ভোটারের আকাশে ক্ষমতার রংধনু উঠবে কি?

  • তুষার আবদুল্লাহ
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

তুষার আবদুল্লাহ, ছবি: বার্তা২৪

তুষার আবদুল্লাহ, ছবি: বার্তা২৪

ভোট মাঠে গড়াতে না গড়াতেই ঐক্যফ্রন্ট বা বিএনপির প্রার্থীরা খেলার অযোগ্য হয়ে পড়ছেন। দুই বছরের সাজা কাঁধে নিয়ে ভোটের মাঠে নামা যাবে না। আদালতের এই আদেশে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ অনেক নেতাই যোগ্যতা হারিয়েছেন ভোটের মাঠে নামার। বিএনপির এই আশংকা ছিল বোঝা যায়- এক আসনে একাধিক জনকে মনোনয়ন দেয়ায়। ভোটের মাঠে নামবে কি নামবে না এনিয়ে নানা শংকা বাজারে প্রচারিত থাকলেও, বিএনপি বাড়ির কাজ গুছিয়ে রেখেছিল। তাই তিনশ আসনে আটশ প্রার্থী দিতে খুব কষ্ট করতে হয়নি। একাধিক প্রার্থী আওয়ামী লীগও দিয়েছে। বেশি প্রার্থী দেয়া হয়েছে দলের ভেতরকার কিছু কোন্দল শেষ পর্যন্ত মিটিয়ে ফেলতে না পারা, মামলার ঝুঁকি এবং জোটের সঙ্গে দর কষাকষি জিইয়ে থাকায়। স্পটত: বোঝা যাচ্ছে মনোয়ন প্রত্যাহারের দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে সকল পক্ষের সেরা খেলোয়াড়দের দেখার জন্য।

আমাদের ভোটাররা সাধারণত প্রতীকে বিভক্ত। নৌকা, ধানের শীষ এবং লাঙ্গলে অন্ধ ভোটারদের বড় একটি অংশ। এই অংশের বাইরে যারা আছেন, তারা যেমন এবারের প্রার্থীতায় সন্তুষ্ট হতে পারেননি, তেমনি যাদের অন্ধ সমর্থক বলে জানি অসন্তোষ রয়েছে তাদেরও। আওয়ামী লীগের সমর্থকরা বলছেন- গত দশ বছরে এমন কয়েকজন সংসদ সদস্য ছিলেন, যাদের সঙ্গে তৃণমূলের যোগাযোগ ছিল না। এলাকার মানুষের ইশতেহার কানে তোলেননি। বিতর্কিত হয়েছেন নানা কারণে তাদেরকে তারা আর ভোটের মাঠে দেখতে চাননি। বিশেষ করে ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগে রাজনীতির বাইরের অনেকে ঢুকে পড়েছিলেন। তাদের আমলনামা যে ভালো না, এটা দল ভালো করেই জানে। তবুও তাদের দেখা গেলো- ঘোষিত তালিকায়। অথচ সাইড লাইনে তৃণমূল ঘনিষ্ঠ, সম্ভাবনাময় অনেক প্রার্থী অপেক্ষায় ছিলেন। তাদের মাঠে নামালে দলের মনোনয়ন সম্পর্কে শুধু দল নয়, সার্বিক ভোটারদের মাঝেও ইতিবাচক প্রভাব পড়তো। তা হয়নি।

বিজ্ঞাপন

জোটের মিত্রদের উপহার দিতে গিয়েও কয়েকজন যোগ্য প্রার্থী বাদ পড়েছেন। বিএনপি তাদের বেশ কয়েকজন হেভিওয়েট নেতাকে হারিয়েছে মামলার ফাঁদে পড়ে। বিকল্প হিসেবে এসেছেন পরিবারের সদস্যরা। এমনটা আওয়ামী লীগেও হয়েছে। বিএনপির অনেক প্রার্থীর গুণগত মান নিয়ে দলের নেতা–কর্মীদের মধ্যে প্রশ্ন রয়েছে। আলাদা করে তাদের নাম উল্লেখ না করলেও মূলধারা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উভয় দলের বিতর্কিত ও গুণগতমানে ঘাটতি রয়েছে এমন প্রার্থীরা সমালোচিত হচ্ছেন।

এই যখন বাস্তবতা, তাহলে ভোটাররা পাচ্ছেন কি ভোটের শেষে- নতুন সরকার, ক্ষমতায় নতুন কোন দল? এ দৃশ্য দেখা ছাড়া আম মানুষ ও ভোটারদের বরাতে নতুন কোনো প্রাপ্তি যোগ হবে, এমন ভরসা তাদের নেই।

১৯৯১ সাল থেকে নির্বাচন সংস্কৃতি, রাজনৈতিক শুদ্ধতার যে স্বপ্ন দেখেছিলেন তারা, তা কখনো আলোতে আসেনি। বরং দুটোরই গুণগত মান কমেছে। নির্বাচনে ভোট কেনার জন্য ভোটের রাতে গরিব এলাকায় টাকা উড়তো বলে গল্প প্রচলিত ছিল। বাস্তবতা আর গল্পের খুব ফারাক ছিল না। এখন ভোটের রাতে নয়, টাকা উড়ে ক্ষমতার মেয়াদজুড়েই। ভোট এখন বিনিয়োগের লাভজনক খাত। দ্রুত বিনিয়োগ উঠে আসার মতো আর কোনো খাত আছে বলে মনে হয় না। শ্রমিক যেমন তার উৎপাদনের স্বাদ নিতে পারেন না। ভোটাররাও তাই। তারা ক্ষমতার শ্রমিক হয়েই থাকবেন। নিকট আগামীতেতো বটেই। দূর আগামীতেও ক্ষমতার স্বাদ তারা পাবেন, এমন কোনো রংধনুর রেখা দেখা যাচ্ছে না।

তুষার আবদুল্লাহ: বার্তা প্রধান, সময় টেলিভিশন