তাবলিগ জামাতের অন্যতম পরিচিত মুখ, দিল্লি নিজামুদ্দিন মারকাজের মুরুব্বি মাওলানা সাদের কিছু বক্তব্য ও অবস্থানকে ঘিরে বিভক্তি দেখা দেয় দীর্ঘ দিন একসঙ্গে থাকা তাবলিগ জামাতের মাঝে। মাওলান সাদ অনুসারীদের দাবি, তারা একক আমির ও দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাজের তত্ত্বাবধায়নে তাবলিগের কাজ পরিচালনা করতে চান।
অপরদিকে আরেক পক্ষ থেকে একক কারও অধীনে তাবলিগের কাজ পরিচালনা না করে ‘শুরায়ি নিজাম’ (পরামর্শ পরিষদ) মেনে তাবলিগের কাজ পরিচালনার দাবি তোলা হয়। যার সূচনা হয় ১৯৯৫ সালে তাবলিগের তৎকালীন প্রধান মুরুব্বি মাওলানা এনামুল হাসানের ইন্তেকালের সময়। মৃত্যুর আগে তিনি তাবলিগের ১০ সদস্যকে নিয়ে শুরা ব্যবস্থা প্রণয়ন করেন। যেন তার অনুপস্থিতিতে শুরা সদস্যরা সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। এটি ২০১৫ সাল পর্যন্ত বলবৎ ছিল।
২০১৫ সালে মাওলানা সাদের একক আমির দাবি এবং কিছু বক্তব্যকে কেন্দ্র করে বিভক্তি দেখা দেয় তাবলিগের সাথীদের মাঝে।
বিভক্তির পর বাংলাদেশে তাবলিগ জামাতের দুটি পক্ষ ‘মাওলানা সাদ অনুসারি, সাদপন্থী’ এবং ‘মাওলানা জোবায়ের অনুসারি বা জোবায়েরপন্থী’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। দীর্ঘ দিন গণমাধ্যমে এমন শব্দ ব্যবহারের পর ‘জোবায়ের পন্থী’ হিসেবে পরিচিত তাবলিগের সাথীদের পক্ষ থেকে তাদের ‘জোবায়ের পন্থী’ না বলে ‘শুরায়ি নিজাম’ বলে অভিহিত করার অনুরোধ করা হয়।
তাবলিগের অন্যতম মুরুব্বি মুফতি আমানুল হক বলেন, আমরা মাওলানা জোবায়ের সাহেবকে অনুসরণ করি না, জোবায়ের সাহেবসহ বিভিন্ন দেশের তাবলিগের শীর্ষ মুরুব্বিদের একটা জামাত আছে, আমরা সেই জামাতকে মেনে চলি, যারা সবাই মিলে কোনো বিষয়ে পরামর্শ করেন। আমরা সেই পরামর্শকে অনুসরণ করি। সুতরাং আমাদেরকে ‘জোবায়ের পন্থী’ না বলে ‘শুরায়ি নিজাম পন্থী’ বলার অনুরোধ করছি। আমরা নিজেদেরকে ‘শুরায়ি নিজাম অনুসারী’ বলতে স্বাচ্ছন্দবোধ করি।
বিশ্ব শুরার তত্ত্বাবধায়নে পরিচালিত তাবলিগ জামাতের কাজকে ‘শুরায়ি নিজাম’ বলা হয়। অর্থাৎ একক কোনো আমির বা কারও বিশেষ প্রভাবমুক্ত রেখে বৈশ্বিক পরমর্শ সভার অধীনে তাবলিগের কাজ পরিচালনা করা।
তাবলিগের অন্যতম মুরব্বি, হজরতজি মাওলানা এনামুল হাসান (রহ.)-এর ইন্তেকালের পর তাবলিগ জামাতের একক কোনো আমির নির্ধারণ করা হয়নি। এরপর থেকে একক কোনো আমিরের অধীনে তাবলিগের কাজ না করে সবার পরামর্শের ভিত্তিতে তাবলিগ পরিচালনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এভাবেই দীর্ঘ দিন পর্যন্ত তাবলিগের কাজ পরিচালিত হয়ে এসেছে, পরবর্তীতে মাওলানা সাদ নিজেকে একক আমির ঘোষণা করে তাবলিগ পরিচালনা শুরু করেন এবং এ নিয়ে বিভক্তি শুরু হয়।
তাবলিগের কাজকে প্রভাবমুক্ত রাখতে দীর্ঘ দিন ধরে তাবলিগের সঙ্গে সম্পৃক্তদের ‘শুরায়ি নিজামে’র সদস্য হিসেবে নির্ধারণ করা হয়। এ ক্ষেত্রে কোনো দেশ বা ব্যক্তি বিশেষকে প্রধান্য দেওয়া হয় না, অভিজ্ঞ আলেম ও তাবলিগের পুরোনো সাথীদের ‘শুরায়ি নিজাম’ পরিচালনার ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেওয়া হয়।