ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে চারদিনের সরকারি সফরে ভারতে আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সফরকালে তিনটি প্রকল্পের উদ্বোধন এবং দুই দেশের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ও তিস্তার পানি বণ্টন বিষয়ে আলোচনার পাশাপাশি আটটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেখানে ইকোনমিক ফোরামে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন শেখ হাসিনা। ভারতের বিদেশ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে
আগামী বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) সকালে নয়াদিল্লির উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন তিনি। সফরের প্রথম দুই দিন ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) ইন্ডিয়ান ইকোনোমিক সামিট-২০১৯-এ যোগ দেবেন তিনি। নয়াদিল্লির হোটেল তাজ প্যালেসে দুই দিনব্যাপী সামিটের মধ্যমণি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
সামিটের শেষ দিন ৪ অক্টোবর স্থানীয় সময় বিকেল ৩টার দিকে বক্তব্য দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আঞ্চলিক সম্পর্ক ও সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে বিশ্বে দক্ষিণ এশিয়ার প্রভাব বিষয়ে বক্তব্য রাখবেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে ফুটে উঠবে বদলে যাওয়া বাংলাদেশের উন্নয়নচিত্র। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়াসহ বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি তুলে ধরবেন তিনি।
এর পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের বর্তমান জিডিপি প্রবৃদ্ধি এবং বিগত কয়েক বছরে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে তার সরকারের ব্যাপক সাফল্যের কথাও উল্লেখ করবেন তিনি। ভারতের বড় বড় বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে আরো বিনিয়োগেরও আহ্বান জানাবেন প্রধানমন্ত্রী।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যমন্ত্রী উইলবার এস রস, সিঙ্গাপুরের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও অথর্মন্ত্রী হেং সি কিটসহ বিভিন্ন দেশের রাজনীতিবিদ, অর্থনীতিবিদ, বিভিন্ন ব্যবসা সফল প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও তারকারা যোগ দেবেন এ সম্মেলনে।
প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে ভারতের কূটনৈতিক মহল থেকে শুরু করে রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে জোর প্রস্তুতি। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীসহ আমন্ত্রিত অতিথিদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুতি চলছে হোটেল তাজ প্যালেসে।
মঙ্গলবার (০১ অক্টোবর) দুপুরে হোটেল তাজ প্যালেসে গিয়ে দেখা যায় সম্মেলনের জন্য বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সফরসূচি:
প্রধানমন্ত্রী দিল্লিতে পৌঁছে বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) সন্ধ্যায় বাংলাদেশ হাইকমিশন আয়োজিত সংবর্ধনা ও নৈশভোজে যোগ দেবেন। এছাড়া তিনি ভারতের তিনটি চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে শুক্রবার যৌথভাবে বৈঠক ও মতবিনিময় করবেন।
এরপর শনিবার (৫ অক্টোবর) সকাল ১০টায় ঐতিহাসিক হায়দ্রাবাদ হাউজে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকে বসবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। সেই বৈঠকে কয়েকটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর হবে। দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাতে যোগাযোগ, সংস্কৃতি, কারিগরি সহযোগিতা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ খাতসহ ৭ থেকে ৮টি এমওইউ স্বাক্ষরের বিষয় নিশ্চিত হয়েছে। তবে, এ সংখ্যা বেড়ে ১০টিতে দাঁড়াতে পারে। একই দিন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সৌজন্যে আয়োজিত ভারতের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যাহ্নভোজে যোগ দেবেন শেখ হাসিনা।
বিকেলে শেখ হাসিনা ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। এদিকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর সকালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।
এছাড়াও নয়াদিল্লি সফররত সিঙ্গাপুরের ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী হেং সি কিট শুক্রবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার ভারতের কংগ্রেস পার্টির প্রধান সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গেও বৈঠক করবেন।
একই দিন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও কর্মভিত্তিক ফিচার ফিল্ম তৈরির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য ভারতের প্রখ্যাত চিত্র পরিচালক শ্যাম বেনেগাল প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।
আরও পড়ুন:
প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর
তিস্তা-রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোচনা, হতে পারে ৮ এমওইউ