খুলনায় জিআরপি থানায় গণধর্ষণ: মহিলার ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, খুলনা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ধর্ষণের প্রতীকী ছবি

ধর্ষণের প্রতীকী ছবি

খুলনা জিআরপি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উসমান গণি পাঠানসহ ৫ পুলিশ সদস্য ৩ সন্তানের জননীকে গণধর্ষণ করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। খুলনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ওই নারী পুলিশের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ করেছেন। ঘটনা তদন্তে পাকশী রেলওয়ে জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম সোমবার তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। তদন্ত কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আদালতের নির্দেশে সোমবার (৫ আগস্ট) দুপুরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। এ ঘটনা তদন্তে সোমবার তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে রেলওয়ে পুলিশ।

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ওই মহিলার বাড়ি নগরীর মহেশ্বরপাশা এলাকায়। তিনি তিন সন্তানের জননী। তার শ্বশুর বাড়ি সিলেটে। তার বড় বোন ও খালাতো ভাই অভিযোগ করেন, তাদের বোন (৩০) গত শুক্রবার বিকালে যশোরে ডাক্তার দেখাতে যান। এরপর তিনি খুলনায় আসার জন্য বেনাপোল থেকে খুলনাগামী কমিউটার ট্রেনে ওঠেন। ট্রেনটি ফুলতলা এলাকায় পৌঁছালে ট্রেনে থাকা জিআরপি পুলিশ মোবাইল চুরি করার অভিযোগ তুলে তাকে আটক করে। এরপর ট্রেন থেকে নামিয়ে তাকে খুলনা জিআরপি থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।

পরিবারের সদস্যরা জানান, খবর পেয়ে তারা থানায় গেলে জিআরপি থানার ওসি উসমান গণি এক লাখ টাকা দিলে তাদের বোনকে ছেড়ে দেবে বলে জানান। কিন্তু তারা টাকা দিতে না পেরে বাড়ি চলে যান। সকালে থানায় গেলে কাঁদতে কাঁদতে তার বোন জানায়, রাতে থানা হাজতে ওসি তাকে ধর্ষণ করেছে। ওসি ধর্ষণ করে চলে যাওয়ার পর পর্যায়ক্রমে আরও চার পুলিশ সদস্য তাকে ধর্ষণ করে।

তারা আরও অভিযোগ করেন, শনিবার সকালে তার বোনকে পাঁচ বোতল ফেনসিডিলসহ গ্রেফতার করা হয়েছে দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করে। ধর্ষণের আগে তার বোনকে পুলিশ সদস্যরা মারধরও করে।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, গত রোববার ওই মহিলা খুলনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আইনজীবীর মাধ্যমে জামিনের আবেদন করেন। এছাড়া তাকে মারধর ও গণধর্ষণ করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন। আদালত তার জবানবন্দি গ্রহণ করেন এবং ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর নির্দেশ দেন। আদালতের নির্দেশে তাকে রোববার রাতে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু ডাক্তার না থাকায় ওই দিন তার পরীক্ষা হয়নি।

খুমেক হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ও ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের (ওসিসি) সমন্বয়কারী ডা. অঞ্জন কুমার চক্রবর্তী বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, 'ওই মহিলাকে সোমবার সকালে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি করা হয়। এরপর তাকে ওসিসিতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে খুলনা মেডিকেল কলেজের গাইনি বিভাগে নিয়ে তার ডাক্তারি পরীক্ষা করা হয়েছে। নমুনা সংগ্রহ করে ডিএনএ টেস্টের জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। ধর্ষণের আলামত আছে কিনা তা রিপোর্ট পাওয়ার পর জানা যাবে।'

এদিকে, এ ঘটনা তদন্তে পাকশী রেলওয়ে জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম সোমবার তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। তদন্ত কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে কুষ্টিয়া রেলওয়ে সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার ফিরোজ আহমেদকে। অপর দুই সদস্য হলেন পুলিশ পরিদর্শক শ ম কামাল হোসেইন ও মো. বাহারুল ইসলাম।

সোমবার সকাল ও দুপুরে খুলনা জিআরপি থানায় গিয়ে ওসি উছমান গণি পাঠানকে পাওয়া যায়নি। থানার ডিউটি অফিসার এস আই মফিজুল সাংবাদিকদের জানান, ওসি উছমান গণি খুমেক হাসপাতালে গেছেন।

মহিলার বোন ও খালাতো ভাই অভিযোগ করেন, গত রোববার রাতে ওসি নিজে তাদের কাছে গিয়ে ঘটনার জন্য ক্ষমা চান এবং দেড় লাখ টাকা নিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ প্রত্যাহার করার প্রস্তাব দেন। এছাড়া ওসি বিভিন্নভাবে তাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করছেন।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ওসি উছমান গণি বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, 'ওই মহিলাকে ট্রেনের মধ্য থেকে পাঁচ বোতল ফেনসিডিলসহ হাতেনাতে আটক করা হয়। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সে এবং তার পরিবার ধর্ষণের মিথ্যা অভিযোগ করছে।'