'সব কটা জানালা খুলে দাও না', পৃথিবীতো দু দিনেরই বাসা, দু দিনেই ভাঙ্গে খেলাঘর, 'আমার বাবার মুখে প্রথম যেদিন', 'পড়ে না চোখের পলক', 'আমার গরুর গাড়িতে বৌ সাজিয়ে'- এমন অসংখ্য হৃদয় ছোঁয়া গানের সুরের স্রষ্টা তিনি। শুধু সুরের স্রষ্টাই নন একাধারে গীতিকার, সুরকার এবং সংগীত পরিচালকও। কিশোর বয়সে তিনি ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন মহান স্বাধীনতার যুদ্ধে।
মঙ্গলবার (২২ জানুয়ারি) ভোরে পৃথিবীর খেলাঘর ভেঙে পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন জনপ্রিয় গীতিকার এবং সুরকার আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। রাজধানীর আফতাবনগরের নিজ বাসায় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
দীর্ঘদিন ধরে নানা অসুস্থতায় ভুগছিলেন প্রখ্যাত এই সংগীতাজ্ঞ। ১৯৫৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন- সুরের এ সাধক। সংগীত ভূবনে যাত্রা করেন সত্তরের দশকে। ১৯৭৮ সালে মেঘ বিজলি বাদল-সিনেমার মাধ্যমে চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি বুলবুলকে। নয়নের আলো, মায়ের অধিকার, আনন্দ অশ্রু, মরণের পরে , বিয়ের ফুল, প্রেমের তাজমহলসহ- প্রায় তিন শতাধিক বাংলা সিনেমার সংগীত আয়োজনে ছিলেন ইমতিয়াজ বুলবুল।
'ঘুমিয়ে থাকো গো স্বজনী, আমার বুকের মধ্যিখানে, তুমি হাজার ফুলের মাঝে একটি গোলাপ – বাংলা সিনেমার এরকম জনপ্রিয় রোমান্টিক গানের গীতিকার ও সুরকার ছিলেন তিনি,-যা আজো দর্শক শ্রোতাদের মুখে-মুখে।
দেশাত্মবোধক গানেও তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্ত। ‘সেই রেল লাইনের ধারে, একাত্তুরের মা জননী কোথায় তোমার মুক্তিসেনার দল,সুন্দর সূর্বণ, একতারা লাগে না আমার দোতারাও লাগে নাসহ অসংখ্য গানের রচিয়তা তিনি।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের সাক্ষী হয়েছিলেন, যার কারণে হারাতে হয় ভাইকেও। এ কারণে জীবন সায়াহ্নে এসে আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল ছিলেন অনেকটাই গৃহবন্দি। গৃহবন্দি অবস্থায় দেওয়া অসুস্থতার ফেসবুক স্ট্যাটাস দেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চিকিৎসার জন্য সহায়তাও করেন। নিরাপত্তার ব্যবস্থাও করেছিলেন তিনি।
জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী রুনা লায়লা, সাবিনা ইয়াসমিন, এন্ড্রু কিশোর, খালিদ হাসান মিলু, কনকচাঁপা এবং সামিনা চৌধুরী, কুমার বিশ্বজিৎ- আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের সুর ও লেখা গানে তাদের জনপ্রিয়তাকে করেছেন সমৃদ্ধ।
তিনি আজ পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেন। সংগীতাজ্ঞনে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। শোকবিহ্বল হয়ে পড়েছে সহকর্মীরা। তবে তার এসব গান দিয়ে দর্শকদের মাঝে বেঁচে থাকবেন আজীবন।