সচিবালয়ে পুরনো আমলের সমস্ত আমলারাই থেকে গেছে এবং তারা জানে কৌশলে কি করে দুর্নীতি করতে হয় এবং তারা সে কাজগুলো সমানে করে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শনিবার (১৮ জানুয়ারি) সকালে গুলশানস্থ বিএনপি চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ডাকা এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ভয়ংকর যে একটা মাথাভাড়ি প্রশাসন আছে, এদের সরকারকে কিন্তু অনেক বেশি বেতন দিতে হয় এবং অপ্রয়োজনীয় কাজে, আনপ্রোডাক্টিভ খাতে এত বেশি অতীতে ব্যয় করা হয়েছে, যেগুলো এখনো থেকে গেছে। যেমন যে স্কুলগুলোর প্রয়োজন নাই, সেগুলোকে আবার নতুন করে এমপিও করার তদবির বাণিজ্য শুরু হয়েছে। যে সমস্ত জায়গাগুলোতে এখন টাকা পয়সা দেয়ারই দরকার নাই সেগুলোতে টাকা পয়সা দেয়ার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে একটা যোগসাজশ করে দুর্নীতি যারা করে সচিবালয় থেকে চিঠি বের করে নেয়া হচ্ছে, এটা আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি। এটা তো বন্ধ করতে পারছে না তারা। কারণ সচিবালয়ে পুরনো আমলের সমস্ত আমলারাই থেকে গেছে এবং তারা জানে কৌশলে কি করে দুর্নীতি করতে হয় এবং তারা সে কাজগুলো করে যাছে সমানে।
সরকারি কর্মকর্তাদের মহার্ঘ ভাতা দেয়া নিয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি যেহেতু অন্তর্বর্তী সরকার, এধরণের স্টেপগুলো নিঃসন্দেহে কিছুটা সমস্যা তৈরি করবে। একইসাথে মহার্ঘ ভাতা তো কিছুটা মূল্যস্ফীতি বাড়াবে, সাধারণ মানুষদের তো আয় বাড়ছে না। এই বিষয়গুলোকে, আমার মনে হয় আপাতত খুব একটা প্রয়োজন ছিলো না। যদি তারা নির্বাচনের দিকে যেত, যেটা আমরা বার বার বলে আসছি, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করলে অনেক সমস্যায় সমাধান হয়ে যায়। যেটা একমাত্র নির্বাচিত সংসদ ছাড়া সম্ভব নয়। সেজন্যই আমরা এত জোর দিচ্ছি একটা জবাবদিহিমূলক সরকার তৈরি করার।
তিনি বলেন, পতিত আওয়ামী লীগ সরকার গত ১৫ বছর দুর্নীতি ও লুটপাটের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে কার্যত ধ্বংস করে ফেলেছে। ডিসেম্বর ২০২৪ অনুযায়ী, বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ২১ বিলিয়ন ডলারে নেমে গিয়েছে, দেশের মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১১%, অনেক ক্ষেত্রে এটি ২৫% এরও বেশি বেড়েছে। অথচ দক্ষিণ এশিয়া বিশেষত শ্রীলংকার মত দেশে মূল্যস্ফীতি উল্লেখযোগ্য হারে করেছে। দেশের মোট ঋণের পরিমাণ ২০ লাখ কোটি টাকা অতিক্রম করেছে এবং ব্যাংকিং খাতের তারল্য সংকটের কারণে জনগণ তাদের কষ্টার্জিত আমানত ফেরত পাচ্ছে না। দেশের অর্থনীতি কার্যত ভেঙে পড়েছে।
এমন বাস্তবতায় দেশের অর্থনীতিকে স্বাভাবিক ও গতিশীল অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়া অব্যশই একটি বড় চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশের শাসন ব্যবস্থায় যেই থাকুক না কেন, তাকেই সেই চ্যালেঞ্জ নিতে হবে এবং যোগ্যতা ও সাহসের সাথে তা মোকাবিলা করতে হবে। কিন্তু অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এই চ্যালেঞ্জগুলোকে কার্যকর উপায়ে মোকাবিলা না করে এবং একটি অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের ভিত্তি তৈরির দিকে মনোযোগ না দিয়ে চলতি অর্থ বছরের মাঝপথে হঠাৎ করে ভ্যাট ও শুল্ক বৃদ্ধি করল, যা সহজ কিন্তু জনগণের জন্য কল্যাণকর নয়।
