‘আজ বসন্ত’র কবির জন্মশতবার্ষিকী আজ

  • ড. মাহফুজ পারভেজ, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়

কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়

কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় আধুনিক বাংলা সাহিত্যের সেই কবি, যিনি উচ্চারণ করেছিলেন ঐতিহাসিক মর্যাদা প্রাপ্ত ভাষ্য, ‘ফুল ফুটুক না ফুটুক/আজ বসন্ত’। বসন্ত আসার ঠিক আগে আগে তার জন্ম ১২ ফেব্রুয়ারি, ১৯১৯ সালে। সেই হিসাবে আজ (মঙ্গলবার) তার জন্মশত বার্ষিকী।

প্রবল আলোড়ন তুলেছিল তার কবিতাটি। যেখানে তিনি বলেছিলেন, ‘শান-বাঁধানো ফুটপাতে/পাথরে পা ডুবিয়ে এক কাঠখোট্টা গাছ/কচি কচি পাতায় পাঁজর ফাটিয়ে/হাসছে।/ ফুল ফুটুক না ফুটুক/আজ বসন্ত।’

বিজ্ঞাপন

ঔপনিবেশিক জীর্ণতা তাপিত বাংলার নাগরিক জীবনে তিনি বসন্তকে দেখেছিলেন সম্পূর্ণ ভিন্নতর মাত্রায় ও আঙিকে। পেলব বাতাসের স্নিগ্ধতায় ফুল-পাখির অনাবিল বসন্তের বিপ্রতীপে মঙ্গা, মন্বত্তর, বিশ্বযুদ্ধ আক্রান্ত বিশ্বের চল্লিশ দশকের এই কবি বসন্তকে অনুভব  করেন প্রকৃতির কঠোর বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে। নাগরিক দমবন্ধ, ক্ষয়িষ্ণু, শোষণমূলক, উপনিবেশের নির্মম কাঠামোয় বসন্তকে পেয়েছিলেন তিনি ফুল না ফোটার দীর্ণ নগর জীবনেও।

সুভাষ মুখোপাধ্যায় জীবন বাস্তবতাকে বার বার ছেনে এনেছেন তার কবিতায়। বলেছেন, ‘প্রিয় ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য/ ধ্বংসের মুখোমুখি আমরা/চোখে আর স্বপ্নের নেই নীল মদ্য/কাঠফাঁটা রোদে সেঁকে চামড়া।’

বিজ্ঞাপন

কবিতায় বলেছিলেন তিনি সংগ্রাম ও দ্রোহের কথা। যে কথা সারা জীবন বলেছেন। চলেছেন সে পথেই। একই কবিতায় তিনি সাহসের বরাভয় হয়ে বলেছেন, ‘দুর্যোগ পথ হয়, হোক দুর্বোধ্য/ চিনে নেবে যৌবন আত্মা।’

বামপন্থী হিসাবে পরিচিত সমাজমনস্ক এই কবি প্রথম ও বিখ্যাত ‘পদাতিক’ ছাড়াও রচনা করেন আরো কয়েকটি জনপ্রিয় কাব্যগ্রন্থ: অগ্নিকোণ, ফুল ফুটুক, যত দূরেই যাই, কাল মধুমাস, এই ভাই, ছেলে গেছে বনে, একটু পা চালিয়ে ভাই, জল সইতে, চইচই চইচই, বাঘ ডেকেছিল, যা রে কাগজের নৌকা, ধর্মের কল।

অনুবাদ করেছিলেন বিশ্ব বরেণ্য বিপ্লবী কবিদের কবিতা। যাদের মধ্যে রয়েছেন নাজিম হিকমত, পাবলো নেরুদা, নিকোলো ভাপৎসারভে, ওলঝাস সুলেমেনভ প্রমুখ। তার অনুবাদেই বাঙালাভাষী পাঠক প্রথম পেয়েছিল ‘আনা ফ্রাঙ্কের ডায়েরী’ ও ভীষ্ম সাহানীর উপন্যাস।

সারা জীবন কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে কাজ করেন তিনি। পার্টির সদস্য হয়ে সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক দায়িত্ব পালন করেন বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে। কিন্তু শেষ জীবনে তিনি বামপন্থা পরিহার করে জাতীয়তাবাদীদের দিকে চলে আসেন। মমতা ব্যানার্জীর সঙ্গে তার নৈকট্যের বিষয়ে জনমতে পক্ষে-বিপক্ষে বিতর্ক হলেও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা কবি হিসাবে তার অবস্থান এখনো অম্লান। কৃষ্ণনগরে জন্মগ্রহণকারী কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় ৮৪ বছর বয়সে মারা যান কলকাতায়, ৮ জুলাই ২০০৩ সালে।