কঠোর নজরদারির মধ্যেও ভোগান্তির শেষ নেই হাজিদের
মক্কা ( সৌদি আরব) থেকে: হাজিদের সঙ্গে প্রতারণা। কথা মতো হারাম শরিফের কাছে বাসা না দিয়ে বহু দূরে রাখা, খোঁজ খবর না নেয়া, খাবার দাবার ঠিক মতো না দেয়াসহ- দেশে ফেরার পর হজ এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগেই মুখর থাকে হাজিরা।
তবে সেই অভিযোগের কফিনে পেরেক ঠুকতে চেষ্টারও কমতি নেই হজ মিশনের।
অভিযোগ পেলে আর ছাড় নয়। বিশেষ করে সৌদি কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ গেলে আর রক্ষা নেই। কারণ হাজিদের এখানে দেখা হয় সর্বোচ্চ সন্মানের চোখে দেখা হয়, বলা হয় তাদের আল্লাহর মেহমান।
হজ শেষ, আগামী কাল ২৭ আগস্ট থেকে শুরু হচ্ছে হজযাত্রীদের ফিরতি ফ্লাইট। চলবে টানা একমাস। শেষ ফিরতি ফ্লাইট হাজিদের নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে উড়ে যাবে ২৬ সেপ্টেম্বর। এই মধ্যবর্তী সময়টা নিয়েই দু:চিন্তা হজ মিশনের।
কারণ এই সময়টাতেই হাজিদের কাউকে মক্কা থেকে মদিনায়। কাউকে দূরবর্তী বাসা থেকে সরিয়ে এনে হারাম শরিফের কাছে। কাউকে বা দেশে পাঠানোর ব্যবস্থাপনা নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয় এজেন্সিগুলোকে।
আর এই সময়টাতেই সেবার মান নিয়ে উঠতে শুরু করে নানা অভিযোগ আর প্রশ্নের।
ইতোমধ্যে মিনা,আরাফাত আর মুজদালিফায় মোয়াল্লেমদের হজ ব্যবস্থাপনা নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই হাজিদের।
খাবারের কষ্ট, তীব্র গরমে এসিহীন তাবুতে রাখা, যানবাহনের ব্যবস্থা না করে আরাফাত থেকে মুজদালিফা হয়ে জামারায় পাথর নিক্ষেপ। সেখান থেকে ফরজ তাওয়াফ ও সায়ী করার জন্যে মক্কায় কাবা শরিফে গমন- এসব স্থানে যানবাহন দূরে থাকা, হজ এজেন্টদের টিকির নাগাল পান নি অনেক হাজি।
তীব্র গরমে দীর্ঘপথ হেঁটে হেঁটে ক্লান্ত পরিশ্রান্ত হাজিদের অনেকে হয়ে পড়েছেন অসুস্থ।
আবার যাদের হারাম শরীফ থেকে দূরে রাখা হয়েছে,তাদের দিনে অন্তত একবারের জন্য হারাম শরীফে যাতায়াতে বাসের বন্দোবস্ত করার অঙ্গীকার করা হলেও সেই অঙ্গীকার পালন করেন নি বেশ কিছু এজেন্সি। উল্টো দূর্ব্যবহার আর হুমকি ধামকির মধ্যে মুখ বুঝে রয়েছেন হাজীদের অনেকে।
এরই মাঝে হাজিদের সেবায় হজ মিশনের তৎপরতাও ছিলো চোখে পড়ার মতো। জামারায় প্রতীকী শয়তানকে পাথর নিক্ষেপের স্থানের কাছের এলাকা আজিজিয়া। কাবা শরীফ থেকে হেঁটে যাওয়া পথের দূরত্ব প্রায় ৬ কি:মি:।
সেখানকার একটি হোটেলে হঠাৎ করেই হাজিদের সেবার মান দেখতে একজন সহকর্মী নিয়ে ছুটে যান বাংলাদেশ হজ মিশনের সহকারি হজ অফিসার কনসাল হজ আবুল হাসান(৪০)।
এ সময় তারা ডাইনিং রুমে গিয়ে পর্যবেক্ষণ করেন হাজিদের খাবারের মান। এজেন্সির হজ সেবা নিয়েও কথা বলেন হাজিদের সঙ্গে।
২৪ তম প্রশাসন ক্যাডারের এই কর্মকর্তা জানান, এভাবে আমরা প্রতিটি এজেন্সির সেবার মান কিংবা হাজিদের কি ধরনের খাবার দাবার দিচ্ছেন তা পর্যবেক্ষণে সারপ্রাইজ ভিজিট করছি। সেবার মানের বিষয়ে ব্যতয় হলে আমরা রিপোর্ট করছি।
এটা ঠিক হাজিদের তুলনায় আমাদের জনবল কম। তারপরও সরকারের তরফে আমাদের চেষ্টা বিড়ম্বনাহীন হজ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা।
এবার আমরা প্রতিটি হাজিদের ইলেকট্রনিক্স মেডিক্যাল প্রোফাইল তৈরি করেছি। সেখানে তাদের রোগের একটা হিস্ট্রি আছে। কিয়স্ক মেশিন পাসপোর্ট ধরলেই সার্ভার থেকে হাজির সকল তথ্য স্বয়ংক্রিয় ভাবে চলে আসে।
চিকিৎসা নেবার সময় হাজিদের নতুন করে নাম, বয়স বা রোগের হিস্ট্রি জিজ্ঞেস করতে হচ্ছে না। ফলে দ্রুততর সময়ের মধ্যে হাজিরা চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন। এবার ৪'শ পুরুষ হজ কর্মীর পাশাপাশি নিয়োগ দেয়া হয়েছে ৩৫ জন নারী হজ কর্মী। তারা হারিয়ে যাওয়া নারী হাজিদের খুঁজে মিশনে নিয়ে আসেন। সেখান থেকে আমরা তাকে নির্দিষ্ট হোটেলে পাঠিয়ে দেই।
প্রতিবেশি দেশ ভারত থেকে প্রতিবছর ২ হাজার স্বেচ্ছাসেবী আসেন কেবল হাজিদের সেবায়। আমাদের দেশ থেকেও এমন ব্যবস্থাপনা চালু হলে অতি সহজেই হাজিরা এখানে তাদের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে পারবেন।
তবে এটা ঠিক,মক্কা ও মদিনায় পৃথক মোয়াল্লেম আর আদিল্লার ( স্থানীয় এজেন্ট) কিছু সেবা আর সমন্বয়হীনতা নিয়ে বরাবরই হাজিদের অভিযোগ থাকে।
আমাদের চেষ্টা হাজিদের এই অভিযোগ শূন্যে নামিয়ে আনা যোগ করেন বাংলাদেশ হজ মিশনের সহকারি হজ অফিসার কনসাল হজ আবুল হাসান।