জার্মান জাতীয় দলের প্রাক্তন তারকা মেসুত ওজিল সম্প্রতি ইস্তাম্বুলের একটি মসজিদ পরিষ্কার করেছেন। গভীর মনোযোগ সহকারে তার এমন ধর্মীয় সেবামূলক কাজের ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়া ঘুরছে। সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীরা তার এমন কাজের ব্যাপক প্রশংসা করছেন।
সামাজিক নেটওয়ার্কে প্রকাশিত একটি ভিডিও ক্লিপে দেখা যায়, মেসুত ওজিল আরেকজনের সঙ্গে মিলে তুরস্কের ইস্তাম্বুলের এশিয়ার অংশে স্কোদার পাড়ায় অবস্থিত একটি মসজিদ পরিষ্কার করছেন।
ভিডিওটি প্রচারের পর তুরস্কের ধর্মীয় সংগঠনের প্রধান আলি আরবাশ ইনস্টাগ্রামে তার অফিসিয়াল পেজে তা পোস্ট করে লিখেছেন, ‘জুমার নামাজের পরে আমি চেলে খানে মসজিদে বিশ্ববিখ্যাত ফুটবল খেলোয়াড় মেসুত ওজিলের সঙ্গে দেখা করেছি।’
তিনি ইনস্টাগ্রামে যোগ করেন, ‘আমি আমাদের ভাই মেসুত ওজিলকে ধন্যবাদ জানাই, তিনি তার দায়িত্ববোধ এবং অনুকরণীয় আচরণের কারণে মসজিদ পরিষ্কার করার জন্য স্বেচ্ছাসেবা প্রদান করে ভালো উদাহরণ স্থাপন করেছেন।’
১৯৮৮ সালের ১৫ অক্টোবর জার্মানির ছোট্ট শহর জেলসেনকির্সেনে জন্ম ওজিলের। জন্ম জার্মানিতে হলেও ওজিল তুর্কি বংশোদ্ভূত। ২০০৯ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত জার্মানি জাতীয় দলে খেলেছেন মেসুত ওজিল। জাতীয় দলে ৯২ ম্যাচে ২৩ গোল করেছেন তিনি। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে জার্মানির হয়ে ২০১৪ বিশ্বকাপ জিতেছেন। ২০১৮ বিশ্বকাপের পর বর্ণবাদী আচরণের শিকার হন ওজিল। এরপর অভিমানে হুট করেই জাতীয় দল থেকে অবসর নেন ৩৫ বছর বয়সী এই তারকা।
ওজিলকে মুসলিম বিশ্বের ত্যাগী ফুটবলার বলা হয়। চীনের বিরুদ্ধে উইঘুর ইস্যুতে নিজের মতামত জানিয়ে একে একে সব হারান ওজিল। প্রিমিয়ার লিগের অন্যতম দামি খেলোয়াড়কে বসতে হয় বেঞ্চে, কাটা যায় বেতন, শুনতে হয় দুয়ো। মুসলিম বলেই সেদিন লড়াইটা মাঠ ছাপিয়ে জারি রাখতে হলো বাইরে, বর্ণবাদের বিরুদ্ধে-ধর্মের পক্ষে, বিরোধীদের বিপক্ষে এবং নিজের সঙ্গে। বুক চিতিয়ে লড়ে গেলেন মাঝমাঠের চ্যাম্পিয়ন, ইস্পাতকঠিন তুর্কি বংশোদ্ভূত জার্মান তারকা লিখলেন নতুন গল্প, ইসলামের জন্য ত্যাগ করলেন নিজের প্রায় সবকিছু।
সব হারিয়ে এখনও তিনি প্রায়শই শিরোনাম হন, কোথায়ও কোনো মানবিক অবস্থা জারি হলে সবার আগে সাহায্যের হাতটি বাড়িয়ে দেন, হিংসে ভুলিয়ে ভালোবাসায় ভরিয়ে দেন ওজিল। ফুটবল তারকা হিসেবে প্রথম সারিতে থাকবেন ইসলামকে বুকের গভীরে লালন করা বিশ্বকাপজয়ী ফুটবলার।
মেসুত ওজিল বর্ণবাদসহ নানা ইস্যুতে তার অবস্থান এবং বক্তব্যের জন্য আলোচিত হয়েছেন বারবার। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগানের সঙ্গে ছবি দিয়ে জার্মানিতে প্রচণ্ড সমালোচিত হন। মেসুত তখন প্রশ্ন রেখেছিলেন, ‘দেশটা তুরস্ক বলে? আমি মুসলিম বলে প্রশ্ন উঠেছে?’
কাতারের শ্রমিক ইস্যু ও সমকামী ইস্যুতে যখন মুখে হাত দিয়ে জার্মানরা ফটোসেশন করেন, সেখানেও প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর ছিলেন ওজিল। তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্পে সবার আগে সাহায্য পাঠিয়েছেন। প্রায়ই বিশ্বের অসহায় দেশগুলো অর্থ পায় তার, ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি বর্বরতা নিয়েও কোনো রাখঢাক না রেখে বলেছিলেন ওজিল।
২০১১ সালের ইউরো কাপ যখন চলছিল তখন রমজান মাস, ওজিল তখনকার জার্মান দলের অন্যতম তারকা। মাঠে নামার আগে কোচ জোয়াকিম লো মেসুতকে ডেকে পাঠালেন, ‘ম্যাচ খেলবে না রোজা রাখবে।’ মিডফিল্ডের তারকা অকপটে বললেন, ম্যাচ খেলব, তবে রোজা রেখে।
ইসলাম ও ধর্মের প্রতি তুর্কি বংশোদ্ভূত জার্মান ফুটবলারের শক্ত মানসিকতা প্রায় সবার জানা। ইসলাম ও মুসলিমের জন্য প্রতিবাদী এই কণ্ঠস্বর নিজের ক্যারিয়ার হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছিলেন, নিজেকে নিয়েও শঙ্কায় ছিলেন।
সেই প্রবাদপুরুষ, প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর এখনও সচল, ইসলাম ও মানবতার জন্য অকপটে বলে যান সত্যের পক্ষে থাকার কথা। ২০১৯ সালের সেরা মুসলিম ব্যক্তিত্বের একজন হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। ওজিল তার আচার-আচরণে ও কাজেকর্মে সর্বদাই সেরা।