নিষেধাজ্ঞা রক্ষায় সচেষ্ট থাকলেও ভারতীদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় জেলেরা

  • ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বরগুনা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

মা ইলিশ রক্ষা ও নিরাপদ প্রজননের লক্ষ্যে শুরু হয়েছে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা। চলতি মৌসুমে একাধিক সামুদ্রিক ঝড়ে দিশেহারা জেলেরা নিষেধাজ্ঞা রক্ষায় সচেষ্ট থাকলেও ভারতীয় জেলেদের মাছ শিকার নিয়ে দুশ্চিন্তায় জেলেরা।

মা ইলিশ রক্ষা ও নিরাপদ প্রজননের জন্য ১৩ অক্টোবর থেকে আগামী ৩ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন বরগুনাসহ উপক’লের নদ-নদী ও সাগরে ইলিশ শিকার নিষিদ্ধ। এই নিষিদ্ধ সময়ে ইলিশ আহরণ, পরিবহন ও বিপনন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

বিজ্ঞাপন

মৌসুমের শুরু থেকে এ পর্যন্ত অন্তত একাধিকবার দুর্যোগের কবলে পড়ে এবং মাঝখানে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞায় সাগরে ঠিক মতো জাল ফেলতে না পারায় কাক্সিক্ষত ইলিশ আহরণ করতে পারেননি জেলেরা। ফলে অধিকাংশ ট্রলার মালিক, আড়তদার ও ব্যবসায়ীরা রয়েছেন লোকসানে। ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা মেনে বরগুনার জেলেরা মাছ ধরা থেকে বিরত থাকলেও নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ে ভারতীয় জেলেরা মাছ ধরে নিয়ে যাবে বলে আশঙ্কা জেলেদের।

সাগর থেকে ফিরে রাফি ট্রলারের মাঝি রতন বলেন, নিষেধাজ্ঞা শুনে যখন ফিরছিলাম তখনই দেখলাম শত শত ভারতীয় ট্রলার মাছ ধরতেছে এরকম প্রতি বছর তারা বাংলাদেশের নিষেধাজ্ঞার সময় মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে, যদি এভাবে তারা ধরে থাকে তাহলে তো আমরা কোন বছরই মাছ পাবো না তাই সরকারের কাছে দাবি জানাই ভারতীয় জেলেরা আমাদের জলসীমায় প্রবেশ না করে। এমনিতেই এবছর আবহাওয়া খারাপ ছিল সাগরে মাছ শিকার করতে পারিনি।

সরকারি হিসেব অনুযায়ী বরগুনায় নিবন্ধিত জেলে রয়েছে ৪৬ হাজার। বেসরকারি হিসেবে এ সংখ্যা লক্ষাধিক। এর মধ্যে নিষেধাজ্ঞাকালীন সময় জেলেদের খাদ্য সহায়তা কর্মসূচির আওতায় ৩৬ হাজার জেলেকে ২৫ কেজি করে চাল প্রদান করা হবে। যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। চাল বিতরণেও রয়েছে স্বজনপ্রীতিসহ নানা অভিযোগ।

শামীম মাঝি বলেন, ইলিশ ধরা ২২ দিন নিষেধ। সরকারের সব নিয়ম আমরা মানি কিন্তু আমাদের দাবি হচ্ছে ভারতীয় জেলেরা আমাদের জলসীমায় জাল পেতে মাছ শিকার করে যাচ্ছে, বাংলাদেশে যখন মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা থাকে, এ সময় ভারতের জেলেরা অবাধে সাগরে মাছ শিকার করেন। আমরা চাই আমাদের সঙ্গে ওই দেশেরও মাছ শিকার বন্ধ থাকবে।

সরকার নামমাত্র ২৫ কেজি চালসহায়তা দিলেও তা অধিকাংশ জেলে পান না বলে অভিযোগ রয়েছে। আবার অনেকে জেলে নন, তাঁরাও এ সহায়তা পাওয়ায় প্রকৃত জেলেরা বঞ্চিত হন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

জেলে আলম বলেন, ২০ বছর ধরে সাগরে মাছ ধরি জেলে কার্ড আছে কিন্তু সময়মতো কোন সহযোগিতা পাচ্ছি না ২০ কেজি ২৫ কেজি চাল পাই এতে আমার সংসার চলে না ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া মা-বাবার ঔষধের খরচ,গেল বছর এনজিও থেকে লোন নিয়েছিলাম সেটা এখন পর্যন্ত শোধ করতে পারিনি এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন পার করছি।

বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, শুধু মা ইলিশ রক্ষা করলেই হবে না। জেলেদের পাশে সরকারকে দাড়াতে হবে। জেলেদের জন্য সরকারের বরাদ্দকৃত যে চাল দেয়া হয় এতে তাদের সংসার চালানো সম্ভব নয়। চালের পাশাপাশি নগদ অর্থও দিতে হবে। অন্যথায় তারা ঋণের বোঝায় জর্জরিত হয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে বিপাকে পড়বেন।

বরগুনা সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা, মারুফ হোসেন মিনার বলেন,বরগুনার বিষখালী, বুড়ীশ্বর (পায়রা), বলেশ্বর নদীর ৪০টি পয়েন্ট নির্ধারন করা হয়েছে।, ‘১৩ অক্টোবর থেকে আগামী ২২ দিন মাছ ধরা বিক্রি ও পরিবহনের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে এই সকল পয়েন্টে নিষেধাজ্ঞা অমান্যকরে কেউ মা ইলিশ ধরলে কিংবা, মজুদ,বিক্রী করলে তাৎক্ষণিক ভ্রাম্যমাণ আদালতের আওতায় নিয়ে আসা হবে।আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নদীতে ও সাগরে পাহারায় থাকবে। নৌ-পুলিশ ও কোষ্টগার্ডের সঙ্গে ভ্রাম্যমান আদালতের ম্যাজিষ্ট্রেট থাকবেন।’

তিনি আরও বলেন, নিষেধাজ্ঞার প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই জেলেদের জন্য সরকারি বরাদ্দকৃত চাল তাদের হাতে পৌছে দেয়া হবে।