ইউএন-হ্যাবিটাট অ্যাসেম্বলি

রোহিঙ্গা ইস্যুতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহবান

  • সেন্ট্রাল ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ইউএন-হ্যাবিটাট অ্যাসেম্বলির প্রথম অধিবেশনে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে কথা বলেন বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের প্রধান গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, ছবি: সংগৃহীত

ইউএন-হ্যাবিটাট অ্যাসেম্বলির প্রথম অধিবেশনে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে কথা বলেন বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের প্রধান গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, ছবি: সংগৃহীত

ইউএন-হ্যাবিটাট অ্যাসেম্বলিতে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরেছেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। সোমবার (২৭ মে) কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে অনুষ্ঠিত অ্যাসেম্বলির প্রথম অধিবেশনের একটি সেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্যে তিনি এ বিষয়ে কথা বলেন।

গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী বলেন, ‘১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বর্বর গণহত্যার কথা বাংলাদেশ ভুলে যায়নি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৭১ সালের সেই দিনগুলোর কথা সব সময় স্মরণ করেন। তাই যখন মিয়ানমারের সরকার ও সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উপর বর্বোরোচিত গণহত্যা শুরু করলো, তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবিক অনুভূতি থেকে সীমান্ত খুলে দিলেন এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরে রোহিঙ্গাদের প্রবেশ করতে দিলেন। যদি আমরা সীমান্ত না খুলে দিতাম, তাহলে অধিকাংশ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী নির্মম হত্যাযজ্ঞের শিকার হতো।’

বিজ্ঞাপন

Nairobi BD

রেজাউল করিম বলেন, ‘শেখ হাসিনা একজন রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে, জাতির পিতার কন্যা হিসেবে তাঁর নিজস্ব অনুভূতি থেকে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে শরণার্থী হিসেবে বাংলাদেশে প্রবেশের অনুমতি দিয়েছেন। তখন থেকে রোহিঙ্গাদের জন্য আমরা খাদ্য, আশ্রয়, স্বাস্থ্য সুবিধাসহ অন্যান্য সব সুবিধা দিয়ে আসছি। কিন্তু সীমিত সম্পদ ও সীমিত সাধ্যের কারণে এটা বাংলাদেশের জন্য কঠিন হয়ে যাচ্ছে। তা সত্ত্বেও আমরা মিয়ানমারের শরণার্থী জনসাধারণের জন্য স্বাস্থ্য, পুষ্টি, আশ্রয়, স্যানিটেশনসহ অন্যান্য সুবিধা দিয়ে যাচ্ছি।’

মন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গা সমস্যায় আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা এগিয়ে এসেছে, তাদের সহানুভূতি প্রকাশ করেছে। মাঝে মাঝে তারা কিছু সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে, কিন্তু তা পর্যাপ্ত নয়।’

Nairobi BD

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উত্থাপতি পাঁচ দফা সমাধান প্রস্তাব তুলে ধরেন তিনি। সেগুলো হলো-

১. মিয়ানমার অবিলম্বে শর্তহীনভাবে চিরদিনের জন্য রাখাইন রাজ্যে সহিংসতা ও নৃগোষ্ঠীর নিধন বন্ধ করবে।

২. জাতিসংঘ মহাসচিব অবিলম্বে মিয়ানমারে সত্য-উদঘাটন মিশন পাঠাবে।

৩. ধর্ম, গোষ্ঠী নির্বিশেষে মিয়ানমারের সকল নাগরিকের সুরক্ষা দিতে হবে। এজন্য জাতিসঘের তত্ত্বাবধানে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে ‘নিরাপদ অঞ্চল’ গড়ে তোলা যেতে পারে।

৪. বাংলাদেশে অবস্থানরত বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে তাদের বাড়িঘরে টেকসই প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে হবে।

৫. কফি আনান কমিশনের সুপারিশগুলো শর্তহীনভাবে অবিলম্বে সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।

মন্ত্রী বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে মিয়ানমার সরকার এবং বাংলাদেশের একাধিক সভায় রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এখনও একজন নাগরিককেও মিয়ানমার ফিরিয়ে নেয়নি। আমি আশা করি, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আমাদের পাশে দাঁড়াবে। একটি দেশের সভ্যতা ধ্বংস হয়ে যেতে পারে না। একটি নৃগোষ্ঠীকে নিধন করার জন্য এই আধুনিক বিশ্বে গণহত্যা চলমান থাকতে পারে না।’

Nairobi BD

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাঁচ দফা প্রস্তাব ও জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের সুপারিশমালার আলোকে অবিলম্বে রোহিঙ্গাদের নিজ বাসভূমে সম্মানজনকভাবে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য মিয়ানমার সরকারের প্রতি চাপ প্রয়োগ ও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি জোরালো আহ্বান জানান গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।

উল্লেখ্য, কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে ২৭ মে থেকে ৩১ মে পর্যন্ত পাঁচ দিনব্যাপী ইউএন-হ্যাবিটাট অ্যাসেম্বলি চলছে। সোমবার অনুষ্ঠিত হয় প্রথম অধিবেশন। অধিবেশন আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট উহুরু কেনিয়াত্তা।

অধিবেশনে বাংলাদেশসহ জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের সরকারি, বেসরকারি সংস্থা ও সিভিল সোসাইটির প্রতিনিধিগণ অংশগ্রহণ করেন।