এসময় সরকারি অপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন প্রজেক্ট ও পরিচালন ব্যয় কমানোর পাশাপাশি সরকার নতুন নতুন উৎস ও উপায় খুঁজে বের করার প্রতি জোর দেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, প্রত্যক্ষ করের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ স্লাবে ইনকাম ট্যাক্সের হার বৃদ্ধি এবং সারচার্জ তথা ওয়েলথ ট্যাক্স বাড়ানোর মাধ্যমে কর আদায়ের ক্ষেত্রে আরও মনোযোগী হওয়া যেতে পারে। TIN নম্বরধারীদের রিটার্ন সাবমিট এবং কর আদায় নিশ্চিত করার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারে। করযোগ্য আয়কে করের আওতায় নিয়ে আসা সরকারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে।
এছাড়াও দুর্নীতিবাজ ব্যক্তিদের সম্পদ, যা জব্দ করা হয়েছে বা একাউন্ট ফ্রিজ করা হয়েছে, আইনানুগ পন্থায় সেই অর্থ ব্যবহার করা, কালো টাকা উদ্ধারের জোরালো চেষ্টা করা, ব্যাংকের লুণ্ঠিত টাকা এবং নন-পারফরম্যান্স লোনের টাকা উদ্ধারের ব্যবস্থা করা, প্রেক্ষাপটে আইএমএফ থেকে ঋণ পেতে তাদের প্রদত্ত কঠিন শর্তগুলো শিথিল করার চেষ্টা করা, পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় অনেক ক্ষমতাশালী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে দেয়া কর অব্যাহতি বন্ধ করা, সকল ঋণ খেলাপি অলিগার্কদেরকে অপরিশোধিত ঋণ পরিশোধে এবং বিদেশে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনতে বাধ্য করা, রাজস্ব প্রশাসনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং নজিরবিহীন দুর্নীতি প্রতিরোধ করে সরকারের বার্ষিক রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করার প্রতি জোর দেন তিনি।
তিনি সরকারকে রাজস্ব বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে আরও বলেন, কর ফাঁকি রোধ করে এবং কর প্রশাসনের উন্নতি করেও রাজস্ব আয় বাড়ানো যায়। অর্থনীতির অন্যতম মূল উৎস কৃষির ওপর আরও জোর দিতে হবে। প্রতিদিনকার কৃষিপণ্য উৎপাদনে তথা শাকসবজি উৎপাদনে বাড়ির আঙ্গিনা থেকে শুরু করে সকল পতিত জমিই ব্যবহার করতে হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ঘাটতি মেটানোর সবচেয়ে সহজ উপায়, আপনি এনবিআর কে বলবেন, ঘাটতি কমাতে কি করা যায়? এনবিআর খুব সহজভাবে কর বাড়ানো ছাড়া তো আর কোন কাজ নেই সেটা ভ্যাট বলেন, কর বলেন। একটা সরকার এত সহজ অপশনে না গিয়ে সেখানে যে বিকল্পের কথা আজকে বলছি, অনেকগুলো বিকল্প আছে কিন্তু। সে বিকল্পগুলো তাদের এড্রেস করার উচিত ছিলো। বাংলাদেশের মানুষ যে দুঃখ কষ্টের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করছে, তারা দু'বেলা খেতে পারছে না, ক্রয় ক্ষমতা ক্রমান্বয়ে কমে যাচ্ছে। সেই অবস্থায় যদি আবার কর আরোপ করেন তাহলে তো তারা আরও দরিদ্র সীমার নিচে নেমে যাবে। তাই সরকারের উচিত ছিলো বিকল্প খুঁজে বের করে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়া।