কিশোর গ্যাং: হাত-পা বেঁধে মাথায় আটা-ডিম-রঙ!

  • আবদুর রহমান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কুমিল্লা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

কিশোর গ্যাংয়ের অপরাধের বিভিন্ন ছবি

কিশোর গ্যাংয়ের অপরাধের বিভিন্ন ছবি

তারেকুল ইসলাম তারেক। কুমিল্লার মুরাদগনগর উপজেলার ডি.আর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্র। গত ১২ ডিসেম্বর ছিল তার জন্মদিন। জন্মদিন উপলক্ষে তাকে স্কুলের পাশের গোমতী নদীর পাড়ে ডেকে নেয় একদল কিশোর।

এরপর নদীর পাড়ের একটি গাছের সঙ্গে প্রথমে তারেকের হাত-পা বেঁধে মাথায় ডিম ভাঙে ওই কিশোররা। পরে শরীরে আটা মাখিয়ে তার ওপর চালানো হয় শারীরিক নির্যাতন। এ সময় তার চিৎকার শুনে এগিয়ে আসেন স্থানীয় লোকজন। তারা তারেককে উদ্ধার করেন ওই কিশোরদের কাছ থেকে। শুধু তারেকুলই নয়, গত কয়েক মাস ধরে এভাবেই জন্মদিনে ভয়ঙ্কর আনন্দের নামে নির্যাতন করা হয়েছে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে।

বিজ্ঞাপন

কুমিল্লায় দিন দিন ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে কিশোর গ্যাং কালচার। গত বছর কুমিল্লা নগরীর জিলা স্কুল ও মডার্ন স্কুলের কিছু শিক্ষার্থী কিশোর গ্যাংয়ে সংগঠিত হয়ে একাধিক হাঙ্গামার ঘটনা ঘটায়। কিশোরদের বেপরোয়া আচরণ এখন পাড়া-মহল্লাসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক সময় স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে ইভটিজিং, নিজেদের মধ্যে মারধরে সীমাবদ্ধ থাকলেও এখন তারা বড় পরিসরে অপরাধ করছে।

চুলের নিত্য-নতুন বাহারি কাটিং দিয়ে স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে মেয়েদের ইভটিজিং, উচ্চস্বরে হর্ন বাজিয়ে মোটর সাইকেল চালানো, আর আধিপত্য বিস্তার নিয়ে নিজেদের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটছে অহরহ।

সম্প্রতি মুরাদনগর ডি.আর উচ্চ বিদ্যালয় ও কাজী নোমান আহম্মেদ ডিগ্রি কলেজকে ঘিরে বেশ কয়েকটি কিশোর গ্যাং সক্রিয় হয়ে উঠেছে। গত কয়েক মাসে ওই গ্যাংয়ের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ডি.আর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও কাজী নোমান আহম্মেদ ডিগ্রি কলেজের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী। এসব নির্যাতনের ছবিগুলো কয়েকদিন ধরে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

নির্যাতিত কয়েকজন শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না শর্তে জানায়, ওই কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা কোনো শিক্ষার্থীর জন্মদিন শুনলে তাকে জোর করে ধরে নিয়ে গিয়ে গাছ অথবা ল্যাম্প পোস্টের সাথে হাত পা বেঁধে রাখে। পরে গেঞ্জি শার্ট ছিঁড়ে মাথায় ডিম, আটা ও রঙ মাখিয়ে শারীরিক নির্যাতন করা হয়।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, মুরাদনগর ডি.আর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের কয়েক জন শিক্ষার্থীর নেতৃত্বে তৈরি হয়েছে এই গ্যাং। এরাই সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর বিভিন্নভাবে নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত।

স্থানীয়রা জানান, এসব গ্যাং কিশোরদের এতোটা সাহস পাওয়ার মূল কারণ হচ্ছে এদের অভিভাবকরা সমাজের প্রভাবশালী ও পরিচিত মুখ। আবার অনেকে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তাই অপরাধ করলেও কেউ এদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পায় না।

মুরাদনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) একেএম মনজুর আলম বার্তা২৪.কম-কে জানান, কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা ছোটখাটো অপরাধ করতে করতে বড় ধরনের অপরাধে জড়িয়ে যেতে পারে। তাই এদের সংশোধন করতে সর্বপ্রথম অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে।

তিনি জানান, অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের ব্যাপারে আরও বেশি খোঁজ-খবর রাখলে তাদের অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে। তবে সম্প্রতি কোনো ঘটনা নিয়ে কোনো অভিযোগ পাইনি। খোঁজ নিয়ে অভিযুক্ত ও তাদের অভিভাবকদের প্রাথমিকভাবে সর্তক করে দেওয়া হবে। তাতে যদি কোনো কাজ না হয় তাহলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মুরাদনগরের ডি.আর উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ শাহজাহান ও কাজী নোমান আহম্মেদ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ সাদেকুল ইসলাম বলেন, আসলে কিশোর গ্যাংয়ের বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। তবে এখন যেহেতু জেনেছি, তাই এসবের বিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। এতে সত্যতা পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অভিষেক দাশ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, এই বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে এই ধরনের ঘটনা ঘটে থাকলে এটা ফৌজদারি অপরাধ। এসব বিষয়র স্কুল ও কলেজ প্রধানদের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।