খুলনা বৃক্ষমেলায় পূরণ হয়নি বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা

  • মানজারুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, খুলনা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর

ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর

১৭ দিনের খুলনা বিভাগীয় বৃক্ষমেলা শেষ হতে যাচ্ছে আগামী শনিবার (২৭ জুলাই)। শেষ মুহূর্তে বেড়েছে মেলায় দর্শনার্থী, তবে সেই তুলনায় বাড়েনি ক্রেতা। বিক্রেতারা বলছেন, গত বছরের তুলনায় এবার গাছ বিক্রি কম হয়েছে।

শুক্রবার (২৬ জুলাই) দুপুরে খুলনার সার্ক‌িট হাউজ ময়দানে বৃক্ষমেলায় গিয়ে দেখা যায়, শেষ মুহূর্তে জমজমাট বৃক্ষমেলা। বিশেষ করে ছুটির দিনে মেলায় উপচে পড়া ভিড়। নাগরিক জীবন‌ের কোলাহল থেকে হারিয়ে যাওয়া সবুজ অরণ্য যেন মেলায় টানছে বৃক্ষপ্রেমীদের।

বিজ্ঞাপন

প্রতিদিন মেলায় প্রয়োজনীয় গাছের খোঁজে আসছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। স্টলে স্টলে শোভা পাচ্ছে লেবু, জাম্বুরা, পেয়ারা, মাল্টা, ড্রাগন, কমলা, নাশপতি, সফেদাসহ বাহারি ফলের গাছ। চোখ জুড়ানো সবুজের মেলায় এসে খুশি দর্শনার্থীরা।

Khulna Tree Fair

মেলায় ঢুকতেই চোখে পড়ে শতাধিক জাতের আমগাছ। মেলায় আসা মানুষের আগ্রহ বেশি আমগাছের প্রতি। বিভিন্ন জাতের ফলের পাশাপাশি অর্কিড, ক্যাকটাস, বনসাই, ড্রসিনা, অ্যানথোরাম, মুসান্ডা, এরিকা ফুলের গাছ মেলার সৌন্দর্য বাড়িয়েছে বহু গুণে।

মেলাজুড়ে আছে বনজ বৃক্ষের সমাহার। ১০ টাকা থেকে শুরু করে ২০ হাজার টাকার সৌখিন গাছ শোভা পাচ্ছে এবারের বৃক্ষমেলায়। বিশেষ করে যারা বাড়ির ছাদে বাগান করেন তারা কিনছেন ফল-ফুলের নানান গাছ।

মেলা নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ঠিক বাম পাশে রয়েছে ‘ম্যাজিক ফেরোমন সবজি স্পেশাল’ নামে একটি বেড। যেখানে একই সঙ্গে মাছ, সবজি, ফলজ ও বনজ গাছ চাষের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। রয়েছে ভোজন রসিকদের পছন্দের অন্যতম মাংস রান্নার উপকরণ ‘চুইঝাল’ -এর গুণাগুণ সম্বলিত ফেস্টুনও।

Khulna Tree Fair

খুলনা বিভাগীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলায় কমিটির হিসাব অনুযায়ী, এবারের মেলায় স্টল রয়েছে ৫৬টি। ১১ জুলাই মেলা উদ্বোধনের দিন বনজ ১১৩টি, ফলদ ৩১০টি, ওষধি ১১৯টি, বর্ধণকারী ৩৪৯টি এবং ফুল গাছ বিক্রি হয় ২৩৫টি; যার মূল্য ছিল ৮৬ হাজার ৪৯৫ টাকা। সেদিন থেকে গত ২৫ জুলাই পর্যন্ত ১৫ দিনে ৩৮ হাজার ৪২৩টি গাছ বিক্রি হয়েছে; যার মূল্য ৩৫ লাখ ২৫ হাজার ৯১১ টাকা।

এবছর খুলন অঞ্চলে পর্যাপ্ত বৃষ্ট‌ি না হওয়ায় বৃক্ষমেলায় গাছের চারা বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। গত বছরের তুলনায় এবারের বৃক্ষমেলায় বিক্রির পরিমাণ কমেছে। মেলা কমিটির হিসাব মতে গত বছর বৃক্ষমেলার ১৮ দিনে ৬৪ হাজার ৫৪৭টি বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারা বিক্রি হয়েছিল; যার মূল্য ছিল ৪২ লাখ ৮৫ হাজার ৯৩২ টাকা।

সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের সহকারী বনকর্মী মো. আমিনুল ইসলাম বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, বৃক্ষপ্রেমী ও নার্সারি মালিকদের দাবি মেলা এক মাস করার। এবারের বৃক্ষমেলায় চারা বিক্রির পরিমাণ কম হওয়ার কারণ মেলা শুরুর সময় থেকে খরা। এছাড়া প্রচারণাও কম হয়েছে। তাছাড়া সরকারি বরাদ্দ বাড়ানো প্রয়োজন।

Khulna Tree Fair

বৃক্ষমেলায় গাছের চারা কিনতে আসা খুলনা করোনেশন স্কুলের ছাত্রী জে‌রিন তাস‌নিন তুবা বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, বৃক্ষমেলায় আসলে মন ভালো হয়ে যায়। অনেক প্রজাতির গাছ দেখা যায়, চেনা যায়। কিন্তু মেলা এক মাস হলে আরো ভালো হতো।

আজাদ নার্সারির প্রতিনিধি আনিসুর রহমান বলেন, এবারের বৃক্ষমেলার আয়োজন অনেক ভালো। তবে ১৫ দিন পেরিয়ে গেলেও বেচাকেনা তেমন ভালো হচ্ছে না। মানুষের ভিড়ও চোখে পড়ার মতো। মানুষের মধ্যে সৌখিনতা বেড়েছে, ফলে অনেকেই এখন ছাদকৃষির দিকে ঝুঁকছেন, কিন্তু মেলা এক মাস হলে আশানুরূপ বিক্রি হতো।

সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা মো. বশিরুল-আল-মামুন জানান, আমরা এবার মেলায় আগত সব নার্সারি মালিককে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিতে চেষ্টা করছি। মেলায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। দর্শনার্থী বা ক্রেতারা সানন্দে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। দর্শনার্থীরা তাদের পছন্দমতো বৃক্ষও কিনতে পারছেন।