বেনাপোল বন্দরের মধ্যে ফেনসিডিলের কারবার, ধরা ছোঁয়ার বাইরে অপরাধীরা

, জাতীয়

আজিজুল হক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, বেনাপোল (যশোর) | 2024-10-25 11:49:28

যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর অভ্যন্তরে মাদক কারবারিরা আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। নিরাপত্তা সংস্থা আনসার, আর্মড ব্যাটালিয়ন পুলিশ, বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থা পিমা এই তিন নিরাপত্তা সংস্থার চোখে ধুলো দিয়ে বার বার মাদক পাচারের ঘটনা ঘটছে। এতে নিরাপদ বাণিজ্য হুমকির মুখে পড়ায় হয়রানির আশঙ্কায় আতঙ্কিত সাধারণ ব্যবসায়ীরা।

সবশেষ গত বুধবার (২৩ অক্টোবর) রাত ১১টার দিকে বেনাপোল পোর্ট থানায় একটি মাদক পাচারের ঘটনায় অজ্ঞাত আসামি দেখিয়ে মামলা দায়ের হয়েছে। এদিন বিকেলে বন্দরের ৫ নম্বর গেটে চোরাকারবারিকে ধাওয়া করে ৪৯ বোতল ফেনসিডিল জব্দ করেছে বন্দরের নিরাপত্তাকর্মী আনসার সদস্যরা। তবে এসময় কৌশলে পালিয়ে যায় পাচারকারী। জব্দকৃত ফেনসিডিল নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে জানা গেছে।

বেনাপোল বন্দরের নিরাপত্তা সংস্থা আনসার পিসি হেলালুজ্জামান জানান, তাদের নিরাপত্তাকর্মীরা বন্দরে টহল দেওয়ার সময় দেখতে পান একটি ট্রাকের পাশে সন্দেহভাজনরা ঘোরাঘুরি করছে। পরে তাদের ধাওয়া করলে একটি ব্যাগ ফেলে পালিয়ে যায়। পরে ব্যাগের মধ্যে থেকে ৪৯ বোতল আমদানি নিষিদ্ধ ফেনসিডিল পাওয়া যায়। বন্দর কর্মকর্তাদের নির্দেশে ফেনসিডিল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।

এদিকে বন্দরের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও পাচাররোধে বন্দরে ১৭৫টি অত্যাধুনিক সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। তবে তদারকির গাফিলতিতে প্রকাশ্যে বন্দর অভ্যন্তরে মাদক পাচারের ঘটনা ঘটলেও অপরাধী শনাক্তে ব্যর্থ হচ্ছেন সিসি ক্যামেরা তদারকিতে থাকা সংশ্লিষ্টরা।

বেনাপোল ট্রাক ট্রান্সপোর্ট ইউনিয়নের সেক্রেটারি আজিম উদ্দীন গাজী বলেন, চোরাকারবারিরা কখনও ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাকে, আবার কখনও সীমান্ত পথে ফেনসিডিল নিয়ে বন্দর এলাকায় অবস্থান করে। পরে কৌশলে বিভিন্ন পণ্যবাহী বাংলাদেশি ট্রাকের মাথায় ফেনসিডিল তুলে দেয়। আর হয়রানির শিকার হয় চালক, আমদানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ীরা। বন্দর তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করলে মাদক পাচার বন্ধ হবে ও ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।

বেনাপোল আমদানি-রফতানি সমিতির সহসভাপতি উজ্জ্বল বিশ্বাস জানান, প্রায় ৯ মাস হচ্ছে বন্দরের ৩টি স্ক্যানিং মেশিন নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। যার কারণে সহজে মাদক বন্দরে প্রবেশ করে পরে বাংলাদেশি ট্রাকের মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরে ছড়াচ্ছে। স্ক্যানিং মেশিন দ্রুত চালু করা দরকার।

উল্লেখ্য, বেনাপোল বন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় বন্দরের নিজস্ব সম্পদও চুরি ঘটনা ঘটছে। চলতি সপ্তাহে বন্দরের ডিটিএম অফিসে লাগানো দুটি ফিঙ্গারপ্রিন্ট মেশিন চুরি হয়। তবে স্থানটি সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকলেও অপরাধী শনাক্ত হয়নি। তবে এ চুরির ঘটনায় নিরাপত্তা সংস্থা পিমার সদস্যদের বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ করে বন্দর প্রশাসন পুলিশে অভিযোগ দায়ের করে।

বর্তমানে বন্দরের নিরাপত্তায় ১৬৩ জন আনসার, ৪২ জন আর্মড ব্যাটালিয়ন পুলিশ ও বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থা পিমার ১২৯ জন কর্মী আছেন। এছাড়া বন্দরের সার্বক্ষণিক বাণিজ্যিক কার্যক্রম গতিবিধির জন্য ৩৭৫টি সিসি ক্যামেরা পুরো বন্দরের চারিপাশ ও পণ্য প্রবেশদ্বারে লাগানো হয়েছে। এছাড়া সরকারের গোয়েন্দা সংস্থারও সিসি ক্যামেরা বাণিজ্য পর্যবেক্ষণ করছে।

এদিকে বেনাপোল ও পেট্রাপোল বন্দরের দুর্বল নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণে গত ২ জুলাই বন্দরের কাঁচামালের ইয়ার্ডে ভারত থেকে আমদানিকৃত পণ্যের ট্রাকে কাস্টমস, বিজিবি ও পুলিশের যৌথ অভিযান চালিয়ে ৯৯ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করে। ২০২২ সালের ১৫ জুন যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরে ভারতীয় পণ্যবাহী একটি ট্রাকে তল্লাশি চালিয়ে ৭৪৯ বোতল ফেনসিডিল, ১৮৬ কেজি গাঁজা ও আমদানি নিষিদ্ধ মেডিসিন, কসমেটিকস ও আতশবাজি আটক করে পোর্ট থানা পুলিশ। ২০২১ সালের ১৩ জানুয়ারি ভারত থেকে আমদানিকৃত একটি পণ্যবাহী ট্রাক থেকে বিপুল পরিমাণ ভারতীয় ওষুধ ও ২০০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এছাড়া ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকেছে এমন অনেক চালান।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি সাজেদুর রহমান জানান, বন্দরের সিসি ক্যামেরা যদি নিয়মিত তদারকি করা হয় এবং বন্দরের নিরাপত্তাকর্মীরা যদি দায়িত্বশীল হয়ে কাজ করেন, তবে বন্দর অভ্যন্তরে মাদকের কারবার বন্ধ করা সহজ হবে।

বেনাপোল বন্দর পরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবির তরফদার জানান, বন্দরের যে স্থানটি থেকে ৪৯ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়েছে সেখানে সিসি ক্যামেরা ছিল না। তাই অপরাধী শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। তবে এসব ঘটনা এড়াতে বন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর