়ে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে আবাসিক হলটির ক্যান্টিন ম্যানেজার আব্দুল খালেক অভিযোগ করে বলেন, গতবছরের শুরুতে ক্যান্টিন লিজ দেওয়া হবে জেনে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগাযোগ করি। পরবর্তীতে জানতে পারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের অনুমতির বাইরে নাকি কারো ক্যান্টিন ইজারা পাওয়ার সুযোগ নেই।তখনকার সাধারণ সম্পাদক মিজান সাড়ে তিন লাখ টাকা দিলে ক্যান্টিন ইজারা নিয়ে দিবে বলে জানালে আমি বাধ্য হয়ে টাকা দিতে রাজি হই।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি কাজী নজরুল ইসলাম আবাসিক হলের সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, নিয়মিত বাকিতে খাবার খাওয়া, চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ক্যান্টিন মালিককে হত্যার হুমকি সহ নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকান্ডের অভিযোগ পাওয়া যায়।
হলটির পূর্বের ক্যান্টিন মালিক জাহিদ এবিষয়ে অভিযোগ করে বলেন, মাসিক দশ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হতো সাবেক ছাত্রলীগ নজরুল হল সভাপতি সজিব ও সাধারণ সম্পাদক আরিফুলকে। পরবর্তীতে এই টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে আমাকে গলায় রামদা ঠেকিয়ে হত্যার হুমকি দিয়েছিল যার লিখিত অভিযোগ পূর্বের প্রক্টরিয়াল বডির কাছে জমা আছে। এছাড়া সভাপতি সজিব ২০১৮ সালের পরে থেকে কখনোই খাওয়ার বিল পরিশোধ করেনি। তার কাছে লিখিত হিসাব অনুযায়ী ৩ লাখ ৭৮ হাজার ৮৮০ টাকা পাওনা রয়েছে। এছাড়া সাধারণ সম্পাদক আরিফুল তার জন্মদিন উপলক্ষে ছোট ভাইদের জন্য খাবারের আয়োজন করতো যার কোনো টাকা পাইনি। বাকি জমা হওয়া টাকা ফেরত চেয়ে ক্যান্টিন মালিক জাহিদ বলেন, বিভিন্ন ছাত্রলীগ নেতাদের চাঁদাবাজি এবং জমা হওয়া বাকি টাকা মিলিয়ে দশ লাখের বেশি টাকা আমার ঘাটতি হয়েছে। অন্তত বাকি জমা হওয়া আমার অর্থ ফেরত পেতে প্রশাসনের সহযোগিতা চাই।
কবি নজরুল হলের সাধারণ খাবার ও চা বিক্রেতার নিকট থেকেও চাঁদা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে এই দুই নেতার বিরুদ্ধে। নজরুল হলের চা বিক্রেতা আবু তাহের বলেন, আমার ছোট চায়ের দোকান থেকে প্রতি মাসে দশ হাজার টাকা চাঁদা নিতো সভাপতি সজিব এবং সাধারণ সম্পাদক আরিফুল। আমি আয়ের থেকে বেশি টাকা চাদা দিতে হতো দেখে চাদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে হল থেকে আমার দোকান সরিয়ে দেওয়ার হুমকিও দেয় তারা। এছাড়াও ছাত্রলীগের অন্যান্য নেতাকর্মীরা প্রতিনিয়ত বাকি খেতো। এই বাকির পরিমাণ তিন লাখের উর্ধ্বে যার সামগ্রিক লিস্ট আমার কাছে রয়েছে। আমি আমার অর্থ ফেরত পেতে চাই।
কবি নজরুল ইসলাম হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহবুব ইসলাম এ বিষয়ে বলেন,আমরা নজরুল হলের বাকি এবং চাঁদাবাজির অভিযোগ গুলো পেয়েছি। কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে বাকির অর্থ দ্রুত সময়ে ফেরত দেওয়ার নোটিশ দিয়েছি। পর্যাপ্ত পর্যালোচনা সাপেক্ষে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এক হাজার শিক্ষার্থীদের আসনবিশিষ্ট আরেকটি আবাসিক হল নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা হল। ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের শুধু খাবার খেয়ে বিল পরিশোধ না করায় এই হলের ক্যান্টিনে বাকি জমেছে ১২ লাখ টাকা। যার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক অনিক হোসেন দূর্জয়ের সর্বোচ্চ বাকি জমেছে ৪ লাখ ৯৪ হাজার টাকা।পাওনা টাকার পুরো তালিকা বিশ্লেষণ করে জানা যায়, অনিক হোসেন দূর্জয় ছাড়াও সর্বশেষ এই ছাত্রলীগ কমিটির সহ সম্পাদক এ কে এম তমাল আব্দুল্লাহর কাছে ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক উপ-সম্পাদক মোক্তার হোসেনের কাছে ৬৬ হাজার ৮৭০ টাকা, সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিদোয়ানের কাছে ৫৬ হাজার ৮০০ টাকা সহ অন্তত অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীর কাছে জমা পড়েছে বকেয়া যাদের অধিকাংশই ছাত্রলীগ নেতাকর্মী।
জানা যায়, বকেয়া অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগের প্রভাব খাটিয়ে মাসের পর মাস খাবার রুমে নিত। কারও ভাই, কারও বন্ধু এদরেকে অবৈধভাবে হলে রেখে ক্যান্টিন থেকে খাবার খাওয়াতো। টাকা চাইলে ক্যান্টিন থেকে ম্যানেজারকে বের করে দেওয়া হুমকি দিত।
নবাব সিরাজ উদ দৌলার হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. ফিরোজ মাহমুদ এবিষয়ে বলেন, আমরা তালিকা পেয়েছি এবং প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহন করেছি।ইতোমধ্যে অনেকে টাকা দিয়েছে।সর্বোচ্চ বাকি খাওয়া শিক্ষার্থীর সার্টিফিকেট ও অন্য ডকুমেন্টস জমা রাখা হয়েছে। অন্য যারা হলে নেই তাদেরকেও টাকা পরিশোধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে অন্যথায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাদের ক্লিয়ারেন্স আটকে দেওয়া হবে।
এছাড়া বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি মাসুদুর রহমান মিঠু ক্যান্টিনে ফ্রি খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিতো তার নিকটস্থ সহযোগিদের।বিনিময়ে মিছিল, মিটিং, প্রোগ্রাম করতে হতো। এবিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন,আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু থেকে টিউশনি করাতাম।এছাড়া সভাপতি মিঠুর সাথে রাজনীতি করতাম। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে প্রোগ্রামের জন্য ডাকলে টিউশনির জন্য যেতে পারতাম না। পরবর্তীতে আমাকে ডেকে নিয়ে টিউশনি বন্ধ করার জন্য বলেন এবং ক্যান্টিনে খাওয়ার বিল নিজে পরিশোধ করে দিবেন বলে জানান। এভাবে তার অধিকাংশ সহযোগিতাদেরকে ক্যান্টিনগুলো ফ্রি খাওয়ার ব্যাবস্থা করে দিতো। আর ক্যান্টিন মালিকদের তার এই সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার সুযোগ ছিল না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ছাত্রলীগের এধরণের চাঁদাবাজি, বাকি খাওয়ার ফলস্রুতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিনের খাবার মান সবসময় খারাপ থাকতো।দিন শেষে এগুলোর ভুক্তভোগী হতো সাধারণ শিক্ষার্থীরা।এধরণের কোনো রীতি বিশ্ববিদ্যালয়ে যেন নতুন করে তৈরি না হয় সেই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তারা।