উনুন জ্বলে না প্রতিবন্ধী লুৎফরের ঘরে!

  • মাজেদুল হক মানিক, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, মেহেরপুর, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

বাদাম বিক্রেতা প্রতিবন্ধী লুৎফর। ছবি: বার্তা২৪.কম

বাদাম বিক্রেতা প্রতিবন্ধী লুৎফর। ছবি: বার্তা২৪.কম

‘স্বামী-স্ত্রী ও তিন ছেলে-মেয়ে মিলে আমগো ৫ জনের সংসার। আমার কোমর ভাঙা। ঠিক মতো চলতি পারি না। সংসারে উপার্জন করার মতো একমাত্র ব্যক্তি আমিই। বাদাম বিক্রি করে আমার যায় আয় হয় তা দিইয়ে (দিয়ে) তিন বেলার ভাত জুটে। তয় যেদিন বিক্রি করতি পারি না সেদিন প্যাট (পেট) চলে না।’

বার্তা২৪.কমের কাছে জীবনযুদ্ধের নির্মম বাস্তবতার গল্প এভাবেই বলছিলেন পঞ্চাশোর্ধ প্রতিবন্ধী লুৎফর রহমান। ভাঙা কোমর নিয়ে কোনো মতে হেঁটে বাদাম বিক্রি করেন তিনি। বর্তমান সময়ে তীব্র শীতকে উপেক্ষা করে বাদামের ঝুড়ি মাথায় নিয়ে রাস্তায় নামতে হয় তাকে। কারণ একদিন বাদাম বিক্রি না করলে লুৎফর রহমানের ঘরে উনুন জ্বলে না।

বিজ্ঞাপন

এক সময় ভিক্ষা করলেও সন্তানদের সামাজিক সম্মানের কথা ভেবে বাদাম বিক্রির পেশা বেছে নিয়েছেন লুৎফর রহমান।

জানা গেছে, মেহেরপুর সদর উপজেলার খোকসা গ্রামের মৃত আব্দুল কাদেরের ছেলে লুৎফর রহমান। দরিদ্র বাবার ঘরে জন্ম, তাই ছোটবেলা থেকেই ভিক্ষার ঝুলি ওঠে লুৎফরের হাতে। ১০-১২ বছর বয়সে উদ্দেশ্যহীন ভাবে ভিক্ষাযাত্রায় এক সময় তিনি বরিশালে গিয়ে পৌঁছান। পকেটে টাকা না থাকায় বাসের পেছনে চড়ে যেতে গিয়ে পড়ে যান। ওই সময় ভেঙে যায় তার কোমর। তখন টাকার অভাবে আর চিকিৎসা করাতে পারেননি। তাই তার কোমর আর ভালো হয়নি। বর্তমানে পা টেনে টেনে হাঁটেন তিনি।

লুৎফর রহমান বলেন, ‘প্রতিদিন বাদাম বেচে একশ টাকা বা তার একটু বেশি আসে। এছাড়া প্রতি মাসে প্রতিবন্ধী ভাতা হিসেবে ৭০০ টাকা এবং ভিজিডি চাল পাচ্ছি। তবে এতে সংসার চলে না। শুনেছি আগামী জানুয়ারিতে নতুন করে ভিজিডি কার্ড করা হবে। তখন যদি আমার নাম বাদ যায় তাহলে আমি কীভাবে চলব? নিজের অসহায়ত্বের কথা ভেবে অনেক কষ্ট হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি পাখিভ্যান চালাতে পারি। কেউ যদি আমাকে একটি পাখিভ্যান কিনে দেয় তাহলে ভালো হতো। আমার কষ্ট দূর হতো।’

আমঝুপি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বোরহান উদ্দীন চুন্নু জানান, যারা ভিজিডি পাচ্ছেন তাদের মেয়াদ আগামী ৩০ ডিসেম্বর শেষ হবে। ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি নতুন তালিকা হবে।