হাফেজ মাহদি। মধ্য আফ্রিকার দেশ গ্যাবন প্রজাতন্ত্রের বাসিন্দা। বয়স ১২। সৌদি আরবের মক্কায় সদ্য শেষ হওয়া ৪৪তম কিং আবদুল আজিজ আন্তর্জাতিক কোরআন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে প্রশংসায় ভাসছেন।
কিশোর এই হাফেজে কোরআনের অসাধারণ নিষ্ঠা ও অধ্যাবসায়ে মুগ্ধ প্রতিযোগিতার বিচারক থেকে শুরু করে অন্য প্রতিযোগীরা। তার জীবনের গল্প বেশ রোমাঞ্চকর।
হাফেজ মাহদির উস্তাদ ইমাম জাকারিয়া সৌদি প্রেস এজেন্সির কাছে তার জীবনের গল্প তুলে ধরেন। ইমাম জাকারিয়া বলেন, হাফেজ মাহদি ইসলাম গ্রহণের মাত্র দুই বছর পরে এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে অসাধারণ ছাপ ফেলেছে। সে প্রতিযোগিতার চতুর্থ গ্রুপে (তাজবিদসহ ১৫ পারা হেফজ) অংশ নিয়েছে।
মাহদি তার পরিবারের একমাত্র মুসলিম সদস্য। ইসলাম গ্রহণের পর থেকে ইমাম জাকারিয়ার তত্ত্বাবধানে তার পড়ালেখা চলছে। ইমাম জাকারিয়া মাহদিদের বাড়ির পাশের এক মসজিদে ইমামিত করেন এবং একটি কোরআন শিক্ষা কেন্দ্র পরিচালনা করেন।
তিনি বলেন, আমি বিস্মিত হয়ে যাই; যখন মাহদি তার ছোট ভাইকে সঙ্গে নিয়ে এক সন্ধ্যায় আমার কাছে এসে ইসলাম গ্রহণ করার ইচ্ছা প্রকাশ করে। প্রথমে ভেবেছিলাম, সে মজা করছে। জাকারিয়া স্বীকার করেন, স্বাভাবিকভাবেই এত অল্পবয়সে তার এমন কথা অপ্রত্যাশিত ছিল। তার পরও আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, সে ইসলাম সম্পর্কে কিছু জানে কি-না। মাহদি জোর দিয়ে বলে, সে আল্লাহর ধর্ম অনুসরণ করতে চায়। মনে মনে বললাম, এটা আল্লাহর দান।
ইমাম জাকারিয়া তাকে কালেমায়ে শাহাদত পাঠ করান। তার নতুন নাম রাখা হয় মাহদি। ইসলাম গ্রহণের পর মাহদির নতুন জীবন শুরু হয়। তিনি মাহদিকে আরবি বর্ণমালা শেখাতে শুরু করেন, ধীরে ধীরে কোরআন মাজিদের ছোট ছোট সূরা পড়তে শুরু করে। এক পর্যায়ে সে নিজে থেকে কোরআন মাজিদ মুখস্থ করা শুরু করে এবং কোরআনের এক চতুর্থাংশ মুখস্থ করে ফেলে।
‘আমি লক্ষ্য করেছি যে, মাহদি অনেক দ্রুত কোরআন মুখস্ত করছে’, ইমাম জাকারিয়া বলেন, মাহদি ইসলাম গ্রহণের ঠিক এক সপ্তাহ পরে একদিন এক পৃষ্ঠা মুখস্থ করে আমাকে শোনায়।
কোরআন মাজিদ মুখস্থের পাশাপাশি মাহদি বিভিন্ন ইসলামিক বই ও তার নির্ধারিত পাঠ্যও মুখস্থ করতে থাকে। এটা তার বিশেষ দক্ষতা। হাফেজ মাহদির অসাধারণ মেধা আর ইচ্ছার প্রশংসা করে ইমাম জাকারিয়া বলেন, ‘মাহদি সত্যিই একজন অনন্য কিশোর, যা আমি কখনও দেখিনি।’
উল্লেখ্য, ৪ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া এই প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশসহ ১২৩টি দেশের ১৭৪ জন কোরআনের হাফেজ অংশগ্রহণ করেন।
তন্মধ্যে ২ গ্রুপে বাংলাদেশ প্রথমস্থান অর্জন করেছে। হাফেজ আনাস বিন আতিক ৩০ পারা গ্রুপে ও হাফেজ মুয়াজ মাহমুদ ১৫ পারা গ্রুপে প্রথম স্থান অর্জন করেন।
হাফেজ আনাস বিন আতিক পুরস্কার হিসেবে পান ২ লাখ রিয়াল যা বাংলাদেশের ৬৫ লাখ টাকা। আর হাফেজ মুয়াজ মাহমুদ পান ১ লাখ ৫০ হাজার রিয়াল যা বাংলাদেশের ৫০ লাখ টাকা।
বুধবার (২১ আগস্ট) রাতে সৌদি আরবে মক্কায় এশার নামাজের পর হারাম শরিফে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। অনুষ্ঠানে সৌদি সরকারের বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ আলে সৌদের পক্ষ থেকে মক্কার ডেপুটি গর্ভনর আল সাউদ বিন মিশাল বিন আবদুল আজিজ আলে সৌদ, সৌদি সরকারের ধর্মমন্ত্রী শায়খ ডা. আবদুল লতিফ বিন আবদুল আজিজ আলে শায়খ, কাবা শরিফের ইমাম ডা. আবদুর রহমান আস সুদাইস, কাবার ইমাম শায়খ মাহের আল মুয়াইকেলি, শায়খ আবদুল্লাহ আল জুহানি, শায়খ দাওসারিসহ সৌদি সরকারের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।