বালিশকাণ্ডে যেভাবে লুটপাট ৩১ কোটি টাকা!

ঢাকা, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-25 22:29:23

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের আবাসন প্রকল্পে ৩১ কোটি ২৪ লাখ ৪৭ হাজার ১৭২ টাকা দুর্নীতির দায়ে পৃথক চারটি মামলায় পাবনা গণপূর্তের ১১ প্রকৌশলী ও ২ ঠিকাদারসহ ১৩ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছে (দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক)।

বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) পাবনা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে দুদকের দুই কর্মকর্তা বাদি হয়ে পৃথক চারটি মামলা দায়ের করেন।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের (গ্রীন সিটি) আওতায় ১২ শত ৫০ বর্গফুটের ৬ ইউনিট বিশিষ্ট ২০ তলা ভবনের ৩৪টি সিভিল ও আটটি ইলেক্ট্রনিক্স ও ম্যানেজমেন্ট সামগ্রীর বাজার মূল্যের চেয়ে অধিক মূল্য দেখিয়ে ৮ কোটি ১২ লাখ ৬৯ হাজার নয়শত পঞ্চাশ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গণপূর্তের সাত প্রকৌশলী ও এক ঠিকাদারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুদক। যেখানে এই প্রজেক্টে ৯২টি সামগ্রীতে ঠিকাদারকে বিল বাবদ ২৯ কোটি ৭৭ লাখ ৩৩ হাজার ৪৫৩ টাকার বিল প্রদান করা হয়। দুদকের অনুসন্ধানে এসব সামগ্রীর প্রকৃত মূল্য জানা গেছে ২১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।

এই মামলায় আসামিরা হলেন, পাবনা গণপূর্তের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদুল আলম, প্রকৌশলী (সিভিল) পাবনা গণপূর্তের উপসহকারী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম, পাবনা গণপূর্তের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আহমেদ সাজ্জাদ খান, পাবনা গণপূর্তের সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) মো. আমিনুল ইসলাম, পাবনা গণপূর্তের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (সিভিল) মো. তাহাজ্জুদ হোসেন, পাবনা গণপূর্তের উপ সহকারী প্রকৌশলী মো. রওশন আলী এবং ঠিকাদার সাজিন কনস্ট্রাকশন এর স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন।

অনুরূপভাবে একই প্রকল্পের আওতায় ৭৫০ বর্গফুটের ছয় ইউনিট বিশিষ্ট ২০ তলা ভবনের ৬৩টি সিভিল ও ইলেকট্রনিক্স সামগ্রীর মধ্যে ২৪টি সিভিল ও আটটি ইলেকট্রনিক্স সামগ্রীর অধিক মূল্য দেখানো হয়েছে। এই প্রকল্পে পরিবহন খরচ, লিফটিং খরচ, শ্রমিক মজুরিসহ ইত্যাদি কাজে সাজানো দরপত্র তৈরি করে সাত কোটি ৮৪ লাখ ৮ হাজার ৭১৬ টাকা আত্মসাৎ হয়েছে বলে দুদকের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে। এই অভিযোগে মাসুদুল আলম ও ঠিকাদার শাহাদাত হোসেনসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে দুদক। এই দুই মামলার বাদী হলেন দুদকের উপ সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ শাহজাহান মিরাজ।

একই প্রকল্পে সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদুল আলমের নেতৃত্বে একটি চক্র ৮৫০ বর্গফুটের বিশ তলা ভবন নির্মাণের অধীনে ৭৫টি সিডিউল ও নন সিডিউল আসবাবপত্র ও ইলেকট্রনিক্স সামগ্রীসহ বিভিন্ন সামগ্রীর মধ্যে ৪৩টি আইটেমে বাজার মূল্যের চেয়ে অধিক মূল্য দেখিয়ে সাত কোটি ৪৮ লাখ ১৬ হাজার ৬৮ টাকা আত্মসাৎ করে। উপ-পরিচালক মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন বাদী হয়ে ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। আসামিরা হলেন-সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুদুল আলম, উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাহিদুল কবির আহমেদ সাজ্জাদ খান, মোহাম্মদ তারেক মো. আমিনুল ইসলাম, সুমন কুমার নন্দী, উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. মোস্তফা কামাল, মো. শফিকুল ইসলাম ও ঠিকাদার মোহাম্মদ আসিফ হোসেন।

একইভাবে একই প্রকল্পের অধীন আসবাবপত্র, ভবন নির্মাণ সামগ্রী ও ইলেকট্রনিক্স সামগ্রীসহ ৭০টি সামগ্রীর অতিরিক্ত মূল্য দেখিয়ে সাত কোটি ৭৯ লাখ ৪২ হাজার চারশত ৩৮ টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পেয়েছে দুদক অনুসন্ধানী টিম। এই অভিযোগে ওই ৯ আসামির বিরুদ্ধে দুদকের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন মামলা দায়ের করেন। এভাবে মোট চারটি মামলায় ৩১ কোটি ২৪ লাখ ৪৭ হাজার ১৭২ টাকা ৪৭ পয়সা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে আসামিদের বিরুদ্ধে।

চার মামলায় ১৩ আসামিকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে প্রথমে সিএমএম আদালতে হাজির করলে আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা হলেন পাবনা গণপূর্তের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদুল আলম, পাবনা গণপূর্তের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. জাহিদুল কবির, পাবনা গণপূর্তের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (সিভিল) মো. মোস্তফা কামাল, পাবনা গণপূর্তের উপসহকারী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম, পাবনা গণপূর্তের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আহমেদ সাজ্জাদ খান, পাবনা গণপূর্তের এস্টিমেট ও উপ-সহকারী প্রকৌশলী সুমন কুমার নন্দী, পাবনা গণপূর্তের সহকারী প্রকৌশলী মো. তারেক, পাবনা গণপূর্তের সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) মো. আমিনুল ইসলাম, পাবনা গণপূর্তের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আবু সাঈদ, পাবনা গণপূর্তের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (সিভিল) মো. তাহাজ্জুদ হোসেন, পাবনা গণপূর্তের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. রওশন আলী এবং ঠিকাদার সাজিন কনস্ট্রাকশন এর স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন ও মজিদ এন্ড সন্স কনস্ট্রাকশনের স্বত্বাধিকারী আসিফ হোসেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর