ইসলামকে চীনের সমাজতান্ত্রিক সংস্কৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে তুলতে নতুন আইন করতে যাচ্ছে দেশটির প্রশাসন। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে ইসলাম ধর্মের ‘চাইনিজ সংস্করণ’ বাস্তবায়ন করার পরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়েছে।
শুক্রবার (১১ জানুয়ারি) চীনের আট প্রদেশের মুসলিম প্রতিনিধিদের সঙ্গে সরকারি কর্মকর্তাদের বৈঠকের পর নতুন আইনের সিদ্ধান্ত নিয়ে ঘোষণা দেওয়া হয়।
চীনের ইংরেজি সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমসের সূত্রে আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈঠকে দুই পক্ষই ইসলামের নীতিকে চীনা রীতিনীতি অনুযায়ী পরিবর্তন, পরিবর্ধনে সম্মত হয়েছে। কিন্তু সেটা আসলে কেমন হবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কোনো ধারণা পাওয়া যায়নি।
গত সপ্তাহে চীনের তিন প্রদেশে নিবন্ধন ছাড়া মসজিদে তল্লাশি চালিয়ে ৪০ জনকে গ্রেফতারের পর এবার ইসলাম ধর্মের চীনা রূপের ঘোষণা এলো।
সমালোচকরা বলছেন, চীনের এই ধরনের সিদ্ধান্তের পেছনে বড় কারণ ইসলামিক দলগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ নেওয়। কারণ চীন কখনোই চায় না, ইসলাম ধর্মের খুব প্রচার-প্রসার ঘটুক। অনেক চীনা নাগরিক মনে করেন, চীনে ইসলাম ধর্মের হাত ধরে মূলত আরব সংস্কৃতির প্রসার ঘটছে, আরব ঘরানার মসজিদ গড়ে উঠছে। তাই চীন সেটিকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে চীন মূলত ধর্মীয় বিশ্বাসকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়।
চীনের সাধারণ নাগরিকদের ধর্মীয় আচারে পরিবর্তনের বিষয়কে ভিন্নভাবে বুঝানো হচ্ছে। তাদের বলা হচ্ছে, এটা অতি জাতীয়তাবাদের প্রকাশ।
চীনের অনেক নাগরিক মনে করে, আরব সংস্কৃতি মানেই ভয়ানক কিছু। এরা বিশ্বের নানাভাবে সহিংসা ছড়াতে পারঙ্গম। তাই চীনা মুসলমানদের জীবন থেকে আরব আচরণ মুছে ফেলা সঠিক সিদ্ধান্ত।
ধর্ম-কর্ম পালনের বিষয়ে চীনের মুসলমানরা কখনও স্বাধীন ছিলো না। তার পরও ধর্ম পরিমার্জনের এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে চীনা মুসলমানরা বিশ্ব মুসলিম ঐক্য থেকে আলাদা হয়ে একঘরে হয়ে পড়বে। চীনা প্রশাসন এটাই চাচ্ছে। কারণ, তারা বিচ্ছিন্ন জীবন কাটালে দেশের অখণ্ডতা নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। কারণ, চীনের মুসলিম অধ্যুষিত বেশ কয়েকটি এলাকায় চলছে স্বাধীন হওয়ার আন্দোলন।
এদিকে দেশটির ১০ লাখেরও বেশি মুসলিমকে বিভিন্ন অস্থায়ী ক্যাম্পে আটক রেখে ধর্ম পালনে বাধা এবং জোর করে কমিউনিস্ট মতাদর্শে আস্থাশীল করার চেষ্টা হচ্ছে বিভিন্ন দেশের ইসলামি সংগঠন ও জাতিসংঘ অভিযোগ করেছে। ইতোমধ্যে চীনের বিভিন্ন মসজিদ থেকে গম্বুজ ও চাঁদ-তারার প্রতিকৃতি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। চীনের মাদরাসাসমূহে আরবি ভাষা শেখানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
এদিকে চীনা প্রশাসনের দাবি, দেশে মুসলমানের সংখ্যা বাড়ছে। এ অবস্থায় দেশের একটি বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে মুসলিম দেশগুলোর চলমান সন্ত্রাসবাদ ও উগ্র ধর্মান্ধতা থেকে দূরে রাখতেই কিছু নিয়ম-নীতিতে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এটিকে চীনা জাতীয়তাবাদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও সম্মানজনক সিদ্ধান্ত বলেই মনে করছেন তারা। তবে পুরো বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় মুসলিম কোনো নেতার অভিমত কী, কিংবা আসলে কী গঠতে যাচ্ছে তা নিয়ে কোনো মতামত বা বক্তব্য পাওয়া যায়নি।