শেকৃবি: পাশ নম্বর ৪০ হলেও পোষ্য কোটাধারীরা ২৫ পেলেই ভর্তি!
কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গুচ্ছভর্তি পরীক্ষায় ২৫ নম্বর পেলেই রাজধানীর শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবেন শিক্ষার্থীরা। তবে সেটা সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য প্রযোজ্য নয়। শুধুমাত্র পোষ্য কোটাধারীদের জন্য এমন সুযোগ রেখেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট আসন সংখ্যার বিপরীতে শতকরা তিন শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে এই পোষ্য কোটার জন্য। বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরাই। অসন্তোষ প্রকাশ করছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
শেকৃবি প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট আসন রয়েছে ৬২০টি, যার মধ্যে ২০টি আসন পোষ্য কোটার জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে। যা মোট আসন সংখ্যার তিন শতাংশ। এ ২০টি আসনে ভর্তি হতে পারবেন শেকৃবির শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সন্তানরা। তাদের জন্য আয়োজন করা হয় আলাদা পরীক্ষা। যেখানে পাশ নম্বর ধরা হয়েছে মাত্র ২৫। অন্যদিকে একজন সাধারণ শিক্ষার্থীকে পাশ করতে হলে পেতে হবে ৪০ নম্বর।
বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী বিষয় উপদেষ্টা প্রফেসর ফরহাদ হোসেনের সঙ্গে কথা বললে তিনি বার্তা২৪ কে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরু থেকেই পোষ্য কোটার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।আর এই পোষ্য কোটা যে শুধু শেকৃবিতে আছে এমন নয় দেশের অনন্য বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতেও পোষ্য কোটার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
পোষ্য কোটার ব্যবস্থা বন্ধ কিংবা পরিবর্তন সম্ভব কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সম্ভব তবে পরিবর্তনের জন্য আবেদন আসতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট কমিটি, একাডেমিক কাউন্সিল যদি মনে করেন তখনই এটি পরিবর্তন সম্ভব। পদ্ধতি অনুযায়ী সবকিছু হতে হবে।
কৃষিগুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা আয়োজক কমিটি সূত্রে জানা গেছে, এবার দ্বিতীয় বারের মতো সাতটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ ভর্তি পরাীক্ষা আয়োজন করছে। এর মধ্যে ৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো পোষ্য কোটা নেই। কেবলমাত্র শেকৃবি এবং পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটা রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সিনিয়র শিক্ষকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কয়েক বছর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার সন্তান শেকৃবিতে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে ফেল করে। তখন ভর্তি পরীক্ষায় পাশ নম্বর ছিল ৪০। এরপর পাশ নম্বর কমিয়ে ২৫ করা হয়। ফলে এখন শেকৃবিতে কর্মরতদের সন্তানরা আবেদন করলেই ভর্তির সুযোগ পাচ্ছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শেকৃবির এক অধ্যাপক জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে এবং মেধাবীদের সুযোগ করে দিতে পোষ্য কোটা বাতিল করা উচিত। কেননা পোষ্য কোটায় যারা ভর্তি হচ্ছেন তারা এক সময় এই কোটার জোরেই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার সুযোগ পাবেন। এতে করে শিক্ষার মান অনেক নিচে নেমে যেতে পারে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা পোষ্য কোটা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদ করেন এবং এই পদ্ধতি বন্ধ করার দাবি জানান। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষার্থী বার্তা২৪ কে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কারো পৈতৃক সম্পত্তি না।সবাই সমান অধিকার পাওয়ার যোগ্য। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রজন্মের ধারাবাহিকতা তৈরি করার কোনো মানে হয় না।আমরা সাধারণ শিক্ষার্থী এর বিরুদ্ধে প্রতিবাধ জানাই এবং এই পদ্ধতি বন্ধ করার আহ্বান করছি।আমাদের বর্তমান প্রশাসন শিক্ষার্থী বান্ধব, আশাকরি তারা পদ্ধতি পরিবর্তনে ব্যবস্থা নিবে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে শেকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শহীদুর রশীদ ভুঁইয়া জানান, শেকৃবিতে পোষ্য কোটার প্রচলন আমি দায়িত্ব নেওয়ার আগেই নির্ধারণ করা হয়েছে। এখানে কর্মরত শিক্ষক-কর্মকর্তাদের দাবির মুখেই এটি করা হয়েছে। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি পোষ্য কোটার প্রয়োজন নেই।