অন্যায়ভাবে ১১৮ ড্রাইভারকে চাকরিচ্যুত করেছে ফারইস্ট

  • ঊর্মি মাহবুব, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

 

ঢাকা:  নূর কুতুবুল আলম। ফারইস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেডে কাজ করতেন ড্রাইভার হিসেবে। তার আইডি নাম্বার ০০০০৬। ২০০২ সালে কাজ শুরু করেন কুতুবুল আলম। কিন্তু তারপর এতো বছর পাড় হয়ে গেলেও স্থায়ী কর্মী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়নি তাকে। চলতি বছরের মে মাসের মাঝামাঝি কোনো কারণ ছাড়াই পাওনাদি না দিয়ে মৌখিকভাবে চাকরিচ্যুত করা হয় কুতুবুলকে।

বিজ্ঞাপন

শুধু কুতুবুলই নয় মোট ১১৮ জন ড্রাইভারকে সম্প্রতি অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত করেছে ফারইস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড। শ্রম আইন ২০০৬ অনুযায়ী কোনো প্রতিষ্ঠানই শ্রমিককে ছয় মাসের বেশি সময় অস্থায়ী শ্রমিক হিসেবে কাজ করাতে পারবে না। সে জায়গায় কোম্পানীটি বেশির ভাগ ড্রাইভারকে অস্থায়ী শ্রমিক হিসেবেই কাজ করিয়েছে।

অন্যদিকে কোনো শ্রমিককে চাকরিচ্যুত করতে হলে শ্রম আইন অনুযায়ী ১২০ দিনের নোটিশ দিতে হবে। আর যদি ১২০ দিনের নোটিশ না দেওয়া হয় তাহলে অবশ্যই তাকে চার মাসের বেতনের সমপরিমাণ অর্থ প্রদান করতে হবে। কিন্তু এক্ষেত্রে সেই ট্রার্মিনেশন বেনিফিট দিচ্ছে না ফারইস্ট ইসলামিক লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড। মৌখিকভাব চাকরিচ্যুত করা শ্রমিকদের দেওয়া হয়নি জুন মাসের বেতনও।

কর্মীদের পদত্যাগ পত্র জমা না দিলে জুন মাসের বেতনও দেওয়া হবে না বলে হুমকি দিয়েছে ফারইস্ট লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড এর মালিকপক্ষ।

কুতুবুল আলম বলেন, মে মাস কিংবা জুন মাস কোনো মাসের বেতনই দেওয়া হয়নি আমাকে। মুখে বলে দিয়েছে যে আমার নাকি আর চাকরি নেই। বেতন চাইলে বলে, রিজাইন লেটার দাও, নয়তো বেতন দেওয়া হবে না।

অথচ শ্রম আইন ২০০৬ অনুযায়ী শ্রমিকদের বকেয়া রেখে তাদের কিছুতেই টার্মিনেট করা যাবে না। আর টার্মিনেশন বেনিফিট চার মাসের বেতনের সঙ্গে অন্যান্য পাওনাদিও পরিশোধ করতে হবে শ্রমিকদের।

 

নিজেদের প্রাপ্য আদায়ের জন্য মালিকদের কাছে অনুরোধ করতে থাকেন চাকরিচ্যুত হওয়া ড্রাইভাররা। এক পর্যায়ে ২৪ জুলাই ফারইস্ট ইসলামি লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড এর কার্যালয় ঘেরাও করে চাকরিচ্যুত হওয়া কর্মীরা। মালিকপক্ষের সঙ্গে একাধিকবার শ্রমিক প্রতিনিধিরা বৈঠক করেও শেষ পর্যন্ত হয়নি কোনো সমাধান।

ফারইস্টের কর্মী ছাটাইয়ের ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন এর সাধারণ সম্পাদক আমিরুল হক আমিন।

তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, ফারইস্ট ইসামিক লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড বিনা নোটিশে ১১৮ জন ড্রাইভারকে চাকরিচ্যুত করেছে। তাদের লিখিতভাবে চাকরীচ্যুতের কোনো চিঠিও দেয়নি মালিকপক্ষ। বরং জুন মাসের বেতনের বিপরীতে চাইছে কর্মীদের কাছ থেকে পদত্যাগ পত্র। কারণ তারা কর্মীদের কোনো ধরনের টার্মিনেশন বেনিফিট দিচ্ছে না। বলছে এরা নাকিসব অস্থায়ী শ্রমিক। এসব শ্রমিকরা বছরের পর বছর ধরে কাজ করছে এই প্রতিষ্ঠানে। তাহলে একজন অস্থায়ী শ্রমিককে দিয়ে কী করে ছয় মাসের বেশি কাজ করালো ফারইস্ট ইসলামিক লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড! এখানেও তারা শ্রম আইন লঙ্ঘন করেছে। প্রতিটি পদেই তারা শ্রম আইন লঙ্ঘন করে শ্রমিকদের সাথে অন্যায় করছে। শ্রমিকরা এসব মেনে নিবে না। প্রয়োজনে কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবেন তারা।

 

তবে এসব বিষয়ে কথা বলতে নারাজ ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো: হেমায়েত উল্লাহ এর সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি।