নানা আয়োজনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (রাবিসাস) ৫০ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী (সুবর্ণজয়ন্তী) উদযাপিত হয়েছে। শনিবার (২৬ অক্টোবর) বেলা পৌনে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের তাজউদ্দিন আহমেদ সিনেট ভবনের সামনে বেলুন উড়িয়ে এ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক তথ্য বিষয়ক উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী।
এর আগে, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সিনেট ভবনের সামনে থেকে একটি র্যালি বের করা হয়। র্যালিটি জোহা চত্বর প্রদক্ষিণ করে পুনরায় সেখানে গিয়ে শেষ হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইকবাল সোবহান বলেন, ‘আমাদের জাতীয় জীবনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ভূমিকা আছে। তবে সেটা এই জন্য নয় যে, বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক বিস্তৃত ভূমি রয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ডা. শামসুজ্জোহা রক্ত দিয়ে স্বাধীনতার বীজ বপন করেছিলেন। অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ইউনুস জীবন দিয়ে অশুভ চিন্তা, শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আজ যখন দেখি রাজনৈতিক দলের সভাপতি হওয়ার জন্য কেউ উপাচার্যের পদ ছেড়ে দিতে চান, তখন আমাদের লজ্জিত হতে হয়। জানি না তিনি লজ্জিত হন কিনা। যখন দেখি ছাত্র সংগঠন তার অতীত ঐতিহ্য ভুলে টর্চার সেলে নির্যাতনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তখন তা আমাদের কলঙ্কিত করে। সর্বক্ষেত্রে আমরা অবক্ষয়ের দিকে যাচ্ছি। ক্যাসিনো কিন্তু আমাদের ঐতিহ্য নয়। আমাদের সংস্কৃতি মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে রাবি ভিসি অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান বলেন, ‘একটি সংগঠনের ৫০ বছর পূর্তি এমনি এমনি হয় না। একে দাঁড় করানোর পেছনে অনেকের পরিশ্রম থাকে। সংগঠনের যিনি নেতৃত্বে থাকেন তাকে মূল ভূমিকা রাখতে হয়। সংগঠনের সদস্যরা যদি তাকে সহযোগিতা করে তবে সংগঠন এগিয়ে যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘সাংবাদিক হতে হলে ম্যাস কমিউনিকেশন অ্যান্ড জার্নালিজম পড়তে হবে এমন নয়, তবে সেখানে অবশ্যই সততা, নিষ্ঠা, সাহস থাকতে হবে। সাংবাদিকদের অবশ্যই সাহসী হতে হবে। আমার মনে হয়, একজন সাংবাদিকের যত রিস্ক, একজন ভাইস চ্যান্সেলরেরও তত রিস্ক থাকে না। কারণ সাংবাদিকের সত্য কথা সবার ভাল লাগবে এমন নয়।’
অধ্যাপক আব্দুস সোবহান বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ। আমাদের সংবিধানে যে চারটি মূলমন্ত্র আছে এটি তার একটি। রাষ্ট্র কোনো ধর্মের পৃষ্ঠপোষকতা করবে না তবে সবাই সবার মতো ধর্ম পালন করতে পারবে। কিন্তু পঁচাত্তরের পর তরুণ-যুবকদের কাছে অসাম্প্রদায়িকতা নিয়ে, জয় বাংলা স্লোগান নিয়ে ভুল ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছিল।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে নর্থ-সাউথ ইউনিভার্সিটির ভিসি অধ্যাপক আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘সাংবাদিকতার উদ্দেশ্য অনেক মহৎ। তবে আমি মনে করি এখান সাংবাদিকদের কেবল দেশে নয়, সারা বিশ্বে প্রভাব ছড়িয়ে পড়া উচিত। বর্তমানে বিশ্বময় সাংবাদিকতা একটি সংকটময় জায়গায় আছে।’
সংগঠনের সাবেক সভাপতি ও নাট্যজন অধ্যাপক মলয় ভৌমিকের সভাপতিত্বে প্রাক্তন সদস্য শাহ আলমের সঞ্চালনায় উদ্বোধনী অধিবেশনে স্বাগত বক্তব্য দেন সংগনঠির সাবেক সভাপতি আব্দুর রব মজুমদার। এছাড়া সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হামিদুজ্জামান এবং সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী অধিবেশনের পর দুপুর আড়াইটায় সিনেট ভবনে সংগঠনের আমন্ত্রিত অতিথি, সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, প্রাক্তন-বর্তমান সদস্যদের স্মৃতিচারণ শুরু হয়। এছাড়া বিকেল ৫টায় শুরু হয় সাংগঠনিক অধিবেশন। সন্ধ্যায় ধ্রুপদালোক নৃত্যনাট্য ‘বিদায় অভিশাপ’ পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হবে।