পিতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম এরপর বড় ভাই সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। তাদের পথ ধরেই সংসদে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বোন ডা. সৈয়দা জাকিয়া নূর। সংসদে প্রথম বক্তৃতায় বঙ্গবন্ধু বাবা-ভাইকে স্মরণ করে আপ্লুত হয়ে যান কিশোরগঞ্জের এই সংসদ সদস্য।
তিনি বলেন, 'আমার বড় ভাই সৈয়দ আশরাফের অসমাপ্ত কাজ দিয়ে আমি আমার কাজ শুরু করতে চাই। সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে কিশোরগঞ্জকে উন্নয়নের পথে নিয়ে যেতে চাই। সৈয়দ আশরাফ তার ব্যক্তিত্ব ও দূরদর্শিতা দিয়ে কিশোরগঞ্জবাসীকে সম্মানের জায়গায় নিয়ে গেছেন। আমি আমার জীবন দিয়ে চেষ্টা করব সেই সম্মান অক্ষুণ্ণ রাখতে।'
মঙ্গলবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
জাকিয়া নূর বলেন, 'এই সংসদের সদস্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, শহীদ নজরুল ইসলাম এবং সদ্য প্রয়াত আমার বড় ভাই সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। আমি এই সংসদের সদস্য এর চেয়ে গর্বের আর কি হতে পারে। এখন আমার বড় আপা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অক্লান্ত পরিশ্রম করে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তুলছেন।'
নিজের রাজনীতির হাতেখড়ি প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, 'আমি নিজেকে জিজ্ঞেস করি রাজনীতির প্রতি আগ্রহ সম্পৃক্ততা কবে থেকে শুরু শুরু হল। রাজনীতির পরিবারে আমার জন্ম। আমাদের বৈঠকখানায় দেখতাম বাবার নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর বাঁধানো ছবি। একদিন আমার আব্বা আর আম্মা বললেন চল নেতার কাছে যাই। স্থানটা ছিল মধুপুর গড় এর ভেতরে। যখন আব্বা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বৈঠক করছিলেন তখন আমি আমার ছোট বোন শেখ রাসেলের নেতৃত্ব স্লোগান দিচ্ছিলাম জয় বাংলা। সেখান থেকেই রাজনীতির হাতেখড়ি।'
তিনি বলেন, 'সেটাই ছিল রাজনীতির হাতেখড়ি। তারপর ১৯৭১, ১৯৭৫, স্বৈরাচার শাসন। চোখের সামনে ছাত্রলীগের নোমান ভাই এর মৃত্যু দেখেছি। কিন্তু মৃত্যু আমাদের ভয় পাওয়া শেখায়নি, নতুন উদ্যমে শিখিয়েছে কিভাবে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি পরাজিত করতে হয়।'
নিজের অতীত দুর্বিষহ জীবনের কথা তুলে ধরে বলেন, 'জীবন জীবিকার প্রয়োজনে খানিকটা বৈরী পরিস্থিতির শিকার হয়ে প্রবাস জীবন কাটিয়েছি। আমি আবার ফিরে এসেছি আমি আমার প্রাণের মাতৃভূমিতে এর চেয়ে বড় তৃপ্তি আর কি হতে পারে। খুব বেশিদিন আগের কথা না প্রবাসে বিদেশি বন্ধুরা বাংলাদেশ বলত ভারত বেষ্টিত বার্মার পাশে লোকে লোকারণ্য ছোট্ট একটি দেশ। খারাপ প্রাকৃতিক দুর্যোগ ক্ষুধা দারিদ্র যার নিত্য সঙ্গী। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল। এখন মাথা উঁচু করে বলতি পারি আমি বাংলাদেশের মেয়ে, আমি বাংলাদেশের নাগরিক। আজ আমি গর্বিত এই উন্নয়নের মহাসড়কে অংশ গ্রহণের সুযোগ পেয়ে।'
বাবা হত্যার পর সেই সময়ের স্মৃতি তুলে ধরে বলেন, 'আজও আমার স্মৃতি জ্বল জ্বল করে ৭৫ পরবর্তী বিভীষিকা দিনের কথা। আমার পিতাকে হারিয়েছি। ঢাকা শহরে আমাদের থাকার মত জায়গা ছিল না। আমার বড় দুই ভাই তখন লন্ডনে নির্বাসিত। এখানে সেখানে মাস খানেক ঘুরে আমার মা আমাদের নিয়ে ময়মনসিংহে চলে গেলেন মাথা গোজার ঠাঁই হলো। কিন্তু কি অদ্ভুত দেশ কোনো সরকারি স্কুলে আমাদের ভর্তি করা হলো না। কি দোষ করেছিলাম আমরা? বাবাকে খুব কাছে পেতে ইচ্ছে হতো।' এ সময় আপ্লুত হয়ে যান তিনি।
তিনি বলেন, 'যে আসনের আমি সংসদ সদস্য এখানে সামান্য কিছু শঙ্কা আমার মাঝে কাজ করছে। এই আসনে সংসদ সদস্য ছিলেন আমার পিতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, আমার বড় ভাই সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। তাই এটি একটি স্পর্শকাতর আসন। তবে আমার কাছে অনুভূতির জায়গা, আশার জায়গা এই যে কিশোরগঞ্জবাসী ৬০ এর দশকের শুরু থেকে আমাদের পাশে আছেন এটি পরম আস্থার স্থান। বড় ভাই সৈয়দ আশরাফের অসমাপ্ত কাজ দিয়ে আমি আমার কাজ শুরু করতে চাই। এবং সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে কিশোরগঞ্জকে উন্নয়নের পথে নিয়ে যেতে চাই। সৈয়দ আশরাফ তার ব্যক্তিত্ব ও দূরদর্শিতার দিয়ে কিশোরগঞ্জবাসীকে সম্মানের জায়গায় নিয়ে গেছেন। আমি আমার জীবন দিয়ে চেষ্টা করব সেই সম্মান অক্ষুণ্ণ রাখতে।'
জাকিয়া নূর বলেন, 'আমার উদ্দেশ্য এমন এক কিশোরগঞ্জ গড়া যেখানে সন্ত্রাস থাকবে না, মাদক থাকবে না, টেন্ডারবাজি থাকবে না। শুধু ভৌত উন্নয়নের দিকে দেখব না। আমার কাজের ধরণ হবে আমার মত। হয়তো কিছু ক্ষেত্রে আমার ভাই থেকে আলাদা। তবে একটা জায়গায় আমাদের লক্ষ্য এক এবং অভিন্ন, সৎ আদর্শ এবং কল্যাণের রাজনীতি করা।'