তানজিনা তাইসিনের একগুচ্ছ কবিতা

  • তানজিনা তাইসিন
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

বাদামী অসুখ

পুড়িয়ে দিস মেয়ে,
এইসব বেহায়া সভ্যতা!

বিজ্ঞাপন

ছোপধরা রক্তে
নাকের কাছটা লাল কেন?
ওই যে সারি সারি মানুষের ভিড়
নীল কালো রিকশা।
ভ্যানগাড়ি, বিশ্ব ইজতেমা,
তুই-আমি এক হয়ে যাই।

গলির মোড়ে যে অশতিপর বৃদ্ধ
ওইখানে হেঁটেছিল কে?
আদরে কি ছুঁয়েছিলি ঠোঁটে,
প্রেমিকের কান?
তক্ষনি গলা চেপে
শ্বাসরোধ করেছিল কেউ?
প্রেমার্দ্র  ঠোঁটে ঢেলেছিল
নৈতিকতার বিষ,
ঠোঁট পুড়েছিল নিকোটিন আঁচে?

বাক্সে বাক্সে দুমড়ে মুচড়ে
আমারই মতন ছিলি
রংধনু সেলফোন হাতে
জন্মেরও আগে জঠরের মতো
কুণ্ডলি মেয়ে?

গাছের সবুজ হাতে মেখে
কে তোকে ছুঁতো?
ছুঁয়ে দিলে বাদামী অসুখ।
ছুঁয়ে দিলে বেঁচে যেতি তুই
ছুঁয়ে দিলে মরে যাওয়া...

ওরা ঠিক বলল আজ,
মরে গেলে অর্থবহ হয়ে ওঠে
অর্থহীন বেঁচে থাকা।
মরে যা.. আরো মরে যা তুই!
মরে গিয়ে বাঁচ!

কারা? কে!

কারা ঢুকে পড়ে
সকাল-দুপুরে-রাতে?
শানানো ছুরির
ঝকঝকে ফলা হাতে?
কারা সারাক্ষণ
মগজে পেরেক ঠোকে?
হরষের মতো
মশগুল কারো শোকে!
কারা কাটে ওই
মাকড়শা জালগুলো?
লোবানের ছাই
ঝেড়ে মুছে রাখা ধুলো!

বাড়ি যাও!

শো শো কইরা বাতাস উঠল!
আছাড়ি বিছাড়ি করে পাতা।
গাছের মইধ্যে পাতা
আর চউক্ষের উপরে পাতা
ভিজা ভিজা উঠে খালি!
কোন দিক দিয়া আসে পানি?
দমকাইয়া দমকাইয়া ওঠে
বাতাস আর মুচরাইন্যা পরাণ!
আহারে পরাণ,
তুমি কার শোকে কান্দো
তারে বুঝি দেখো নাইও কোনোদিন!
যারে তুমি দেখো নাই কোনোদিন
সে তোমারেও দেখে নাই কোনোদিন!
গুমরাইন্যা বাতাসের ভিতর
শুনতে পাইছো কিছু
গুনগুনাইন্যা ফোঁপানি।
পাতার ফাঁকে যে চান্দ ভাইসা যায়,
তার আলো পড়ে
দুনিয়ার ব্যাবাক মাইনষ্যের গায়।
ভাইসা যায় পশলা চান্দের আলো
ভাইসা যাও তুমি!
ঝিরঝিরা জোছনা পড়া
শীতের রাইতে,
মুচরাইন্যা পরাণ!
হাঁইটা হাঁইটা, কদ্দুর যাইবা আর?
বাড়ি ফিরা যাও!

প্রেম একটা ভ্রমণ আসলে

তাইলে আমারে বলো,
প্রেম তোমারে কই নিয়া যাবে?
একটা ইউটোপিয়ান পৃথিবী ভাবতেছো?
যেইখানে চাঁদ হাসে, পাখি গায়, তারা ঝিলমিলায়?

প্রেম বরং একটা ভ্রমণ হইতে পারে,
আমার সাথে তোমার একটা ভ্রমণ।
যেইখানে আমি-তুমির সাথে
টং দোকানের চা-ওয়ালাও থাকে।
রাস্তার টহল পুলিশ
যখন তখন দাঁড় করায় আমাদের!
রাস্তার হলুদ আলোর নিচে
এরপর আমরা হাঁইটা হাঁইটা যাই,
হাঁইটা হাঁইটা একই বৃত্তে ঘুরপাক খাই।

কিংবা ধরো, সকাল বেলার চা
কাঁচামরিচ,
বরবটির আঁটি,
মধুর বোতল,
ইলিশ মাছের পেটি,
সরিষা মাখা ঝোল
এইসবেতে তুমি মিশা থাকো
এইসবেতে আমি মিশা থাকি
এইসবেতে প্রেম মিশা থাকে।

সেইটা একটা প্রেম হইতে পারে
কিংবা একটা ভ্রমণ।

হাহাকার থাক!

যে ক্ষতচিহ্ন ঢাকতে
তুমি প্রগলভ হও কদাচিৎ,
তার দেখা পেয়ে যাও ঠিক
আবার,
সফেদ অথচ নির্ঘুম বালিশে।

বাইজেন্টাইন কোনো প্রাচীন কিশোরের
মুখ,
মায়া ভরে মনে করো
আজলা ভরে জলের মতন চুমু খাও
কপালে।

একপাটি জুতা চুরি গেছে,
সিন্ডারেলা!
মদের আসরে তুমি নেচেছো
একা এবং একা,
একা একা।

আদিমতম নর পৃথিবীর
অথবা আদিমতম নারী
নিউরনের কোষে জমা স্মৃতি
তোমার,
আদি থেকে আজ অবধি
সময় ভ্রমণ।

যেহেতু যৌথতা মৌলিক
আর ছোট ছোট জীবনগুলো
হেঁটে হেঁটে চলে যায়
শশ্মান, কবরখানা অথবা
সিমিট্রির দিকে,
অতৃপ্ত!
সবকিছু শেষ হয়ে যায় না।

গোত্তা খাওয়া অতৃপ্তি
এডাম কিংবা ঈভ কিংবা লিলিথ,
কিংবা সবার!

কোনো এক আলোকবর্ষ পরে
দীর্ঘশ্বাসগুলো আত্মার মতো
ঝরে পড়বেই
কোনো এক মানবের দেহে,
মানবীর দেহে।

ততদিনে তুমি জেনে গেছো,
যা হয়, তা হয় সৌভাগ্য
নয় দুর্ভাগ্য।
তুমি মরাল গ্রীবা তুলে
বাতাসে চাইতেই জেনে যাবে
এ জন্মে
দূরতম জন্মের ছুঁতে না পারা
কিশোর তোমার বাগদত্তা!

ততদিনে এই স্মৃতি যদি মুছে যায়,
হা ঈশ্বর!
হাহাকারটুকু ততদিন রেখো!

অলঙ্করণ শতাব্দী জাহিদ